জলির সাথে আমার প্রেম আছে, একতরফা প্রেম; জলি পাত্তা দেয় না। জলির বাবা ম্যাজিস্ট্রেট, আমার বাবাও একেবারে হেলাফেলার কেউ নয়। জেলার সবচেয়ে বড় চাউলের আড়ত আমাদের। চাউলের কারবার ছাড়াও দুটো সিএনজি ফিলিং স্টেশন আছে। আরো আছে ট্যানারি বা চামড়ার ব্যবসা।
টাকা পয়সা যা আছে একজন ম্যাজিস্ট্রেট কে কর্মচারী রাখা কোন ব্যাপারই না। তবু জলি আমাকে পাত্তা দেয় না। সামনে আমার বাবাকে সবাই সমীহ করে, বাবার সামনে গলা উঁচু করে কথা বলতে কেউ সাহস করে না। সে ডিসি কিংবা ম্যাজিস্ট্রেটই হোক না কেন। কিন্তু আমরা জানি আড়ালে সবাই তাকে খালুয়া বলে, পশুর খালের ব্যবসার জন্য আড়ালে বাবার নাম ‘খালুয়া রশীদ’
অথচ আমরা অভিজাত পরিবারের সন্তান, আমাদের পূর্বপুরুষ বাগদাদ থেকে এদেশে এসে আস্তানা গেড়ে ছিলেন। বাবার নাম সৈয়দ রশীদ হায়দার, আমার নাম সৈয়দ রফিক হায়দার। ঈর্ষীত মানুষ আমাদের কাঙ্খিত মর্যাদা দিতে চায় না। আমাদের প্রচুর টাকা-পয়সা। আমরা দুহাতে খরচ করি, দান করি। জেলার এমন কোন মসজিদ মাদ্রাসা স্কুল হাসপাতাল নেই যেখানে আমরা মুক্ত হস্তে দান করিনি। তবু আমরা কাঙ্খিত সম্মান পাই না, মানুষ আমাদের পছন্দ করে না।
আমার বাবা সাংঘাতিক দরাজ দিল। যেভাবে আয় করেন সেভাবেই ব্যয় করে যান। আগেকার দিনে এমন মানুষকেই দানবীর হিসাবে আখ্যায়িত করা হতো কিন্তু ঈর্ষিত মানুষ আমাদের উদারতা কিংবা দান দেখে না। কোন এক কালে চামড়া রপ্তানিতে কিছু হেরফের করেছিলেন বাবা, ছাগলের চামড়ার সাথে কিছু কুকুরের চামড়া মিশিয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকে বাবার নাম ‘কুত্তা রশীদ’ কিংবা ‘খালুয়া রশীদ।
বাবার চামড়ার ব্যাবসায় আমার তেমন আগ্রহ নেই, আমাদের ছোট চাচা ওটা দেখাশুনা করেন। ট্যানারি ফ্যাক্টরির ধারেকাছেও আমি যাইনা, তবুও আমার গায়ে নাকি চামড়ার পচা গন্ধ আছে।
জলির বাবার সাথে আমার বাবার দারুন দোস্তি। একজন ম্যাজিস্ট্রেট হয়েও কৃপাপ্রার্থী মত বাবার আশেপাশে ঘুরঘুর করেন। জলিদের বাসায় আমার অবাধ যাতায়াত, যখন ইচ্ছা তখনই যেতে পারি। জলির বাবা-মা আমাকে খুবই পছন্দ করেন, ভবিষ্যৎ জামাতা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে রেখেছেন। বাবার সাম্রাজ্যের একমাত্র উত্তরাধিকারী আমি, আমার কাছে তাদের মেয়ে সুখে থাকবে এ ব্যাপারে তারা শতভাগ নিশ্চিত।
ম্যাজিস্ট্রেটের বাস্তব জ্ঞান সাধারণ মানুষের চেয়ে উন্নত, অস্বীকার করার উপায় নেই। বিষয় বুদ্ধির হিসাবে আমার চেয়ে যোগ্য পাত্র তাদের মেয়ের পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব সেটা তারা খুব বুঝতে পারছেন। আফসোস মেয়ে এটা স্বীকার করতে চাচ্ছে না। মেয়েকে বুঝানোর চেষ্টা ক্রমাগত করে যাচ্ছেন, অনড় মেয়ে এক চুলও নড়ছে না।
তার একটাই কথা খালুয়ার ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না তার গায়ে চামড়ার পচা গন্ধ। আমাকে অপমানের জন্য যেন এটুকুই যথেষ্ট নয়। চেহারা নাকি বাঁদরের মতো, কথা বলার ঢং জানি না, মুখে দুর্গন্ধ, কথা বলার সময় থুথু বেরোয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমি নাকি চরম অশিক্ষিত।
অশিক্ষিত কথাটা মিথ্যা নয় দুই বার চেষ্টা করেও এসএসসি পাশ করতে পারিনি। তৃতীয় বার চেষ্টা করতে মন সায় দেয়নি। এসএসসি পাশ করিনি কিন্তু সিভিতে ডিগ্রী পাস লেখা আছে। বাবা আমার জন্য এসএসসি ইন্টারমিডিয়েট এবং ডিগ্রির সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে রেখেছেন। জেনুইন সার্টিফিকেট, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও ভুল প্রমান করতে পারবে না।
টাকা থাকলে সবই হয়, সার্টিফিকেট কিংবা ম্যাজিস্ট্রেটকেও পোষ মানানো যায়। কিন্তু অঢেল টাকা দেখিয়েও মামুলি একটা মেয়েকে বশ করতে পারছি না।
জলি আমার সম্বন্ধে অশিক্ষিত ছাড়া যা বলেছে চরম মিথ্যা। অশিক্ষিত হতে পারি অসংস্কৃত নই। গড়পড়তা মানুষের মুখের চেয়ে আমার মুখশ্রী সুন্দর। সাহিত্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কথা বলার জন্য আমাকে দাওয়াত করে নিয়ে যায়। মুখে দুর্গন্ধ চরম শত্রুও তা বলতে পারবে না। কথা বলার সময় থুথু বের হয় এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কেউ সতর্ক করে দেয় নি।
জলি আমাকে পছন্দ করে না মেনে নিতে পারি, মিথ্যাচার মেনে নিতে পারি না। আমি চাইলে জলিকে উঠিয়ে নেয়া কোন ব্যাপার না, তার ম্যাজিস্ট্রেট বাবাও আমাকে ছুঁতে পারবে না। কিন্তু জানি জোর করে প্রেম ভালবাসা হয় না, আমি অশিক্ষিত কিন্তু অসভ্য, অসংস্কৃত নই…
loading...
loading...
লিখাটি টাফ্ ইন্টারেস্টিং। শুভেচ্ছা এবং সম্মান রইলো আপনার লিখনী শক্তির প্রতি।
loading...