উনিশ দিন আগে হারিয়েছিল; খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল শূন্য। প্রকৃতির অদ্ভুত লীলা; উনিশ দিন পরে ফিরে এসেছে। এখানে একটু রহস্য আছে; বিরাট রহস্য, কোন কূলকিনারা পাচ্ছিনা। তাই শেক্সপিয়ারের আপ্তবাক্যতে শান্তনা খুঁজছি। there are many things in heaven and earth…
বলছিলাম চশমার কথা। আমাকে সর্ট সাইটেড বলা হয়; দূরবর্তী কিছু ভালো দেখতে পাই না। দূরের নদী, গাছের পাখি, আকাশের ঘুড়ি কিংবা ঈদের নতুন চাঁদ দেখতে আমার চশমা লাগে। চল্লিশ পরবর্তী বয়সে চশমা ছাড়া দৈনন্দিন কাজ করা সম্ভব হয় না। চশমা এবং মোবাইল ছাড়া জীবন অচল, আমি জীবনের অনেক কিছু ভুলে থাকতে পারি কিন্তু চাইলেই চশমা ভুলতে পারি না মোবাইল ভুলতে পারিনা। চোখ চশমা ভুলার অনুমতি দেয় না, কাজ মোবাইল ভুলার অনুমতি দেয় না।
এই চশমা উনিশ দিন আগে হারিয়ে গেল, তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোন হদিস পাওয়া গেল না। কাজ থেকে ফিরে ড্রয়ারে চশমা রেখে বাথরুমে ফ্রেস হতে গিয়েছি। প্রতিদিনের অভ্যাস ভুল হওয়ার কথা নয়। মোবাইল এবং চশমা ড্রয়ারে রেখে ফ্রেশ হয়ে, নামাজ পড়ে পুনরায় চোখে চশমা পড়ি এবং হাতে মোবাইল নেই।
প্রতিদিনের রুটিনে সেদিন ব্যতিক্রম ঘটলো, মোবাইল জায়গা মতই আছে কিন্তু চশমার কোন হদিস নেই। ঘরের সম্ভব-অসম্ভব সব জায়গায় খোঁজা হলো, ড্রয়ারের অন্যান্য জিনিসপত্র এক এক করে সরিয়ে বারবার তালাশ করেও চশমার কোন খোঁজ পাওয়া গেল না। আমি সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও খুঁজতে খুঁজতে গলদঘর্ম।
সবাই আমাকে দোষারোপ করলো, আমাকে আসামী সাব্যস্ত করা হলো। আমি ভুলে অন্য কোথাও ফেলে এসেছি। হয়ত রাস্তায়, গাড়িতে না হয় কাজের কারণে যে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া হয় বেখেয়ালে হয়তো সেসব কোন জায়গায় ফেলে এসেছি। তাদের বোঝানো গেল না যে চশমা ছাড়া আমি অচল কোথাও যদি ফেলে থাকি, তাহলে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে আমি ঘরে ফেরার কথা না। কেউ যদি হাত ধরে পৌঁছে না দেয় তাহলে চশমা বিহীন আমার পক্ষে গাড়ি চালিয়ে ফিরা সম্ভব না।
চশমার জন্য মন খারাপ হলো বটে কিন্তু শোক বেশিক্ষণ ধরে রাখা গেল না। নতুন চশমা পুরাতনের জায়গা দখল করে ফেলল, প্রকৃতির এই ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লাগে কোন কিছুকে শূন্য থাকতে দেয় না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শূন্যস্থান পূরণ করে ফেলে।
দু তিনদিন পরে চশমা হারানোর শোক ফিকে হয়ে গেল, জীবন পুনরায় স্বাভাবিক গতি ফিরে পেল। উনিশ দিন পরে আজ রুটিন মোতাবেক ড্রয়ারে চশমা, মোবাইল রেখে ফ্রেস হয়ে, নামাজ পড়ে যখন ড্রয়ার খুলেছি নতুন চশমার পাশে পুরনো চশমা পাওয়া গেল।
এই চশমা এতদিন কোথায় ছিল; কিভাবে ফিরে এলো কোন ব্যাখ্যা পাওয়া গেল না। এবার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আসামি ভেবে কঠোর জেরা করা হলো, তবু চশমা রহস্যের কোন সুরাহা হল না। তাদের ব্যাখ্যা অবিশ্বাসের কোন কারণ খুঁজে পাওয়া গেল না। শেষ পর্যন্ত অমীমাংসিত রহস্যের জন্য হ্যামলেটের আশ্রয় নিতে হল, শেক্সপিয়ারে শান্তনা খুঁজতে হল।
loading...
loading...
যাপিত জীবনের কথা-গল্প। এভাবেই আরও আরও ভালো থাকুন প্রিয় কবি।
loading...
এই আধুনিক যুগে চশমাও মনে হয়ে হাঁটতে শিখেছে। না হলে এই ঊনিশ দিন চশমা কোথায় ছিলো? অবশ্যই একটুখানি অবসরে কারোর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। রহস্য! রহস্য!
loading...