আমরা গোলমাল কমিটি। বয়স দশ সাড়ে দশ। মসজিদের বাগান আমাদের প্রিয়, একুশে ফেব্রুয়ারির রাতে সব ফুল সাবাড়। মসজিদের ফুল গেছে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। মসজিদের গা ঘেষে রাস্তা গেছে কোর্টের দিকে মুসল্লিরা আসরের নামাজ পড়ছেন। গতকালের হায়ার করা ভিডিওতে দেখা মোগলে আযমের মধুবালায় মনমগজ আচ্ছন্ন গলা খুলে গাইছি, “পেয়ার কিয়া তো ডরনা কিয়া”। আমাদের কোরাস গানের তালে ইমামের নামাজ ছুটে গেছে, রুকু বাকী রেখেই সেজদায়। পেছনের মুসল্লিরা বেজায় খ্যাপা।
এই বিচ্ছুদের গতি করতে হবে ভেবে মসজিদ কমিটি মিটিং এ বসেছে, দেখা গেল মসজিদের সেক্রেটারির ছেলেই পালের গোঁদা। প্রতিটি বাসায় অভিভাবক কতৃক ভাল করে ধোলাই খাওয়ার পরে গোলমাল কমিটি সিদ্ধান্ত নিল পাল্টা আঘাত হানতে হবে। জুম্মায় আমরা মিনারে উঠে নামাজ পড়ি, এক জুম্মায় সবাই যখন প্রথম সেজদায় গেছে আমরা আগুন আগুন বলে চেঁচিয়ে উঠলাম। নামাজ বাকী রেখে মুসল্লিরা যে যেদিকে পারে দৌড়, সে এক বিতিকিচ্ছি অবস্থা।
আগুন তদন্ত কমিটি আগুন খুঁজে পেল না কিন্তু গোলমাল কমিটির প্রতিটি সদস্যকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি হিসাবে এক মাসের জন্য মসজিদ থেকে নির্বাসন দেয়া হল।
মসজিদের পুকুর গোলমাল কমিটির রাজত্ব, গোলমাল কমিটি ছাড়া অন্য কোন রাজাধিরাজ নাই। এক মাসের নির্বাসন কাটানো কঠিন ছিল, তবু শাস্তি শেষের প্রথম প্রহরেই রাজ্য পুনরুদ্ধারে মরিয়া গোলমাল কমিটি পুকুরে হাজির। অজুরত মুসল্লিরা প্রমাদ গুনলেন, আমাদের হাতে রাজ্য সমর্পন করে মানে মানে কেটে পড়লেন।
শবে বরাতের রাতে আগন্তুক এক মৌলানার ওয়াজ মনে ভয় ধরিয়ে দিল, মসজিদের এবং মুসল্লিদের সাথে বেয়াদবির শাস্তি কি বর্ণনা করতে করতে একেবারে কাঁদিয়ে ছাড়লেন। ভীত আমরা মসজিদ কেন্দ্রিক রাজত্ব গুটিয়ে নিতে বাধ্য হলাম।
দীর্ঘদিন আমাদের দেখা নাই, গোলমাল কমিটি নামকরণ করা মসজিদের মুয়াজ্জিন এলেন আমাদের খোঁজে। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে মসজিদে ফিরতে বললেন, মসজিদে ফিরলাম কিন্তু গোলমালে ফিরলাম না।
আমাদের তখন নতুন উন্মাদনায় পেয়েছে। নিজেরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে একতা সাহিত্য ক্রীড়া সংগঠন নামে সংগঠন গড়েছি। পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়েছে ফুটবলের মহাযুদ্ধ, যুদ্ধে আমাদের ক্লান্তি নাই। বিজয়ে ক্লান্তি নাই, একের পর এক বিজয় আমাদের যুদ্ধবাজে পরিণত করছে। আমরা হয়ে উঠছি আমাদের কালের পেলে, ম্যারাডোনা।
loading...
loading...
ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন এই শুভেচ্ছা প্রিয় কবি প্রিয় আবু মকসুদ ভাই।
loading...