করোনা_এবং_বিলেতের_বাঙালি

বিলেতের বাঙালিরা ভয়ে আছে, প্রতি মুহূর্তের আতঙ্কে তাদের প্রাত্যহিক জীবন যাপন ব্যাহত হচ্ছে। বিলেতের বাঙালি আজ বিপর্যস্ত। দেখে মনে হচ্ছে করোনা বেছে বেছে শুধু বাঙালিকেই আক্রমণ করছে। বিলেতের বাঙালি সমাজে করোনামৃত প্রায় ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় প্রতিটি বাঙালির ঘরে এক বা একাধিক করোনা আক্রান্ত, প্রতিটি বাঙালির এক বা একাধিক আত্মীয় করোনার সাথে যুদ্ধ করছে।

বিলেতের বাঙালির জন্য এর চেয়ে ভয়াবহ সময় পূর্বে আসেনি, এত অসহায় কোনদিন বোধ করেনি। বাঙালি আড্ডাবাজ এবং অতিথি পরায়ণ। দুদিন বন্ধুর মুখ না দেখলে বাঙালি পাগল হয়ে যায়, পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন নিয়ে সাপ্তাহে একদিন আহার না করলে বাঙালির সাপ্তাহ পরিপূর্ণ হয়না।

আজ প্রায় প্রতিটি বাঙালির ঘরে কবরের নীরবতা। মানুষের আনাগোনা বন্ধ হয়ে গেছে। ভাইয়ের ঘরে ভাই, পুত্রের ঘরে পিতার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। প্রতিবেশী প্রতিবেশীর দরজায় টোকা দিতে ভুলে গেছে। রাস্তায় দেখা হওয়া শুভেচ্ছা সম্ভাষণ জানানো অতীতের অংশ হয়ে গেছে।

বিলেতের বাঙালি বর্ধিত ঘরের মতো ছিল, যৌথ পরিবারের আমেজে বসবাস করত। একে অন্যের বিপদে দৌড়ে ছুটে যেতে বাঙালির বিকল্প ছিল না। বাঙালি এতদিন হাত ধরাধরি করে চলেছে, একে অন্যের প্রতি ভরসার হাত বাড়িয়েছে। বাঙালি কখনো বাঙালিকে ভুলে যায়নি।

কিন্তু আজ প্রতিটি বাঙালির চোখেমুখে হতাশা। বন্ধুর বিপদে বন্ধু দৌড়ে যেতে পারছে না, অসুস্থ বন্ধুর মাথায় ছোঁয়াতে পারছেনা ভরসার হাত। হাসপাতালের কৃত্রিম যন্ত্রে যে বৃদ্ধ পিতা শেষ শ্বাস ফেলে অসাড় হয়ে আছে, তার কাছে পৌঁছাতে পারছে না অক্ষম পুত্র। করোনা যুদ্ধে পরাস্ত বৃদ্ধ মাতা শেষ মুহূর্তে এক চামচ জল চেয়েছিল, তার জলের আশা অপূর্ন থেকে গেছে।

একাকী মৃত্যু যে কত বেদনার বাঙালি উপলব্ধি করতে পারছে। পিতামাতার মৃত্যুর পাশে সন্তান থাকতে পারছে না। অসহায় পিতার ঘাড়ে পুনরায় চাপছে সন্তানের লাশ কিন্তু সঠিক সৎকার করতে পারছে না পিতা। শেষ মুহূর্তে প্রিয়জন কে ছুঁয়ে দেখার আকুতি জীবিত কে মৃত্যুর স্বাদ দিচ্ছে।

করোনা মহামারী বাঙালিকে ব্যাপকভাবে জানান দিচ্ছে। মৃত্যুর এমন সুনামি এর আগে অবলোকন করে নি। করোনা যেন বাঙালিকে নিশ্চিহ্ন করতে বদ্ধপরিকর।

বাঙালি অন্ধকার রাত পাড়ি দিচ্ছে, ভোর হয়তো হবে। ভোরের আকাশে সূর্য হয়তো দেখা দিবে কিন্তু সে ভোর কতটুকু প্রত্যাশার হবে জানি না। তবু ভোরের আশায় থাকবো, পুনরায় শুরু করার স্পৃহা নিয়ে উঠে দাঁড়াবো।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২২-০১-২০২১ | ১৯:০৪ |

    স্মরণকালে পৃথিবীর জন্য করোনার চেয়ে ভয়াবহ সময় পূর্বে আসেনি। তারপরও মন থেকে আজও এক নতুন ভোরের আশায় থাকি। নিশ্চয়ই আমরা পুনরায় শুরু করবো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. ফয়জুল মহী : ২২-০১-২০২১ | ২১:৫৫ |

    করোনা মহামারী বাঙালিকে ব্যাপকভাবে জানান দিচ্ছে। মৃত্যুর এমন সুনামি এর আগে অবলোকন করেনি। করোনা যেন বাঙালিকে নিশ্চিহ্ন করতে বদ্ধপরিকর।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Razz.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
  3. নিতাই বাবু : ২৩-০১-২০২১ | ১৮:৩৩ |

    করোনাভাইরাসের কারণে সব দেশের মানুষই সবদিক থেকে বিপর্যস্ত। তবে যা দেখা যায়, বিদেশে সব থেকে বাঙালি অভিবাসীদের হয়ে চরম বিপদ। এই বিপদ থেকে মহান সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ উদ্ধার করতে পারবে না বলে মনে হয়। 

    তাই কামনা করি করোনাভাইরাস থেকে যেন অভিবাসীদের মহান সৃষ্টিকর্তা রক্ষা করে।

    GD Star Rating
    loading...