ক্ষুদ্রের সমুদ্র দর্শন

ক্ষুদ্রের সমুদ্র দর্শন

সমুদ্রের কাছে গিয়ে জল না ছুঁয়ে ফিরে আসা কি পাপ! আমার তাই মনে হয়, সমুদ্রের কাছে গেলে ভীত হয়ে পড়ি, নিজের ক্ষুদ্রতার এমন উন্মুক্ত প্রকাশে শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়! বিশাল জলাধারের কাছে গিয়ে যদি অবজ্ঞা দেখাই, তার গা না ছুঁয়ে ফিরি, সারাজীবন অভিশপ্ত থেকে যাবো।

সুনীলের কবিতায় পড়েছিলাম সারাজীবন বয়ে বেড়ানো অভিশাপের কথা, সমুদ্রের গায়ে থুথু ফেলার দুর্দান্ত সাহস আমার কোনদিন হবে না তবু তাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে আমি বিন্দুমাত্র ফাঁক রাখতে রাজি না যদি অভিশাপ দিয়ে দেয়!

সমুদ্রের বিশালত্ব নিজের কাছে ফিরে যেতে সাহায্য করে। নিজেকে যাচাই করা যায়। প্রতিদিনের যে অহমিকা আমরা বয়ে বেড়াই, বুকের মাঝে দর্পের যে আগুন সারাক্ষণ পুড়িয়ে মারে তা দপ করে নিভে যায় সমুদ্রের ছোঁয়ায়। নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়, মনে হয় কত ক্ষুদ্র জীবন নিয়ে বাহাদুরি।

এক ফুঁকে নিভে যাওয়া জীবনের বাহাদুরি নিয়ে কিছু সময়ের জন্য সমুদ্র দর্শনে গিয়েছিলাম। আমার শহর থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে ক্লির্থপ্স শহরে, সমুদ্র দেবী আজ সুপ্রসন্ন ছিলেন না। তার ভাটা চলছিল নিজের জলকে আড়াল করে তিনি রোদ্র পোহাচ্ছিলেন। ৪/৫ ঘন্টা অপেক্ষা করলে তিনি জলে পরিপূর্ণ হবেন। এতো সময় সময় আমাকে দিচ্ছে না। বড় লোকদের ব্যাপারস্যাপারই আলাদা তারা সখ্যতা করে শুধু বড় লোকদের সাথে। সমুদ্র সূর্য, আকাশ, পাহাড়কে সখা ভাবে সব খাতিরদারি তাদের ঘিরেই। ক্ষুদ্রদের দেখেও দেখে না।

সমুদ্রে গিয়ে জলের দেখা না পাওয়া অসম্ভব না, জোয়ারভাটার খেলায় বিশাল সমুদ্রও অসহায়। বিশাল সমুদ্রের অসহায়ত্ব থেকে আমরা কি কিছু শিখতে পারি! অবশ্যই পারি! নিজেকে বিশাল ভেবে দর্প করো না, এক মুহূর্তে দর্প খর্ব হয়ে যাবে!

সমুদ্রে গিয়ে জল না ছুঁয়ে ফিরা আসা পাপ কিন্তু সমুদ্রই যদি জল লুকিয়ে ফেলে কি করা উচিৎ! আমি কোন অজুহাতেই পাপের অংশীদার হতে চাই না সিদ্ধান্ত নিয়ে সমুদ্রের বুকে প্রায় অর্ধ মাইল হেঁটে জল ছুঁয়ে তবেই ফিরেছি।

আশা করছি দেবী সমুদ্র তার ক্রোধ থেকে রক্ষা করবে, তুচ্ছাতিতুচ্ছের উপর ক্ষমতা দেখানো নিশ্চয় মহত্বের লক্ষণ না।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৭ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৭ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২১-০৮-২০১৯ | ৯:২২ |

    স্বভাবসুলভ সুন্দর বর্ণণায় ভ্রমনের দিকগুলো তুলে ধরেছেন। অভিনন্দন মকসুদ ভাই। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  2. সুমন আহমেদ : ২১-০৮-২০১৯ | ১১:১৪ |

    ক্ষুদ্রের সমুদ্র দর্শন। শিরোনাম থেকে বিষয় বর্ণনা অসাধারণ লাগলো। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  3. নিতাই বাবু : ২১-০৮-২০১৯ | ১২:৫৬ |

    সমুদ্রের বিশালত্ব নিজের কাছে ফিরে যেতে সাহায্য করে। নিজেকে যাচাই করা যায়। প্রতিদিনের যে অহমিকা আমরা বয়ে বেড়াই, বুকের মাঝে দর্পের যে আগুন সারাক্ষণ পুড়িয়ে মারে তা দপ করে নিভে যায় সমুদ্রের ছোঁয়ায়। নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়, মনে হয় কত ক্ষুদ্র জীবন নিয়ে বাহাদুরি।

    বাস্তব উপলব্ধি। একসময় কক্সবাজার থেকে একটু দূরে মহেশখালী  চাকরি করতাম। তখন প্রায় দিনই সাগরের পাড়ে যেতাম, ঘুরতাম। এমনকি স্নানও করতাম। এখন হয়তো এই বয়সে সেই ভাগ্য আর হবে না। কিন্তু আশা পূর্ন হয়েছে। 

    GD Star Rating
    loading...
  4. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ২১-০৮-২০১৯ | ১৯:৩৯ |

    দেবী সমুদ্র তার ক্রোধ থেকে রক্ষা করবে, তুচ্ছাতিতুচ্ছের উপর ক্ষমতা দেখানো নিশ্চয় মহত্বের লক্ষণ না। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    GD Star Rating
    loading...
  5. সাজিয়া আফরিন : ২১-০৮-২০১৯ | ২০:১৭ |

    সুন্দর বর্ণনা।

    GD Star Rating
    loading...
  6. আবু সাঈদ আহমেদ : ২১-০৮-২০১৯ | ২০:২৬ |

    https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
  7. শাকিলা তুবা : ২১-০৮-২০১৯ | ২১:৪২ |

    প্রকাশে মুগ্ধ হলাম কবি। Smile

    GD Star Rating
    loading...