আহত ঐতিহ্যের নদী-৮

এই পৃথিবী একদিন সতেজ ছিল
অপেক্ষমাণ শিশুর মুখে অন্ন যোগাবে বলে
নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম করে নিজেকে যোগ্য করে তুলেছিল
ভবিতব্যের সময়ে পর্যাপ্ত আলোর প্রয়োজন হবে ভেবে
নিজের পাঁজর ছিদ্র করে সঞ্চয় করেছিল সূর্যরশ্মি

জলের অভাবে নদীগুলো মিইয়ে যাবে, ঘাসের মাঠে
হরিণ শাবকেরা পর্যাপ্ত সবুজ পাবে না এই ভাবনা
তাকে জল সঞ্চয়েও প্রেরণা যুগিয়েছে… তার সাধ্যের মধ্যে
ছিল বলেই বনের সবুজকে আগলে রেখেছে, শুদ্ধ বাতাসের
প্রবাহকে মসৃণ করার নিমিত্তে কারখানার কয়লায়
পুড়িয়েছে নিজেকে, যোগ্য শিশু একদিন মাকে শুশ্রূষায়
সুস্থ করে তুলবে এই ভেবে নিজেকে উজাড় করেছে…

পূর্ণতা প্রাপ্ত সেই শিশু আজ দাপটে বেড়াচ্ছে, তার প্রয়োজনে
খাবলে নিচ্ছে মায়ের পাঁজর থেকে সূর্যরশ্মি
সঞ্চিত জলে খাবল দিয়ে মেটাচ্ছে নিজ লালসা, প্রবাহিত
জলে মায়ের বুক প্লাবিত হলে কথিত শিশু
সবুজের মাঠে খেলছে আগুন খেলা, কারখানার কয়লায়
কুঞ্চিত মায়ের শরীর পুড়তে থাকলেও শিশুর বিকার হচ্ছে না
বিশুদ্ধ বাতাসের সেমিনারে উড়াচ্ছে মায়ের ফসিল

পৃথিবী মা অসহায়ের মতো শুধু চেয়ে দেখছে, বয়স্ক
সন্তানের অত্যাচার মেনে নেয়া ছাড়া তার কিছুই করার নেই

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৪ জন মন্তব্যকারী

  1. মামুনুর রশিদ : ২৫-০১-২০১৭ | ৯:১৩ |

    “পৃথিবী মা অসহায়ের মতো শুধু চেয়ে দেখছে, বয়স্ক
    সন্তানের অত্যাচার মেনে নেয়া ছাড়া তার কিছুই করার নেই”
    শুভেচ্ছা জানবেন কবি।

    GD Star Rating
    loading...
  2. ফকির আবদুল মালেক : ২৫-০১-২০১৭ | ১২:৩৫ |

    তোমার ইতিহাসের আদিপর্বে দানবের প্রতাপ ছিল দুর্জয়,
    সে পরুষ, সে বর্বর, সে মূঢ়।
    তার অঙ্গুলি ছিল স্থূল, কলাকৌশলবর্জিত;
    গদা-হাতে মুষল-হাতে লন্ডভন্ড করেছে সে সমুদ্র পর্বত;
    অগ্নিতে বাষ্পেতে দুঃস্বপ্ন ঘুলিয়ে তুলেছে আকাশে।
    জড়রাজত্বে সে ছিল একাধিপতি,
    প্রাণের ‘পরে ছিল তার অন্ধ ঈর্ষা।
    …….
    রবীন্দ্রনাথের “পৃথিবী” থেকে নেয়া এই প‌্যারটা মনে পড়ে গেল আপনার এই আহত ঐতিহ্যের নদী-৮ পড়তে পড়তে। রবীন্দ্রনাথ তার পর বলেন…
    দেবতা এলেন পরযুগে–
    মন্ত্র পড়লেন দানবদমনের,
    জড়ের ঔদ্ধত্য হল অভিভূত;
    জীবধাত্রী বসলেন শ্যামল আস্তরণ পেতে।
    উষা দাঁড়ালেন পূর্বাচলের শিখরচূড়ায়,
    পশ্চিমসাগরতীরে সন্ধ্যা নামলেন মাথায় নিয়ে শান্তিঘট।

    একই কবিতায় গুরু আরো লিখেন…

    অচল অবরোধে আবদ্ধ পৃথিবী, মেঘলোকে উধাও পৃথিবী,
    গিরিশৃঙ্গমালার মহৎ মৌনে ধ্যানমগ্না পৃথিবী,
    নীলাম্বুরাশির অতন্দ্রতরঙ্গে কলমন্দ্রমুখরা পৃথিবী,
    অন্নপূর্ণা তুমি সুন্দরী, অন্নরিক্তা তুমি ভীষণা।

    বৈশাখে দেখেছি বিদ্যুৎচঞ্চুবিদ্ধ দিগন্তকে ছিনিয়ে নিতে এল
    কালো শ্যেনপাখির মতো তোমার ঝড়,
    সমস্ত আকাশটা ডেকে উঠল যেন কেশর-ফোলা সিংহ,
    তার লেজের ঝাপটে ডালপালা আলুথালু ক’রে
    হতাশ বনস্পতি ধুলায় পড়ল উবুড় হয়ে।

    কবিতা শেষের দিকে আবার এলো…

    আবার ফাল্গুনে দেখেছি তোমার আতপ্ত দক্ষিনে হাওয়া
    ছড়িয়ে দিয়েছে বিরহমিলনের স্বগতপ্রলাপ
    আম্রমুকুলের গন্ধে।
    চাঁদের পেয়ালা ছাপিয়ে দিয়ে উপচিয়ে পড়েছে
    স্বর্গীয় মদের ফেনা।

    গুরুর সেই বিখ্যাত কবিতার কথা মনে করিয়ে দিল আপনার কবিতা।
    অভিনন্দন আর শুভ কামনা রইল।

    GD Star Rating
    loading...
  3. মুরুব্বী : ২৫-০১-২০১৭ | ১৩:১৮ |

    অসাধারণ আপনার শব্দজ্ঞান এবং এর প্রয়োগ প্রিয় মকসুদ ভাই।
    অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্য। ভালো থাকুন।

    GD Star Rating
    loading...
  4. মামুন : ২৫-০১-২০১৭ | ১৪:১৬ |

    ভালো লিখেছেন।

    GD Star Rating
    loading...