বিভেদ নয়, ইসলাম সম্প্রীতি ধারণ করে। এই সম্প্রীতির চমৎকার প্রমাণ প্রতিবেশীর হক আদায়ের নির্দেশনা। ইসলামে প্রতিবেশী বলতে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলকে বুঝায়। উল্লেখ্য, মুসলিম ও আত্মীয় প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর হক আদায়ের পাশাপাশি মুসলমানের প্রতি মুসলমানের আর আত্মীয়ের প্রতি আত্মীয়ের হকও আদায় করতে হবে। কিন্তু প্রতিবেশীর হকে ভিন্নধর্মাবলম্বী এবং অবিশ্বাসীদের ক্ষেত্রেও পালন করতে হবে।
‘ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেটপুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে।’ মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ২৬৯৯; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীস ১১২)। প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোক, সে কষ্টে থাকলে তুলনামূলক স্বচ্ছল প্রতিবেশীদের কষ্ট লাঘবের দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রতিবেশীর পরিধি কতটুকু এ বিষয়েও ধারণা দেওয়া হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের ডানে-বামে, সামনে-পেছনে চল্লিশটি বাড়ি পর্যন্ত প্রতিবেশীর আওতার অন্তর্ভুক্ত। (বোখারি: /২৯০১)
প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা অভাবে আছে তাদের সম্পর্কে আমাদের জানা থাকে। তবে এমনও অনেকে আছে যারা তাদের দুরবস্থা বাইরে প্রকাশ করেনা, সঙ্কোচে কারো কাছে সহায়তাও চায় না। পবিত্র কুরআনে এদেরকে ‘মাহরূম’ অর্থাৎ বঞ্চিত হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, “এবং তাদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও মাহরূমের (বঞ্চিতের) হক।” (সূরা যারিয়াত : ১৯) মাহরুম তথা বঞ্চিতদের কাছে এমন পন্থায় সহায়তা (যাকাত, দান) পৌঁছতে হবে যেনো তারা অপমানিত বোধ না করেন।
মসজিদে দান করুন, মাদ্রাসায় দান করুন কিন্তু এর আগে নিশ্চিত হোন প্রতিবেশীর হক আদায় করা হয়েছে কি না। সুরম্য মসজিদে দান করে এসির হাওয়ায় নামাজ আদায় করছেন, মাদ্রাসায় দান করেছেন আর ওই মাদ্রাসায় আপনার জন্য দোয়া হচ্ছে কিন্তু প্রতিবেশীর হক আদায় করা হয়নি- এটি সাধারণ বিবেচনাতেই নীতিগত অপরাধ, আর মুসলিম হিসেবে ধর্মের বিধিবিধানের অবমাননা। আমরা যেনো মনে রাখি কোরআন মজীদের একাধিক সুরায় সালাত আদায় না করার সাথে প্রতিবেশীর হক আদায় না করাকে যুক্ত করে শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে, আরও মনে রাখি যে, হযরত মুহম্মদ (সা বলেছেন, আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!!! সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, সে কে হে আল্লাহর রাসূল? রাসূ্লুল্লাহ (সা.) বললেন, যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০১৬)।
একই সাথে মনে রাখি প্রতিবেশীর হক আদায়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা অবিশ্বাসী প্রতিবেশীরাও সমানভাবে গণ্য হবেন। বাড়ির পাশের প্রথম বাড়িটি যদি হয় একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বা নাস্তিকের আর সে যদি থাকে প্রচণ্ড ক্ষুধায় বা অভাবে তবে প্রতিবেশীর হক আদায়ের ক্ষেত্রে সেই অগ্রাধিকার পাবে।
ইসলামে সামাজিক সম্প্রীতিকে গভীর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, অথচ বর্তমানে সম্প্রীতির পরিবর্তে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এক শ্রেণির আলেম (আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুন) শুধু যে বিদ্বেষই ছড়ান তা নয়, তারা ওয়াজে বা আলোচনায় বসে নির্ধারণ করে দেন কে বেহশতে যাবে, কে দোজখে, কে মুমিন আর কে কাফের। ইসলামের মূল আদর্শের সাথে এদের যোজন যোজন দূরত্ব।
সামাজিক সম্প্রীতি বজায় থাক, রমজান থেকেই শুরু হোক সম্প্রীতি পালনের চর্চা।
loading...
loading...
ইসলামের মূল আদর্শের সাথে কারু যোজন যোজন দূরত্ব বিভেদ নয় বরং ইসলাম হচ্ছে সম্প্রীতির ধারক। আমাদের সামাজিক সম্প্রীতি বজায় থাক, রমজান থেকেই শুরু হোক সম্প্রীতি পালনের চর্চা। আমীন।
loading...
পৃথিবীর কোন ধর্মই অন্যায় করতে বলে না। তাই প্রতিটি মানুষকেই ধর্মের কাছে নত হওয়া উচিত।
loading...
চমৎকার উপস্থাপনা।
সত্যি ইসলাম যখন প্রতিবেশীর কথা বলে তখন ধর্মনিরপেক্ষভাবে বলে। এটা নিশ্চয়ই ইসলামের সৌন্দর্য।
এই ব্যাপারটি যথাযথ মর্যাদায় উপস্থাপিত হয়েছে এই লেখাটিতে।
আল্লাহ আমাদের প্রকৃত বুঝ দিন। আমিন।
loading...