নান্টু মিয়া যে কারণে ফের লুঙ্গি পরতে শুরু করলো, তা সরল হলেও বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ঝলমলে এই রাজধানীতে নান্টু মিয়ার পদার্পণ দুই দশক আগে। তখন তার ঘরবাড়ি নেই, আত্মীয় পরিজন নেই। বউ পালিয়েছে মামাতো ভায়ের সাথে। সংসারের প্রতি আগ্রহ নেই, মানুষের প্রতি আস্থা হারিয়েছে এরও আগে। সে জানেনা এখানে মানুষ মানেই শহর।
একটা মাত্র ছেড়া গেঞ্জি আর তাপ্পি মারা লুঙ্গি সম্বল করে শহরে আসা, মরার আগে শেষবারের মত বাঁচাতে শুরু করা। বাস্তবতা ও পরিস্থিতির মত দ্রুত শিক্ষণ পদ্ধতি আর নেই। দশ দিনের সময়কালেই নান্টু শিখেছিলো বিনা পূঁজিতে ভিক্ষার প্রাথমিক জ্ঞান। পরবর্তী বিশ দিনের ভেতর শিখে নিয়েছিলো ভিক্ষাবিদ্যার ছলাকলা আর আয় বৃদ্ধির কৌশল।
শহরবাসীর হৃদয় যতটা লাজহীন চোখ ততটা নয়। যে ভিক্ষা দেয়না, যে ভিক্ষার বদলে শুধু উপদেশ দেয়, সেও ন্যাংটো ফকিরের একটি লুঙ্গি কেনার আহাজারিতে সাড়া দেয়। একটি লুঙ্গি দানের সামর্থ্য না থাকার গ্লানিতে জর্জরিত মানুষ অনায়াসে দশ/বিশ টাকা ভিক্ষা দেয়। এ শহরের মানুষ একে অপরকে কাপড় খুলে নগ্ন করতে ভালোবাসে বটে, তবে আক্ষরিক অর্থেই কাউকে নগ্ন দেখলে সহ্য করতে পারে না। লজ্জায় কাবু হয়, অপরাধ বোধে ভোগে। মাত্র একমাসের অভিজ্ঞতায় এসব জেনেছে নান্টু।
নান্টুর এ জগতে কেউ নেই, তার উদোম হবার প্রতিবন্ধকতা শুধু আত্মলজ্জা আর সংস্কারের দাসত্ববোধ। কিন্তু পেট যখন ক্ষুধামগ্ন, শূন্যহাত যখন ভিক্ষা পাবার আশায় মেলে দেওয়া, যখন সমান খাটুনিতে তিনগুণ আয়ের হাতছানি তখন ন্যাংটো হওয়ার জন্য সাহসের প্রয়োজন হয়না, প্রয়োজন হয় পেশা ও পেটের প্রতি দায়বদ্ধতা। পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে নান্টুর ঘাটতি নেই, ছিলো না।
প্রতিদিন সকালে সচিবরা যেমন করে ড্রেসকোড মেনে স্যুট পরে অফিসে যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যাজ লাগিয়ে দায়িত্ব পালন করে, নার্সরা শাদা থান পরে হাসপাতালে সেবা বিক্রি করে তেমনই নান্টু কাপড় খুলে গায়ে কিছু মাটি মেখে পেশাগত দায়িত্বপালনে বেরিয়ে পরে। তার নগদ আয় রোজগার ভালোই হয়। রোজই কেউ না কেউ লুঙ্গি কিনে দেয়। সৌভাগ্যের এক একদিন তো পাঁচ’ছটা লুঙ্গিও জুটে যায়। দোকানে ওইসব লুঙ্গি অর্ধেক দামে বিক্রি করলে নগদ ভিক্ষার সাথে বোনাস লাভ মিলেমিশে একাকার।
প্রথম ক’টা দিন নান্টুর খুব লজ্জা করছিলো। মনে হতো কোটি কোটি চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখগুলো হাসছে, টিটকারি মারছে। অবশ্য দিনে দিনে লজ্জা কেটে গেছে। ক্যাশ টাকা, মফস্বলে ছয় শতাংশ জমির ওপর টিনশেড বাড়ি, তিন তিনটে স্ত্রী, চায়ের টং দোকান – এসবই ন্যাংটো হবার অবদান। ন্যাংটো হয়ে হাত পাততে শেখার দিন থেকেই উন্নয়নের শুরু।
দুই দশক ধরে ন্যাংটো থাকায় অভ্যস্ত নান্টুর দিনের আলোয় লুঙ্গি পরতে খুব অস্বস্তি হচ্ছে; যেনো দুনিয়ার সকল লোক লুঙ্গির দিকে তাকিয়ে আছে। সে গুটিসুটি মেরে নুরুর চায়ের দোকানে বসে। চা বানাতে বানাতে নুরু বারবার নান্টুর চেহারার দিকে তাকায়, লুঙ্গির দিকেও তাকায়। নান্টু সঙ্কোচে মূহ্যমান, নুরুর ঠোঁটে কৌতূহলের হাসি।
“কাঙ্গালের পো, তুই লুঙ্গি পিনছোছ ক্যান- নুরুর এমন প্রশ্নে নান্টু বিব্রত হয়। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে, “আমার চক্ষুটা মনে লয় বালা নাই, চাইরদিকে খালি ল্যাংটা মানুষ দেহি। শহরের সব মানুষরে ল্যাংটা দেহি। আমার শরম করে।”
নান্টুর স্বীকারোক্তি সরল হলেও বিশ্বাসযোগ্য নয়, ও যে ফের লুঙ্গি পরতে শুরু করেছে!
loading...
loading...
এ শহরের মানুষ একে অপরকে কাপড় খুলে নগ্ন করতে ভালোবাসে বটে, তবে আক্ষরিক অর্থেই কাউকে নগ্ন দেখলে সহ্য করতে পারে না। লজ্জায় কাবু হয়, অপরাধ বোধে ভোগে।
loading...
loading...
অসাধারণ অণুগল্প হরবোলা আবু সাঈদ আহমেদ ভাই।
loading...
loading...
অসাধারণ অণুগল্প।
loading...
Dhonnobad.
loading...
অণুগল্পে মুগ্ধ হলাম ভাই।
loading...
Dhonnobad.
loading...
অনুপম।
loading...
আলগোছে রেখে যাই সংঘাত, রাষ্ট্রের সকল অসভ্যতা ও সন্ত্রাস।
loading...
দাদা, আমার মনের কথা আপনি কীভাবে উপলব্ধি করতে পারলেন? আসলেই আমি ভিক্ষা বিরোধী এক ব্যক্তি। কিন্তু কোন ভিক্ষুকের শরীরে ছেঁড়া ফারা বস্ত্র দেখলে আর মন মানে না। এমনিতেই নিজের পকেটে হাত চলে যায়। দিয়ে দেই যা পারি।
loading...
আলগোছে রেখে যাই সংঘাত, রাষ্ট্রের সকল অসভ্যতা ও সন্ত্রাস।
loading...