ভুতোলোজি
‘ভুত একটি সাইন্টেফিক প্রাণী, ভুতকে অস্বীকার করা মানে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করা..’
এটুকু শুনেই রবীন্দ্রনাথ ভাষা হারিয়ে ফেললেন। চোখের পলক পড়ছেনা। বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে আছে। ফেলবার্ট ভুতস্টাইন যোগ করলেন, ‘পৃথিবীতে ভুত এবং মানুষের বিকাশ একই সময়ে শুরু, মানুষ ও ভুত সমসাময়িক প্রাণী।’
আড়াইটা ঢেকুর (তিনটেই হতো, তবে শেষ ঢেকুরটা পুরো গিলতে পারেননি, অর্ধেকটা গলায় আটকে আছে)তুলে রবীন্দ্রনাথ জানতে চাইলেন-
: ভুত আর মানুষের বিকাশ সমসাময়িক?
বাচ্চাদের অর্থহীন প্রশ্ন শুনে বড়রা যেমন করে হাসে ভুতস্টাইনও তেমন খ্যাঁকখ্যাঁকিয়ে হেসে উঠলেন, হাসি থামিয়ে বললেন-
: মিস্টার টেগোর, অবশ্যই সমসাময়িক। অন্যান্য হোমিনিড গোত্র থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আলাদা প্রজাতি হিসেবে হোমো স্যাপিয়েন্স অর্থাৎ মানুষের উৎপত্তি। তবে, বিজ্ঞান বলে ২৩ থেকে ২৪লক্ষ বছর আগে শুরু হওয়া বিবর্তনে হোমো ক্যাটগরিতে অনেক প্রজাতিরই উদ্ভব ঘটেছিলো। এর মধ্যে ভুত, মানুষ আর হোমোসেক্স ছাড়া বাকী প্রজাতিগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
রবীন্দ্রনাথ জোড় দিয়ে বললেন-
: স্যার ভুতস্টাইন, আপনার এসব তথ্য কিন্তু প্রমাণ করেনা যে ভুত আছে। সাইন্টিফিক প্রাণী হওয়া তো পরের কথা।
ভুতস্টাইন নড়েচড়ে বসলেন, যেনো ক্লাশ নিচ্ছেন এমন করে বলতে শুরু করলেন-
: তত্বকথায় যাবো না। সহজ করে বলি। ডারউইনের বিবর্তনবাদ বলে যে, লক্ষ লক্ষ বছর আগে বানরদের একটি প্রজাতি গাছ থেকে মাটিতে নেমে এসেছিলো। তারা দু’পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে শিখেছিলো। এরাই মানুষেরর পূর্বপুরুষ। ক্লিয়ার?
: জ্বি, পরিস্কার বুঝতে পারছি।
: ভেইরি গুড, বানরদের একটা প্রজাতি মাটিতে নেমে এসেছিলো, ওই সময়ে অন্য আরেকটা প্রজাতি গাছের মগডালে উঠে বাস করতে শুরু করেছিলো। লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনে মানুষ হাঁটতে শেখে, আর মগডালে ওঠা প্রজাতিটি অদৃশ্য হয়ে ভাসতে শেখে। হোমো গ্রুপের স্যাপিয়েন্স যেমন মানুষ, তেমন মামদোপিয়েন্স প্রজাতিটিই হচ্ছে ভুত।
রবীন্দ্রনাথ বহুক্ষণপর স্বস্তি পেলেন, হাসতে হাসতে বললেন-
: হোমো মামদোপিয়েন্স-এর কথা তো কোনো বিজ্ঞানী বলেননি, এমন কিছু নেই।
আবার খ্যাঁকখ্যাঁকিয়ে হেসে উঠলেন ভুতস্টাইন-
: অহংকার পতনের মূল। লক্ষ লক্ষ বছর আগে জেনেটিক রোগ অহংকারোসিসে আক্রান্ত হয়েই মানুষের পূর্বপুরুষের অধঃপতন ঘটেছিলো। মানে গাছ হতে মাটিতে ধপ্পাস।
: মানে?
: মানেটা ভেরি সিম্পল, আপনার কি ধারণা বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, নায়ক, গায়ক, কবি সাহিত্যিক শুধু মানুষরাই হতে পারে ! অবশ্য, আপনার এই মনোভাবকে দোষ দেওয়া অন্যায়, এটা তো অহংকারোসিস রোগের সংকীর্ণচিন্তানিয়াম উপসর্গ।
রবীন্দ্রনাথ উত্তেজিত হননা, কিন্তু মানুষের প্রতি এ অপমানে তিনি রাগে থরথর করে কাঁপছেন, আধগ্লাস নিমপাতার রস এক চুমুকে শেষ করে বললেন-
: ইউ হ্যাভ নো অধিকার টু অপমান হিউম্যান। যা বলতে চান স্পিক সরাসরি।
ভুতস্টাইন রবীন্দ্রনাথের রাগকে পাত্তা না দিয়ে বললেন-
: পৃথিবীর জ্ঞানে বিজ্ঞানে যে জাতি সবচে বেশী এগিয়ে আছে তা হচ্ছে ভুতজাতি। ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্বের ১৬হাজার বছর আগেই প্রেতউইন এ তত্ব দিয়ে গেছেন। প্রেতউইন একজন ভুত। নিউটনের মধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কারের ১৯হাজার বছর আগে দানোটন মধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং ভুতদের ক্ষেত্রে মধ্যাবিকর্ষণ শক্তির ৩৪টি সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। এমন উদাহরণ আছে হাজার হাজার। শুধু বিজ্ঞান নয়, সাহিত্য শিল্পকলাতেও ভুতজাতি মানুষের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে।
সাহিত্য শিল্পকলার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিতে রাজী নন রবীন্দ্রনাথ, তিনি বললেন-
: যে না ভুত জাতি! তার আবার সাহিত্য আর শিল্পকলা!! লেজ নাই বাঁদরের লেজরাজ নাম!
ভুতস্টাইন খুব জোড় দিয়ে বললেন-
: তাচ্ছিল্য করবেন না। আমাদের নমস্য সাহিত্যিক শাঁকচুন্নীন্দ্রনাথ পাকুড়ের ‘ভুতাঞ্জলি” নকল করে ‘গীতাঞ্জলী” লিখে কোন মানুষ লেখক না কি নোবেল প্রাইজও পেয়েছেন, আপনি জানেন!
এ কথা সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারালেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তিনি মাঝে মাঝে চোখ খুলে বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন, এরপর ‘ভুতাঞ্জলী’ উচ্চারণ করেই ফের অজ্ঞান হয়ে পরছেন। এদিকে ভুতস্টাইনও রাগে হাওয়ায় ভাসছেন, সব সহ্য হয়, কিন্তু ভুত জাতির অপমান আর মানুষের অহংকার মেনে নেওয়া যায় না। ভুত মানেই যে বিজ্ঞান- আজ এটা কবুল না করানো পর্যন্ত এখান থেকে তিনি নড়বেন না, এক্কেবারে নড়বেন না।
_________________
#ভুতবিজ্ঞান/০৫০৪২০১৯
ভুতবিজ্ঞান আন্তর্জাতিক গবেষণার বিষয় হতে পারে। অসাধারণ এপিক স্যার।
হেহেহে ঠিকই বলছেন মুরুব্বী ভাই।
অসাধারণ রম্য লিখকের তালিকায় আপনাকে রাখতে চাই হরবোলা ভাই।
ধন্যবাদ সুমন ভাই।
ভুতোলোজি !!! বাহ্ এটাও একটা লোজি বটে।
ঠিক।
পৃথিবীতে ভুত এবং মানুষের বিকাশ একই সময়ে শুরু, মানুষ ও ভুত সমসাময়িক প্রাণী।
সুন্দর।
ধন্যবাদ আপা।