অণুগল্প: মদভাই

মদভাই

‘মদিরা বার এন্ড রেষ্টুরেন্ট’- ঐতিহ্যবাহী অভিজাত বার। বিকাল তিনিটায় খুলে। পাঁচটায় জমে ওঠে। সন্ধ্যায় বসার জায়গা পাওয়া কঠিন। এই বারে নিয়মিত কাষ্টমার অনেক। তারা সকলেই অনন্য। তারা না আসা পর্যন্ত ম্যানেজার চেয়ারগুলো খালি রাখেন। আজ চার টেবিলের আখ্যান শোনাই।

ডান পাশের তিন নম্বর টেবিল। আটজন বসে আছেন। তিনজন হুইস্কী, চারজন ভদকা আর একজন বিয়ার খাচ্ছেন। প্রতিদিনের মত জমজমাট আলোচনা চলছে- কার্লমার্ক্স, লেলিন, ট্রটেস্কি, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, শ্রেণিবৈষম্যহীন সমাজ, বিপ্লব, প্রতিবিপ্লব।

প্রতিদিনের মত আজও রাত বাড়বে, আলোচনা বাড়বে, নেশা বাড়বে, বিপ্লবীরা তাল সামলে দাঁড়াতে না পেরে একে অন্যের গায়ে ঢলে পড়বে, বলবে- সরি, কমরেড। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।

ডানপাশের শেষ টেবিল। দু’জন মুখোমুখি বসেছেন। প্রতিদিনের কাস্টমার। ফিসফিস করে কথা চলছে। হাসছে। সাত পেগ করে রয়াল জিন খাবে। ওরা দু’জন কখনও মাতাল হয়না, নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায় না। মদ গিলতে গিলতেই কাজের খোঁজে ফোন দেয়। মাছ শিকারের প্রাথমিক কথাবার্তা বলে।

মদিরার ম্যানেজার ভালো করেই জানেন এরা শহরের নামজাদা কন্টাক্ট কিলার। খুন করেন, খুন করান। মাছ শিকারের খেলা খেলেই এরা আয় করে- ভাত খায়, মদ গিলে।

বামপাশের শেষ টেবিল। তিনজন বসে আছেন। একজন নিয়মিত। বাকীরা অনিয়মিত। নিয়মিত জনের সাথে প্রতিদিনই দু’তিনজন অনিয়মিত লোক থাকেন। তারাই মদের বিল দেন। নিয়মিতজন একটি পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক। তিনি প্রতিদিনই অনিয়মিতদের একটি গল্প শোনান-
: তিন পেগ খেলেই জীবনান্দের মত লিখতে পারি। কিন্তু লেখা হয়না।
: লিখেন না কেন?
: লোভ, বুঝলে লোভ।
: লোভ মানে?
: মানে আরো দু’পেগ খেয়ে নিলেই রবীন্দ্রনাথের মত লিখতে পারি। বাড়তি দু’পেগ পেটে ঢাললেই রবীন্দ্রনাথ হয়ে যাই, আই স্যয়ার। তবু লেখা হয়না।
: কেন?
: আবার সেই লোভ। আরো ভালো লেখার আশায় বাড়তি দু’তিন পেগ গিলি। তারপরেই মনে হয় রবীন্দ্রনাথ জীবনান্দের মত ছাইপাশ লিখে জঞ্জাল বাড়িয়ে লাভ কি! লিখতেই যদি হয় তবে রসময় গুপ্তবাবুর মত লিখ, টাচি, জীবন্ত প্রাণবন্ত।

এই টেবিলের বিপরীতে বসেন অধ্যাপক শেখর। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত থাকেন। চার পেগ ভদকা আর চার পেগ জিন খান। নেশা ধরেনা। মুরগীর ঝাল ফ্রাই দিয়ে পরোটা খেতে শুরু করলেই নেশা ঝিম ধরে। খাওয়া শেষ হবার আগেই নেশায় বুঁদ। বিল পরিশোধ করে পুরো মানিব্যাগটা ওয়েটারকে টিপস হিসেবে দিয়ে যান। অবশ্য, পরের দিন বারে এসে ঐ ওয়েটারকে ডেকে ভাংতি পয়সা সমেত মানিব্যাগ ফেরত নেন।

মদিরা বার এন্ড রেষ্টুরেন্ট একটি সাম্যবাদী প্রতিষ্ঠান। এখানে বিপ্লবী, কনটাক্ট কিলার, কবি, অধ্যাপক আর সাধারণ কাষ্টমার সবাই সমান, সবাই সবার মদভাই।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৪ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৪-০২-২০১৯ | ১০:০৩ |

    অসামান্য এবং অসাধারণ।

    GD Star Rating
    loading...
  2. রিয়া রিয়া : ০৪-০২-২০১৯ | ১৮:৪৯ |

    ইন্টারেস্টিং। 

    GD Star Rating
    loading...
  3. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ০৪-০২-২০১৯ | ২০:১৪ |

    অনন্যধারায় মুগ্ধ হলাম সাঈদ আহমেদ ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
  4. মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন : ০৪-০২-২০১৯ | ২২:১৩ |

    * শুভ কামনা নিরন্তর… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...