টার্গেট কিলিং

টার্গেট কিলিং

বাবা, সালাম নিও।

কাল থেকে তোমাদের অবর্ণনীয় কষ্টের দিন শুরু হবে। সবাই তোমাদের দিকে আঙ্গুল তুলবে। ঘৃণার চোখে তাকাবে। বিশ্বাস করো বাবা, আমি কোনো ভুল করিনি।

আমার পথ যদি ভুল হয়, তবে সাড়ে তিনশ আসনে বসে থাকা দাঁতাল শুয়োরগুলোর পথ মহাভুল। বাঘ ঘাড় মটকে একবারে রক্তমাংস খায়। কিন্তু এই শুয়োররাজের পাল ছারপোকার আর জোঁকের মত প্রতিদিন আমাদের রক্ত খায়। হাড্ডি-মাংস খায়, মগজ খায়, মন খায়, আশা স্বপ্ন ভবিষ্যত খায়।

সবার থালায় দুইবেলা উঠবে জুঁই ফুলের মত শাদা ভাত, মাছ বা মাংসের সালুন আর ডাল। কোনো শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগবে না, দেশের সব শিশু স্কুলে যাবে একই পোশাকে। পড়া শেষে প্রতিটি যুবক বৈধ পথে আয়ের কাজ পাবে। আর একটিও বিচার বহির্ভূত হত্যা হবেনা। ধর্ষিত হবেনা কেউ। কৃষক পাবে ফসলের ন্যায্য দাম। শ্রমিক আর দিনমজুর মমাথা গোঁজার জন্য পাবে আপন দালান ঘর, গার্মেন্টসের সেলাই দিদিমনির শোবার ঘরে গরমের রাতে হাওয়া দিবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র। বিনা চিকিতসায় কষ্ট পাবেনা কেউ। দেশের দরিদ্রতম মানুষটিরও দুটো ওমওম স্যুয়েটার থাকবে আর বর্ষায় ব্যবহারের জন্য একটা বর্ষাতি।

শুয়োরের পাল পার্সেন্টেজের আবর্জনা খাওয়া ছেড়ে মানুষ হবে। নিজের স্বার্থে ছাত্র যুবকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিবেনা, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও অন্ধ ধর্মীয় মৌলবাদের বৃক্ষের চারা ঘরে ঘরে পৌছে দিবেনা। দেশে চিরদিনের জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে। রাজনীতির পরিবর্তে সংবিধানে স্থান পাবে প্রজানীতি। এসব চাওয়া কি অপরাধ!

বাবা, আমি মানুষ রাজ্যে শুয়োরপ্রধানের পদত্যাগ দাবী করছি। কাদা খোঁচানের তালে তালে সংঘবদ্ধ হয়ে তারা কতটা লুটপাট করছে তার হিসাব দাবী করছি। জনতার রক্তমাংসে তাদের ভোগ দেবার প্রথা অস্বীকার করছি। আমার কোনো দল নেই, আমি সশস্ত্র নই, কোনো দাঁতাল শুয়োর আমার মামা-চাচা বা পলিটিক্যাল বড় ভাই নয়, আমার পরিবারের কেউ পত্রিকার নামজাদা সম্পাদকের সাথে মদের আড্ডায় তুবড়ি ফুটায় না। আমি শুয়োরপ্রধানের পায়ে আত্নাহুতি দিতে প্রস্তুত নই, আমি শুয়োর সাম্রাজ্যের পতন চাই– এগুলোই আমার সব থেকে বড় অপরাধ।

বাবা, খুব কষ্টে একটুকরো কাগজ আর কলম জোগাড় করেছি। মা’র চোখের ছানির অপারেশন তারাতারি করিও। টাকার জন্য ভেবো না। খুব দূরে কোথাও ঘুরতে যাবো বলে টাকা জমাচ্ছিলাম। অন্তুকে বোলো– ও বের করে দিবে। অন্তুকে কামলা হিসেবে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দিও। নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে হলেও এই ইতরের দেশ থেকে পালাক — সেখানে দাসের মত মারা গেলেও অন্তত একটা সান্ত্বনা পাবে। তোমার প্রেশার ও সুগারের দিকে খেয়াল রেখো।

বাবা, যে ভদ্রলোক এই চিঠি তোমার হাতে পৌছে দিচ্ছে তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে ভুলো না- সে একজন কনস্টেবল। টাকা না দিলে ৫০হাজার টাকা আদায় করে ছাড়বে। তারপরে থানার সেকন্ড অফিসার আর ওসিকে লেলিয়ে দিবে। তখন লাখ টাকার কাফফারা গুনতে হবে।

কাল সকালে পেপার পড়োনা, বাবা। অস্ত্র উদ্ধারে গিয়ে ক্রস ফায়ারে জঙ্গী নিহত হবার নাটকের ভিলেনের চরিত্রে আদরের ছেলের নাম সহ্য করতে পারবেনা।

বাবা, তোমরা ভালো থেকো। ভালো থাকার জন্য মুখ আর চোখ বন্ধ রেখো– সমগ্র সংবিধান জুড়ে এখন এই ধারা ছাড়া আর কোনো ধারা নেই, উপধারা নেই।

ইতি-
মর্তুজা।

পুনশ্চ: আলু মটরশুটি আর শিংমাছ দিয়ে মা’র হাতে রান্না করা তরকারি মাখিয়ে গরম ভাত খেতে খুব ইচ্ছে করছে। যত দামই হোক, আমার টিউশনির জমানো টাকা থেকে বড় সাইজের দেশী শিং মাছ এনো তো বাবা। সাধ্যে কুলোয় না বলে কতদিন খাওয়া হয়নি। দেখো, মা’র রান্নার ঘ্রাণ পেলে কবর ফুরে ভাত খেতে হাজির হয়ে যাবো।

#অণুগল্প
#গ্রন্থ: লঙ্কা কিন্তু জ্বলছে না

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০২-০৬-২০১৮ | ৭:১৭ |

    আমরা এভাবেও বেঁচে থাকছি। Frown

    GD Star Rating
    loading...
  2. রিয়া রিয়া : ০২-০৬-২০১৮ | ১৬:৪২ |

    আপনার লেখায় হাস্য রস এবং বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনা যেমন থাকে তেমনি মন খারাপ করে দেয়ার মতো বর্ণনাও থাকে। আমি অবাক হয়ে পড়ি।

    GD Star Rating
    loading...