অণুগল্প: মায়াপোলাও

মায়াপোলাও

আড়াই মাস ধরে মিজানের খুব পোলাও খেতে ইচ্ছে করছে। অর্থাভাবে খাওয়া হচ্ছেনা। ইচ্ছে করলে হোটেলে খেয়ে নিতে পারে। কিন্তু হোটেলে বসলে ছেলেমেয়ে দুটোর কথা মনে পরে, বৃদ্ধ মা আর শরীফার কথা মনে পরে।

টানাটানির সংসার। পাঁচজনের জন্য দুইবেলা পোলাও রান্না করতে হাজার টাকা খরচ। একবেলা তো আর খাওয়া যাবেনা।

মাসের প্রথম সপ্তাহ। বিষ্যুদবার রাতে আলুভর্তা ও ডাল দিয়ে ভাত খেতে খেতে শরীফাকে বলে-
: কাইল পোলাও রাইন্দো, সকালে মুরগী আর পোলায়ের চাউল আইনা দিমু।
: এতদিন ধইরা জি আকলাইতাছে, হোটেলের পোলাও খাইলেই পারতা। খামাখা বাড়তি খরচ।
: তোমাগো ছাড়া কিছু খাই?হোটেলে খাইলে গলা দিয়া পোলাও নামবো!
: এই অভ্যাসটাই ভালা লাগেনা, আমগো থুইয়া একা দাওয়াত পানিতেও যাওনা।
: বাদ দাও, এক কেজি খাসির গোশতও আনুম। ঝাল কইরা আলু দিয়া রাইন্দো।
: আইচ্ছা।
: না না ঝাল দিও না, তোতন খোকন জি ভইরা খাইতে পারবো না।

শুক্রবার ভোর। বাড়ি ওয়ালার ডাকে ঘুম ভাঙে। বাড়িওয়ালা বলেন, ‘নাতির জন্মদিন। দুপুরে সামান্য খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করছি। তোমগো দাওয়াত। না করা পারবা না।” মিজান হাসি মুখে দাওয়াত কবুল করে।

মিজান জুম্মার নামাজে যাবার আগে শরীফার হাতে একহাজার টাকা দেয়। বাড়িওয়ালার দাওয়াতের সালামি। ছেলেমেয়ে আর মাকে নিয়ে দাওয়াতে যেতে বলে। শরীফা বিষণ্ন কণ্ঠে জানতে চায়-
: তুমি যাইবা না?
: না, তুমিই কও এক হাজার টাকা সালামি দিয়া কি পাঁচটা মানুষ খাওন যায়!
: তুমি না গেলে আমিও যামু না।
: শরীফা, বাড়িওয়ালা সব ভাড়াইটার ভাড়া বাড়াইছে। আমগো বাড়ায় নাই। আমগো ভালা পায়। না যাওনটা কি ঠিক অইবো!
: তুমি কি খাইবা?
: আমি একশো টাকা দিয়া হোটেলে তেহারী খায়া নিমু। দাওয়াতে গেলে তো পাঁচ শো দিতে অইবো।

মিজান জুম্মার নামাজ শেষে মসজিদে বসে ভিড় কমার অপেক্ষা করে। বহুদিন পরে আজ বাচ্চারা, মা ও শরীফা পোলাও খাবে। পোলাওয়ের সাথে টিকা কাবাব, রুই মাছ ভাজা, মুরগির রোষ্ট, মাংসের রেজালা, বোরহানি আর জর্দা ও আছে। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দুই রাকাত শোকরানা নামাজ আদায় করে।

সে মসজিদ থেকে বের হয়ে টং দোকানে বসে। আয়েশ করে চা’য়ে ডুবিয়ে বানরুটি খেতে থাকে। মাথার ভিতরে পোলাও খাবার ইচ্ছেটা আবার জেগে ওঠে। তার মাথার ভিতরে যেন সিনেমা চলছে- একটা শীতল পাটিতে প্লেটে প্লেটে সাজানো হালকা গরম সাদা পোলাও, মুরগি ভাজা, আলু দিয়ে রান্না করা মাংসের রেজালা, পেয়াজ কুচি, রসে জবজবে লেবু, কলাপাতা রঙ কাঁচা মরিচ- সে, তোতন-খোকন, মা, আর শরীফা মিলে গোল হয়ে বসে খাচ্ছে। নিজের অজান্তেই তার চোখ দুটো ভিজে আসে। শুক্রবারের ছুটির দুপুরে মিজানের ভেজা চোখ আরো ভিজিয়ে দিতে টং দোকানদারের চায়না মোবাইল সেটে এন্ড্রু কিশোর গেয়ে চলেন-
পূর্ণিমাতে ভাইসা গেছে নীল দরিয়া
সোনার পিনিশ বানাইছিলা যতন করিয়া
চেলচেলাইয়া চলে পিনিশ, ডুইবা গেলেই ভুস…

#অনুগল্প
#গ্রন্থ: লংকা কিন্তু জ্বলছে না/আবু সাঈদ আহমেদ

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১২ টি মন্তব্য (লেখকের ৬টি) | ৬ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ৩০-০৫-২০১৮ | ১২:০৭ |

    অসাধারণ।

    GD Star Rating
    loading...
  2. মোঃ খালিদ উমর : ৩০-০৫-২০১৮ | ১৩:০৬ |

    আমারও মনে হইতেছে ইফতারির সময় কাচ্চি বিরিয়ানি হইলে রমজানডা ভালই কাটত কিন্তু গিন্নী কিছুতেই বুঝতেছেনা। কি করি?

    GD Star Rating
    loading...
  3. রিয়া রিয়া : ৩০-০৫-২০১৮ | ১৬:১৭ |

    লেখাটি পড়ে মন বিষণ্ন হলো। অসাধারণ।

    GD Star Rating
    loading...
  4. সুমন আহমেদ : ২৭-০৪-২০১৯ | ১৩:০৭ |

    অসাধারণ হরবোলা ভাই। 

    GD Star Rating
    loading...
  5. যাযাবর জীবন : ২৭-০৪-২০১৯ | ২৩:৩৩ |

    সাঈদ ভাই এর লেখা পড়লেই মন অন্যরকম
    আমার এ কালের সবচেয়ে প্রিয় লেখক

     

    GD Star Rating
    loading...
  6. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ২৮-০৪-২০১৯ | ০:৩৩ |

    অসাধারণ ভাই।

    GD Star Rating
    loading...