চৈত্র মাস। সন্ধ্যা। চারপাশ হঠাত কালো হয়ে এলো। মেঘ আর বাতাস। হাটবার। বাসিতের দোকানে রজ্জব মাস্টার বসে চুক চুক করে চা খাচ্ছেন। আর আনমনে জোড়া ইলিশ দোলাচ্ছেন। লোভ সামলাতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম-
: মাস্টর, ইলিশ দুইটা কত দিয়ি কিনলা?
: তেরশো টাকা, ফরমালিন নাই, ফ্রেশ ফিশ।
: হে: হে: রাতে ফরমালিন ছাড়া ইলিশ নিলে ভুতেরা হামলা করিতে পারে।
: হা: হা: হা: জোড়া তালদিঘীর মাঠ দিয়িতো যাবো, দেখি কোন ভুতের পুত সামনে আসে!
: তা যা বলিছো মাস্টর।
আমার বাড়ি রজ্জব মাস্টারের বাড়ির পাশেই। তেমন দেখাসাক্ষাত নাই। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই দুজন বাড়ির পথে হাটছি। সিগারেট ভাগাভাগি করে খাচ্ছি। লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম-
: মাস্টর, উচিত দাম দেই, একটা ইলিশ দাও। এমন তাজা ইলিশ পাওয়া যায় না। খাটি পদ্মার ইলিশ। ভেজাল নাই।
: কি যে কও! যুদ্ধ করি মাছ দুটা কিনেছি। কাল দুপুরে দাওয়াত খেয়ে যেও।
এরপর আর কথা চলেনা। দুজন মিলে হাটছি। রজ্জব মাস্টারের বাড়ির মোড় হতে বিদায় নিবো। হাত মিলানোর জন্য বাড়ালাম। রজ্জব মাস্টর হাত বাড়াতে গিয়ে অবাক। তার হাতে শুধু রশি ঝুলছে। ইলিশ মাছের নামগন্ধ নাই। তাজ্জব ব্যাপার, আচানক কান্ড।
আমি আর কি করি! নিজের লোভ সামলাতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইলাম। পকেট থেকে তেরশো টাকা আর মামদো ভুতের ভিজিটিং কার্ডটা রজ্জব মাস্টারের হাতে দিলাম। কিন্তু মাস্টর কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইছেন না যে আমি ভুত। তার সে কী বকাঝকা, কান মোচড়ানো। অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে তালগাছের আগায় তুলে আমি পুরানো বটগাছের পাতার আড়ালে গা ঢাকা দিলাম। মানুষদের বিশ্বাস করতে নেই, বলা যায় না, দুটো ইলিশমাছের জন্য না আবার আমাকে খুন করে বসে।
loading...
loading...
মুরুব্বীদের কাছে গল্প শুনতাম- পূর্বেকার দিনে যখন বাজার থেকে ইলিশ মাছ কিনে বাসায় আনা হতো বিশেষ করে রাত্রি বেলায় তখন নাকি ঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হতো এবং মাছের সাথে ভুতও আসত। বাল্যকালে মুরুব্বীদের থেকে যে গল্প শুনে কান্না থামাতাম সেটিকে সুদীর্ঘ সময় পর আবারও ফিরে পেলাম। ধন্য প্রিয় আবু সাঈদ আহমেদ
loading...
অসাধারণ।
loading...
আপনার অণুগল্প গুলো সত্যই অসাধারণ। ( উত্তর না পেলে একটা শব্দই এখন অনেক জায়গায় ব্যহার করি > অসাধারণ। )
loading...