লেজ

মন্তাজ মেম্বার জাদরেল লোক। আপদমস্তক জনসেবক। জনসেবার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন রাজনীতি। তার ইউনিয়নের মানুষদের কল্যণ এবং উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনে যে কোন ব্যক্তিকে নিজের কোলে, কাঁধে বা মাথায় তুলতে পারেন। দু:খে সুখে পাশে এসে দাড়াতে দ্বিধা করেননা। আবার উন্নয়ন আর কল্যাণের রাজনীতির জন্যই মানুষকে খুন করতে পারেন। ভিটি ছাড়া করতে পারেন। মন্তাজ মেম্বার এতটা জাদরেল যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও তার কথার অবাধ্য হবার তাগদ রাখেন না। ইউনিয়নের সবাই জানেন এই মেম্বারকে সমীহ করে চলাতেই সকলের মঙ্গল।

দুলু মিয়া ৭০ বছরের বৃদ্ধ। মুখ ভর্তি সাদা দাড়ি। গায়ের বসন এলোমেলো। জিজ্ঞাসাময় দৃষ্টি। কিছুদিন হল মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। বৃদ্ধ দুলু মিয়াকে নিয়ে মন্তাজ মেম্বার বিশাল সমস্যায় জর্জরিত। এই বৃদ্ধ মন্তাজ মেম্বারের কষ্টার্জিত ইজ্জত হুমকীর মুখে ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু বৃদ্ধকে তিনি খরচ করে ফেলতে পারছেন না। কারন বৃদ্ধ দুলু মিয়া হলেন মন্তাজ মেম্বারের পিতা।

দুলু মিয়া ধীর পায়ে হাটেন। একা একা সমগ্র ইউনিয়নে ঘুরে বেড়ান। খুব মন দিয়ে হারিয়ে যাওয়া ল্যাঞ্জা (লেজ) অনুসন্ধান করেন। তার শখের লেজটা হারিয়ে গেছে। এই লেজটাকে খুঁজে পেতে হবে। তিনি সারা দিন হারিয়ে যাওয়া লেজের বিরহে কাতর হয়ে থাকেন। মানুষ জনকে প্রশ্ন করেন, “আমার যে ল্যাঞ্জাটা (লেজটা) আছিল, হেইডা কেডা নিছে?” সবাই দুলু মিয়ার এই অনুসন্ধানে নির্দোষ আনন্দ পেলেও মন্তাজ মেম্বার বিব্রত হন। মাঝে মাঝে ভাবেন দড়ি দিয়ে পিতাকে বেঁধে রাখবেন। কিন্তু নিজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার ভয়ে সেই পথে যাননা।

ইউনিয়ন পরিষদের সভা চলছে। সরকারী কাজের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভা। স্থানীয় এমপি নিজে এসেছেন। মন্তাজ মেম্বার এমপির পাশ ঘেষে বসেছেন। ভাগ বাটোয়ারার জটিল আলোচনার মাঝে আচমকা দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন দুলু মিয়া। মন্তাজ মেম্বারের মানসিক ভারসাম্যহীন পিতা। মন্তাজ মেম্বার রাগান্বিত এবং সংকোচিত। কিন্তু মুখে স্মিত হাসি এনে বললেন, “আব্বা, আপনি বাসায় যান। আরাম কইরা ঘুমান। ” কিন্তু দুলু মিয়া স্থির। তিনি অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে সকলের চোখের দিকে তাকালেন। তারপর সরাসরি এমপির চোখে রোখ রেখে বললেন, “আমার ল্যাঞ্জাটা কে য্যান চুরি কইরা লয়া গেছে। আমার ল্যাঞ্জাটা পাইতাছি না।”

এমপি: আপনার ল্যাঞ্জা ছিলো না কি?

দুলু মিয়া: আছিল’তো। কুত্তার মতন একটা ল্যাঞ্জা আছিল।

এমপি: চাচা! মানুষের ল্যাঞ্জা থাকেনা। আপনারও ছিলোনা।

দুলু মিয়া: আমার আছিল’তো। কুত্তার মতন একটা ল্যাঞ্জা আছিল।

এমপি: কিভাবে জানলেন যে আপনার ল্যাঞ্জা আছিল?

দুলু মিয়া : ল্যাঞ্জা না থাকলে মন্তাজের মতন কুত্তার বাচ্চারে পয়দা করলাম কেমনে!! তোমার বাবারে জিগাও। তারও একটা ল্যাঞ্জা আছিল।”

এমপি নির্বাক। মন্তাজ মেম্বার মাটির দিকে তাকিয়ে আছেন। সভায় উপস্থিত সকলের চোখের সামনে পিতাদের মুখচ্ছবি ভেসে উঠছে। সত্যিই কি পিতাদের একটা করে ল্যাঞ্জা ছিল!! কুকুরের মত ল্যাঞ্জা!!

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৮-০৬-২০১৭ | ২০:৩২ |

    অ সা ধা র ণ।

    GD Star Rating
    loading...
  2. মামুনুর রশিদ : ০৮-০৬-২০১৭ | ২২:৪৪ |

    পাগল হইলেও দুলু মিয়ার কথা কিন্তু গাঢ়! শুভেচ্ছা জানবেন প্রিয়।

    GD Star Rating
    loading...
  3. আনু আনোয়ার : ১০-০৬-২০১৭ | ১:৫৮ |

    এই ধরনের অণুগল্পকে ধ্রুপদী গল্প বলা যেতে পারে।

    GD Star Rating
    loading...