মেট্রিক পরীক্ষা শেষ। নিজেদের লায়েক ভাবতে শিখেছি। দীর্ঘ ছুটি কাটছে আড্ডায়, বই পড়ে। ঘনিষ্ট বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম মদের স্বাদ নিব। রাসেলের বাড়ি সারাদিন খালি থাকে। ওর রুমে মদ খাব। কামাল বলল- ‘ঘরে মদ খাওয়া আর জিলাপি খাওয়া সমান। বিকালের খোলা ছাদ, মান্নাদের গান, আড্ডা আর কাবাব দিয়ে মদ- ফিল কর দোস্ত, ফিল কর।’ রাসেলের রুমে মদ পানের মুখেখড়ি অনুষ্ঠানে সবাই ছিলাম, কামাল ছিলনা। কি কাজে যেন আটকে গিয়েছিল।
কলেজের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ। এবার সিদ্ধান্ত হল কক্সবাজারে যাব। কামাল বলল- ‘দোস্ত, মজাই মজা। সারা রাত সৈকতে বসে জম্পেশ আড্ডা, ননস্টপ মদ, রবীন্দ্রনাথের গান- ফিল কর দোস্ত, ফিল কর।’ কামালের কক্সবাজার যাওয়া হয়নি। পরীক্ষার ফিস দিবার পরে ছাপোষা বাবার কাছে কক্সবাজার যাবার টাকা চাইতে পারে নাই। রাসেল আর আমি টিউশনি করতাম, বলেছিলাম-
: কামাল, তুই চল, তোর টাকা আমরা দিব।
: দোস্ত, মদে চুমুক দিলেই বুকের ভিতরে খচখচ করবে। টিউশনির টাকায় প্রতিদিনই তোরা চা- সিগারেট খাওয়াস, লাঞ্চ করাস, মদ খেতে পারব না।’ আমরা কক্সবাজার গিয়েছিলাম, সৈকতে মদও খেয়েছিলাম, কামাল ছিল না।
ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষ। দীর্ঘ ছুটি। সিদ্ধান্ত হল পূর্ণিমায় জাহাজে করে বরিশাল যাব। কামাল ভীষণ উত্তেজিত- ‘মাঝরাত।জাহাজের নীরব ছাদ। চাঁদের আলো ঢেউয়ের চুলে বিলি কাটছে। লালনের গীত আর গোলাম আলীর গজল। আড্ডা চলছে, পাল্লা দিয়ে মদ চলছে- ফিল কর দোস্ত, ফিল কর।’ বরিশালে গিয়েছিলাম, টাকা যোগার করতে পারে নাই বলে কামলের যাওয়া হয় নাই।
ভার্সিটিতে ঢোকার পরে কামালের সাথে যোগাযোগ কমে আসে। একটা সময় পুরো বন্ধ হয়ে যায়। হঠাত একদিন নিউমার্কেটে দেখা-
: কামাল, কেমন আছিস? এখন কি করছিস?
: দোস্ত, ব্যাস্ত আছি। শর্টকাটে বড়লোক হবার একটা লাইন পেয়েছি। টার্গেট পাঁচকোটি টাকা।
: পাঁচকোটি টাকা দিয়ে কি করবি?
: দোস্ত, তিন কোটি ব্যাঙ্কে ডিপোজিট। দু’কোটিতে বাড়ি। বাড়িতে একটা বিশাল ঘর রাখব বইয়ে ঠাসা। ঘরের কোনায় ছোট্ট বার। সাউন্ড সিস্টেম আর এক হাজার সিডি।
: এসব দিয়ে কি করবি?
: দোস্ত, অবসর সময়ে ইজি চেয়ারে বসে দস্তয়ভস্কি পড়ছিস। সাউন্ড সিস্টেমে খুব হালকা ভলিউমে পিয়ানো বাজছে। পড়ার ফাঁকে ব্লাডি মেরিতে চুমুক দিচ্ছিস – ফিল কর দোস্ত, ফিল কর।
: তোর বাড়ি , তোর ঘর- ফিল করে আমার কি লাভ?
: হারামজাদা, এটা একটা কথা বললি। বিয়ে করলে বউটা ছাড়া পুরো বাড়ি তোদের দখলে দিয়ে দিব,খোদার কসম।
: তাহলে ঠিক আছে, হা: হা: হা:
: দোস্ত, আহম্মকের মত হাসিস না। মদ, বই, মিউজিক সব একসাথে, এক ছাদের নিচে, এক ঘরে- ফিল কর দোস্ত, ফিল কর।
কামাল এখন কোটিপতি। অতীতের সূত্র ধরে ওকে যত বলি ‘ফিল কর দোস্ত, ফিল কর।’ ও বলে- ‘দূরে গিয়ে মর ব্যাটা, দূরে গিয়ে মর।’ – গল্পটা এভাবে শেষ করতে পারলে বেশ হত, কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হল-
শেষ পর্যন্ত কামাল শর্টকাটে বড়লোক হতে পারে নাই। বসের ইশারায় র্যাব ওকে মেরে ফেলে। এরপর থেকে আমরা মদ খেতে পারি না। মদ খেলেই কে যেন ফিসফিসিয়ে বলে- ‘ফিল কর দোস্ত, ফিল কর।’ মদের বদলে আমরা কামালের তীব্র মৃত্যু যন্ত্রণা ফিল করি। দম বন্ধ হয়ে আসে। ফিসফিসানি থামেনা, বেড়েই চলে- ফিল কর দোস্ত, ফিল কর… ফিল কর দোস্ত, ফিল কর…
loading...
loading...
অসাধারণ আবু সাঈদ আহমেদ।
loading...
আপনার লেখা গুলো আমি বিশেষ যত্ন নিয়ে পড়ি। আমার কাছে দারুণ লাগে।
loading...
নিঃসন্দেহে চমৎকার লেখেন আপনি। কিন্ত কষ্ট পাই তখন, যখন দেখি দীর্ঘ সময়েও আপনার উপস্থিতি বা সাড়া দেখি না।
loading...