# পুর্বে প্রকাশের পরের অংশ #
কাকা বাবুর ঠিকানা পেয়ে সাজেদুলের মনে সাহস হলো। ভাবছে একটি অচেনা শহরে কাকা বাবুর মাধ্যমে একটা কাজ খোঁজে নিতে পারব। মাঝ দুপুরে একটি মোড়ে যাদু করের মজমা দেখল। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত শহরের অলিগলি ঘুরে বেড়াল। কিন্তু তাকে কিছু ভাল লাগছে না। বেলা যখন ডুবু-ডুবু কাকা বাবুর ঠিকানায় পৌছাল। তখনো কাকা বাবু আসেননি। অচেনা জায়গায় একাকি অপেক্ষামান মনে বড় ভয় হচ্ছে। কিন্তু এখন নতুন করে যাবে কোথায়? সেখানেই অপেক্ষা করতে লাগল। রাত নয়’টার দিকে কাকা বাবু এলো। কাকা বাবু বলল ম্যানেজার আজ দেরিতে বেতন দিয়েছে; এসো ঘরে যাই। ঘরের তালা খুলে দিল। সাজেদুল ঘরে ঢুকে দেখে ঘরের চৌকিতে কোন কাঁথা বিছানা নাই। চৌকির কোণায় ছোট একটি পটলা। চারদিক থেকে মশা গুণগুণ করছে। কাকা বাবু ঘরে ঢুকল। সাজেদুল তুমি রাতে কিছু খেয়েছ? নানা কাকা; আমি কিছু খাইনি। সাজেদুলের পকেটে টাকা-পয়সা নাই। তবু বলল; এখানে আসার আগে হালকা নাস্তা করেছি। রাতে না খেলেও চলবে কাকা। কাকা বাবু আপনি বাজারে যাবেন; কেন? একটি মশার কোয়েল আনলে ভাল হত। এই জংগলে কোয়েল জ্বালিয়ে মশা তাড়ানো যাবে না সাজেদুল! এখানে অল্প টাকায় ঘর ভাড়া পাওয়া যায় না। এই শহরে কেহ-কাউকে বিশ্বাস করে না। গল্পের ফাঁকে রাত বারোটা বেঁজে গেল। তবু সাজেদুলের চোখে ঘুম নাই। মশার কামড়ে সমস্ত শরীরে কাঁথা জড়ায়ে রক্ষা নেই তার। ভাবছে; সেদিন কেন মায়ের সাথে রাগ করে চলে এলাম। সারাটি রাত এভাবে কেটে গেল। সকালে সে কাকা বাবু সংগে নাস্তা খেল। এবার কাকা বাবু’র সংগে বাগানে গেল। সারাদিন বাগানে চা পাতা তোলা ও সেচ দেয়া দেখল। কোন কিছু ভাল লাগছে তার ভাবছে পঞ্চাশ টাকা বেতনে সারাদিন কাজ! কোন দিন শ্রমিকরা দুপুরের খাবার সঠিক সময় পাই না। এখন কী করব; আমাকে কয় টাকা বেতন দিবে; ভাবছে সাজেদুল।
ইতোমধ্যে শ্রমিকদের মুখে শুনেছে এক সপ্তাহ ম্যানেজার বাগানে আসবে না। তবে আমার ভাগ্যে কী কাজ জুটবে না? আমাকে তো একটা কাজ নিতেই হবে। এত’দিন কাকা বাবুর খরচে খেলাম। কাকার মুখে জানতে পারল ম্যানেজার আজ অফিসে আসবে। সাজেদুল মনোস্থ করল বাগানে গিয়ে ম্যানেজারের সাথে দেখা করার। যদি সামান্য বেতনের একটি কাজ পাই তবে চলতে পারবে। ম্যানেজারের সংগে দেখা করে ছয়শ টাকা বেতনের কাজ পেল। সেখানে কয়েক তার মাস কেটে গেল। কিন্তু তার ভাগ্যের কোন উন্নতি হচ্ছে না। সাজেদুল ভাল কাজও পাচ্ছে না; মনে বড় হতাশা।
সাজেদুল বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মা যেন পাগল প্রায়। বাবা জলিল ভুঁইয়া নিজ ব্যবসার কাজ কর্ম ছেড়ে ঢাকা শহরের আশপাশের জেলাগুলোতে ছেলেকে খুঁজেছে। ছেলে হারানোর কথা বন্ধু বান্ধবকেও বলেছেন। কিন্তু কোথাও কোন খোঁজ মিলেনি। এবার পত্রিকাতে পরপর কয়েকদিন হারানো বিজ্ঞাপন ছাপানো হলো। এতেও ছেলের কোথাও সন্ধ্যান পেল না। সাজেদুল সবুজ সমারোহ চা বাগানের নিবিড় অরণ্যে থাকে। সেখান থেকে শহরের দূরত্ব প্রায় নয় কিলোমিটার। পত্রিকা আসলেও হারানো বিজ্ঞপ্তি পড়ার আগ্রহ ক’জন পাঠকের থাকে?। এভাবে দীর্ঘ কয়েক মাস কেটে গেলো। একমাত্র ছেলের কোথাও কোন খোঁজ না পেয়ে ভুঁইয়া সাহেবের মন যেনো নির্বাক। বয়ের ভারে আর ছেলে চিন্তায় চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। মা-বাবার মনে ছেলে হারানো বেদনা কন্যা সৌরভি স্বচোখে দেখছে। কিন্তু কিভাবে ভাইকে খোঁজে পাবে? তবুও মা-বাবাবে সুস্থ রাখার জন্য সৌরভির চেষ্টার কমতি নাই। সৌরভি ছোট্ট হলেও ধর্মপরায়ণ। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ বজায় চলা স্বভাব তার শৈশবে বহিঃপ্রকাশ ঘটে। একদিকে মা-বাবাকে শান্ত¦না দিয়ে সুস্থ রাখা। অন্যদিকে একমাত্র ভাইকে ফিরে না পাওয়ার আকাঙ্খার শেষ নাই। রাতে একাকি জায়নামাজ বিছিয়ে নফল নামাজ আদায় করে দু’আ করে। ভাইকে ফিরে পাওয়ার জন্য ছোট মেয়ের প্রার্থনা প্রত্যক্ষ করে তার মা যেনো প্রাণে শান্তি পান। এদিকে জালাল ভুঁইয়া একমাত্র ছেলের শোকে ব্যবসা গুটিয়ে বসার পথে। শুধুমাত্র কর্মচারীর উপর নির্ভর করায় বেশ লকসানের মুখে পড়েন। কিন্তু তাতেও যেন ভুঁইয়ার দুঃখ নাই। এভাবে সাজেদুলের শোকে পুরো পরিবার যেনো দিনদিন ধ্বংসের মুখে ধাপিত হলো। ( চলবে)
loading...
loading...
'অভিমানে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ' দ্বিতীয় পর্ব পড়লাম। পাঠক হয়ে পাশে আছি বাসেত ভাই।
loading...
ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন।
loading...