তেঁতুলিয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে থাই জাতের পেয়ারা চাষাবাদ করে স্বাবলম্বি আতাউর

তেঁতুলিয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে থাই জাতের পেঁয়ারা চাষাবাদ শুরু করেছে আতাউর। সরেজমিন গিয়ে জানা যায় তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের কলোনীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান, বয়স অনুমান ৪৮ বছর, পেশায় একজন ট্রাক্টর ট্রলি চালক। যুবক বয়সে তিনি ৮ থেকে ৯ বছর চৌরাস্তা বাজারে খুচরা ও পাইকারী চাউলের ব্যবসা করেন। এই ব্যবসায় ক্রমান্বয়ে লোকসানের মুখ দেখে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে স্থানীয় মালিকের অধীনে কিছুদিন ট্রাক্টর-টলি চালিয়ে সংসার পরিচালনা করেন। কিন্তু সড়ক দূর্ঘটনা সহ অন্যান্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে এপেশায় তাঁর মনে স্বস্থি ফিরেনি। আর তখন থেকেই মনের পরিকল্পনা সবুজ নার্সারির পাশাপাশি অন্য কোন বাণিজ্যিক ফলের বাগান করার। যেই কথা সেই কাজ। পরবর্তীতে বাড়ির পাশে সম্পুর্ন নিজ উদ্যোগে একখণ্ড জমিতে দিনাজপুর থেকে আম সহ অন্যান্য চারার বীজ দিয়ে নার্সারী চাষ শুরু করেন। তাঁর নার্সারি থেকে উৎপাদিত চারা বিক্রি করে সংসার চালান। কিন্তু নার্সারী ব্যবসায় মন্দা দেখে লাভজনক হিসেবে শুধুমাত্র নার্সারিতে সুপারির চারা করেছেন। পরে দর্জিপাড়া নামক স্থানে ৫০ শতক জমি ৫ বছর মেয়াদের জন্য ৫০ হাজার বর্গা নিয়ে রাজশাহী শহর স্থান থেকে ৪শত থাই জাতের পেয়ারা চারা রোপন করে একটি বাগান সৃজন করেন।

আতাউরের পৈতৃক নিবাস তেঁতুলিয়া উপজেলার ২নং তিরনই হাট গ্রামের রওশনপুর গ্রামে। শৈশবে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া শোনা করেন। পরবর্তীতে মাধ্যমিক সহ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা থাকলেও সংসারে অভাব অনটনের কারণে পড়া শোনা করতে পারেনি। কিশোর বয়সে পাবনায় সোলার/ডিপ টিউবয়েল কোম্পানীতে চাকুরি নিয়ে পিতার সংসারে সহায়তা করেন। সেখান থেকে ফিরে ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক পারিবারিক প্রস্তাবে দর্জিপাড়া গ্রামে তেঁতুলিয়া হাসপাতালের চতুর্থশ্রেনীর কর্মচারী মোছা. মালেকার সংগে বিবাহে আবদ্ধ হন। পারিবারিক জীবনে দুই ছেলে সন্তানের জন্য। বড় ছেলে ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। ছোট ছেলে তেঁতুলিয়া ডিগ্রী কলেজে পড়েন।

তিনি নার্সারি চাষাবাদ ও পেঁয়ারা বাগান করার বিষয়ে কোন প্রতিষ্ঠানে পড়া-শোনা কিংবা সরকারি-বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেনি। এছাড়া প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য তাকে কেউ কোন দিন উৎসাহ প্রদান করেনি। সম্পুর্ন নিজ উদ্যোগে ও অন্যান্য বাগান মালিকদের কাছে জেনে শুনেই নার্সারী ও বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়ারা বাগান সৃজন করেন। পেয়ারা বাগানে তার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এ মৌসুমে তার পেয়ারা বাগানে প্রতিটি গাছে ভাল ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে পোকা মাকড়ের হাত থেকে সুরক্ষার জন্য গাছের পেয়ারায় পলিব্যাগ পড়িয়েছেন। প্রাকৃতিক আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাগানের ফলন্ত পেয়ারা প্রায় দেড় থেকে দু’লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে জানান।

পেয়ারা চাষী আতাউরের মতে, চারা সংগ্রহ ও রোপনের উপর্যুক্ত সময় হলো ফাল্গুন ও চৈত্র মাস। ভাল ভাবে জমি তৈরির পর চারা রোপন করে পরিচর্যার পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে তিন থেকে চারবার গাছের গোড়ায় সেচ দিতে হবে। পেয়ারা বাগানে রোগ বালাই তেমন রোগ বালাই নাই। তাঁর বাগানের চারপাশে বসতবাড়ি ও কিছু বাঁশ ঝাড় থাকার কারণে ব্যাপক হারে মশক পোকার আক্রমন করে। ফলে প্রতি সপ্তাহে কিছু কিছু পেয়ারা গাছে তাকে স্প্রে করতে হয়েছে বলে জানান।

চাষী আতাউরের অভিযোগ-তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে পেয়ারা বাগান সৃজন করেছি। কিন্তু উপজেলা কৃষি বিভাগের কোন কৃষি কর্মকর্তা বা ব্লক সুপারভাইজার বাগানে আসেনি। এছাড়া কৃষি বিভাগের কাছে কোন পরামর্শ কিংবা সহযোগিতা পায়নি। এই চাষী মনে করেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও পেয়ারা বাগান সৃজনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে ও সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দিলে বাগানের পরিধি বৃদ্ধি বাণিজ্যিক ভাবে পেয়ারা চাষাবাদে বেশ সফলতা অর্জন করতে পারবে। এছাড়া এলাকায় বেকার যুবক ও নারীদের নার্সারি সহ নানা ধরনের ফলজ ও ফলদ বাগান সৃজনে সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহন করলে দেশের বেকারত্ব ঘুচাবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন- তেঁতুলিয়া উপজেলার আবহাওয়া ও উর্বর জমি বিভিন্ন ফসল ও ফল উৎপাদনের উপযোগী। ইতোমধ্যে উপজেলায় বেশ কিছু এলাকায় থাই জাতের পেয়ারা বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। পেয়ারা চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় চাষীরা খন্ড খন্ড জমিতে পেয়ারা বাগান করছে। তবে আতাউরের বাগানের কথা আগে শুনি নাই; সময় করে দেখতে যাব। এই কৃষিবিদের মতে, সরকারিভাবে পেয়ারা চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সুদ বিহীন ঋণ সুবিধা দিলে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৯-০৭-২০১৭ | ২৩:৪৬ |

    সরকারিভাবে পেয়ারা চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সুদ বিহীন ঋণ সুবিধা দিলে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে। ___ কোন দ্বিমত নেই।

    GD Star Rating
    loading...
  2. আনিসুর রহমান : ১০-০৭-২০১৭ | ১১:৫৫ |

    একজন একলা চলা পথিক সল্প শিক্ষিত https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifআতাউর রহমানকে এই সুন্দর উদ্যোগের জন্য অভিনন্দন ! আশা করি সবাই অনুপ্রানিত হবেন !

    GD Star Rating
    loading...