ঘাসমাটি অন্তরের কাছাকাছি // রুকসানা হক

এতদিনে বুঝি নিরালা খানিকটা নির্ভার হলো। তেতলার ছাদে উঠে ভেজা চোখে দমচাপা শ্বাসটুকু ছাড়িয়ে নিলো আড়াইবছরের নীলআকাশ থেকে। ওখানে অযুত ক্লান্তি ছিল, ছিল বন্ধনের খুব শীতল রং। সুখ ও ছিল ক্লান্তিহীন। ছিল নিবিড় বন্ধন। তাই চোখদু’টো বারবার ভিজে ওঠে।

যেকোন বন্ধনই ছিন্ন করার কষ্টগুলো হয় ভয়ানক। তাই হয়তো নিরালার কষ্টেরা দুঃখের অণুবীজ হয়ে বুকের গহীনে ঝড় তুলছে আজ।

আড়াই বছর !
সময়টা নেহায়েত কম না। স্মৃতিরা ও কম মুখরিত নয়। শুরু থেকেই দীপ্তের সাথে কোথায় যেন একটা ফারাক ছিল তার। হতে পারে এটা নিরালার ইগো, হতে পারে দীপ্তের অধিক ভালবাসার দায়ভার।

বেশি ভালবাসা কখনো কখনো চন্দ্রভুক গল্প হয়ে যায়। গল্পের আড়ালে থাকে আরো কিছু উপগল্প। সেখানে ভালবাসার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে পারষ্পরিক অবুঝাপড়া। দীপ্তের সাথে বুঝাপড়া হয়নি নিরালার। নিজের অহংবোধে যখন ক্ষীপ্রতা ঝড় তোলে, ক্ষয় শুরু হয় সেখান থেকেই।

নিরালার কথোপকথন বাতাসের সাথে ইকো হয়ে আবার নিজের কানেই ফিরে আসে
ঃ শৃঙ্খলের নাম কখনো ভালবাসা হয়না দীপ্ত।
ঃ ভালবাসার ও নাম কখনো নিজের সীমা অতিক্রম করা নয় নীর।

নিজের সীমা বলতে কি বুঝায়, জানে না নিরালা। পুরোটা জীবন জুড়েই ছিল অনতিক্রম্য একটা লেভেল। সেই লেভেলটা ক্রস করতে পারেনি বলেই আশেপাশের মানুষকে ছোট করে ভাবতে শেখেনি সে।

নিরালার চারপাশের মুখগুলোই যেন দীপ্তের একমাত্র এলার্জি। সুখের অনুভূতিকে নিবিড়ভাবে অনুভব করতে গিয়ে নিরালা চারপাশ থেকে খুব যতনে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। সে অনুভূতিটার নাম ছিল দীপ্ত।
সেটা কি দীপ্ত জানতো না ?
ঃ তুমি জেনেও কেনো তৃতীয় পক্ষ নিয়ে এতটা মুখর থাকো ? বিরক্তিভরে জানতে চাইলো নিরালা।
ঃ ওরা পঁচা মানুষ। তুমি সংক্রমিত হবে।
ঃ ওরা আমার চারপাশ। তুমি অন্তর। অন্তর শুদ্ধ থাকলে শরীরে সংক্রমণ হয় না।
ঃ ছোটবেলা গুরুজনেরা এদেরকেই মেলামেশার অনুপযোগী ভাবতেন।
ঃ আমি এখন পূর্ণ মানুষ। ছোট নই।
ঃ আমাকে ছাড়াই তাহলে পূর্ণ তুমি নীর ?

দীপ্তের জেদ তার অন্তরের চোখদু’টো অন্ধ করে দিয়েছিল। সে জানতো চারপাশ মানে তার থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। তাকেই কেন্দ্র করে আবর্তিত নিরালার চারপাশ।

এতসব জটিলতা সরল সমীকরণকে অমিমাংসিত রাখতে বাধ্য করে। নিরালার কাছে তার অন্তর অমীমাংসিতই থেকে যায়।

তেতলার ছাদটা আজ জোছনায় ভেসে যাচ্ছে। ছাদবাগানে টুপটুপ চাঁদনী বৃস্টি। নির্ভার নিরালার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠছে নরম নীল আলোর স্পর্শে। ছাদ থেকে জোছনাভেজা চোখ দু’টো নিচে ঘাসমাটিতে গিয়ে ঠেকলো। তুলতুলে সবুজ ঘাসেরাও ভেজা ভেজা আলোর সাথে লুকোচুরি খেলছে। নিরালার ও খেলতে বড় সাধ হলো। ঘাসের চাদরে যেন তার অন্তর শুয়ে আছে।

নিরালা অন্তর ছুঁতে চায়। প্রচন্ড জেদে জোছনার নীল আলোতে নিজেকে ছেড়ে দেয় ঘাসমাটি অন্তরের কাছাকাছি।

একটা বিকট শব্দে ভয়ার্ত রাতের পাখিরা ক্যাঁচক্যাঁচ করে এলোপাথাড়ি উড়ে যায়।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১২ টি মন্তব্য (লেখকের ৬টি) | ৬ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৮-১১-২০১৮ | ১৯:৪৫ |

    স্মৃতি কথার আদলে গড়ে উঠা অণুগল্প নিঃসন্দেহে সুন্দর হয়েছে। মূলতঃ আপনার উপস্থাপনের ভঙ্গীটাই অনবদ্য। অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য আপা। ধন্যবাদ। 

    GD Star Rating
    loading...
    • রুকশানা হক : ১৯-১১-২০১৮ | ১৩:৪৪ |

      সাথে থাকার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।  ভালো থাকুন। 

      GD Star Rating
      loading...
  2. রিয়া রিয়া : ১৮-১১-২০১৮ | ২০:১৮ |

    সুন্দর হয়েছে প্রিয় দিদি ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • রুকশানা হক : ১৯-১১-২০১৮ | ১৩:৪৫ |

       অশেষ ধন্যবাদ দিদিভাই।   ভালবাসা নিরন্তর। 

      GD Star Rating
      loading...
  3. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ১৮-১১-২০১৮ | ২০:২৪ |

    যেকোন বন্ধনই ছিন্ন করার কষ্টগুলো হয় ভয়ানক। তাই হয়তো নিরালার কষ্টেরা দুঃখের অণুবীজ হয়ে বুকের গহীনে ঝড় তুলছে আজ। অনুগল্পের ভাঁজে জীবনের সত্য দিক গুলোও চমৎকার উঠে এসেছে। শুভেচ্ছা বোন। 

    GD Star Rating
    loading...
    • রুকশানা হক : ১৯-১১-২০১৮ | ১৩:৪৮ |

      জীবন থেকেই যে ঘটনাগুলো গল্প হয়, তাতে জীবনের সত্যতা কিছুতেই লুকোনো থাকে না ।

      গল্পের সাথে আপনাকে পেয়ে ধন্য হলাম দাদা।

      GD Star Rating
      loading...
  4. মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন : ১৮-১১-২০১৮ | ২২:১৩ |

    নিরালা অন্তর ছুঁতে চায়। প্রচন্ড জেদে জোছনার নীল আলোতে নিজেকে ছেড়ে দেয় ঘাসমাটি অন্তরের কাছাকাছি।

     

    * শুভ কামনা নিরন্তর… https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • রুকশানা হক : ১৯-১১-২০১৮ | ১৩:৪৯ |

      মন্তব্যে প্রীত হলাম।  শুভেচ্ছা নেবেন। 

      GD Star Rating
      loading...
  5. মিড ডে ডেজারট : ১৮-১১-২০১৮ | ২২:৩২ |

    যারা অণুগল্প নিয়ে ভাবেন তাঁদের অনেকের দৃষ্টিতে কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস এবং অণুগল্প এই কয়েকটির মধ্যে অণুগল্প লিখা তুলনামূলক  কঠিন। কারণ গল্পকারকে সিন্ধুর সমান একটা কাহিনিকে খেটে খেটে তার মুন্সিয়ানা দিয়ে বিন্দুর আয়তন দিতে হয়। অতি অবশ্যই, ছোট কাহিনি দিয়ে লেখা গল্প অণুগল্প নয়। বিন্দুর সমান কাহিনির ভিতর এটা ওটা ঢুকিয়ে দিলে সেটা অণুগল্প তো হয়ইনা; বরং “ভুল” বানানটা “ভূল” লিখলে যেমন বিরক্তি জাগায়্ অণুগল্পের বোদ্ধা পাঠকও এক্ষেত্রে তেমনই বিরক্ত হন। গল্পের ভেতরে লুকিয়ে থাকে আরেক গল্প, স্বল্পায়তন, মেদহীনতা এবং বহুস্বর  অণুগল্পের খুব জরুরি উপাদান। এর বিষয়বস্তু, রহস্যময়ীতা , শুরুর চমক , স্তব্দ করে দেয়ার মতো পরিণতি অণুগল্পকে খুব দামি করে তুলে।

    ওপরে এতো কিছু বললাম কারণ ওসবের অনেক কিছুই এই গল্পটাতে আছে। পাঠ শেষে এটা আমাকে স্তব্দ করে দিয়েছে যা স্বার্থক অণুগল্পের জীনে থাকে।

    অসাধারণ !

    GD Star Rating
    loading...
    • রুকশানা হক : ১৯-১১-২০১৮ | ১৩:৫৪ |

      অনুগল্প নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গী এবং বিশ্লেষণ গল্পের পাঠককে অনেক সমৃদ্ধ করবে সন্দেহ নেই । কারণ আমরা অনেকেই জানিনা সাহিত্যের এ শাখাটি একজন লেখিয়ের কতটা দখলে রয়েছে।  সত্য বলতে কি আমি নিজেও জানিনা এর অনেক কিছু। আপনার চমৎকার বিশ্লেষণ আমাকেও বিস্মিত করেছে।  

      সাথেই থাকুন।  ভালবাসা ও শুভেচ্ছা। 

      GD Star Rating
      loading...
  6. মামুন : ১৯-১১-২০১৮ | ১৪:২৮ |

    অসাধারণ লিখেছেন।

    সময়ের অভাবে যদিও অন্যদের লেখায় আসতে পারি না, এজন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

    শুভেচ্ছা প্রিয় গল্পকার।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif 

    GD Star Rating
    loading...
    • রুকশানা হক : ১৯-১১-২০১৮ | ১৪:৩৫ |

      অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।  ভালো থাকুন। 

      GD Star Rating
      loading...