নাটকঃ এক খন্ড জীবন [ পর্ব-৪]

দৃশ্য – ৯

লোকেশনঃ দাদার বাড়ি

নাজির হাত মুখ ধূয়ে দরজার সামনে, রীপা একটা পুরানো গামছা এগিয়ে দেয়। অনেকটা ময়লা। রীপার হাত থেকে গামছা নিয়ে হাত মুখ মুছার সময় দাদা সামনে এসে দাঁড়ায়। দাদা বলে-
দাদাঃ কিরে রীপা এভাবে দাঁড়ায়ে থাকলে চলব? রান্না করতে হবে না? মেহমান খায়ব কি। তারাতাড়ি যা। [রীপা রান্না ঘরে চলে যায়। দাদা নাজিরের দিকে তাকায়।] বলে-
ভাই তুমি আস। তোমাকে তোমার দাদীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
[নাজিরকে ঘরের ভিতর একটা কোণায় ছোট চকির সামনে নিয়ে যায় দাদা। চকিতে শুয়ে আছে একজন জরার্জীণ শরীরের বয়স্ক মহিলা। নড়াচড়া নাই। শুধু ঢেবঢেব করে চেয়ে আছে। হালকা কপির আলোতে যতটুকু বুঝা যায়। তাতেই মনে হচ্ছে সে অনেক দিন পর এই পরিবারের মানুষ ছাড়া অন্য মানুষ দেখল।]
দাদাঃ এই হচ্ছে তোমার দাদী। সুস্থ স্বাভাবীক জীবন ছিল তার। যখন আমাদের ছেলেটার সাথে ছেলের বউটাও এক্সিডেন্ট করে মারা গেল, ছেলেটা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে তখন খায়রুলের মা স্ট্রোক করল। ঠিকমত চিকিৎসা করাতে পারলাম না। ছেলেরও না ছেলের মাকেও না। ছেলের বউডা তো মইরাই গেল। তখন থেকে খায়রুলের মা প্যারালাইজড্। কথাও বন্ধ। শুরু হয় আমার দূর্বিসহ জীবনের পথ চলা।
নাজিরঃ এত বড় এক্সিডেন্ট কিভাবে হল দাদা?
দাদাঃ [একটা র্দীঘ শ্বাঃস ফেলে।] হ্যাঁ। তোমাকে বলব। কেউ তো আমার কষ্ট শুতে চায়না। আজ তোমাকে বলব।
নাজিরঃ জি দাদা আমি শুনব। আপনি বলেন।
[দাদাকে নিয়ে ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায় নাজির।]
দাদাঃ রীপা বসার কিছু দিয়ে যা তো।
[রীপা কোন কথা না বলে চুপচাপ এসে একটা মুড়া আর একটা পিড়ি দিয়ে যায়। দাদা পিড়িতে বসে তার জীবনের গল্প বলা শুরু করে।]

দৃশ্য – ১০

লোকেশনঃ দাদার বাড়ির উঠান

দাদা পিড়িতে বসে তার জীবনে দুঃখের স্রোতে ভেসে যাওয়ার গল্প বলছেন। আর ঐ দিকে রীপা রান্না করছে। এই পিচ্চি মেয়ে অনেক মনোযোগ দিয়ে পাক্কা রাধুনীর মত রান্না করছে।

দাদাঃ আমার সন্তান বলতে ঐ একটাই ছিল। খায়রুল। মা ছেলের সারাদিন অনেক আনন্দে থাকত। ফুটফুটে ছেলের বউ সহ বেশ ছিলাম। আমার আর্থিক অবস্থাও ছিল অনেক ভাল। একটা চারচালা ঘর ছিল। ছিল গরু, জমিন। মোট কথা সব মিলে আমার ঘরে সুখ ছিল। আর এখন আমার ছেলে নাই, ছেলের বউও নাই। সাথে ঘর, গরু, জমিন সবই গেল।
এই সবের বদলে পাইছি সন্তান হারানোর কষ্ট, ভিটা মাটি হারিয়ে হয়েছি সহায় সম্বলহীন। স্থবীর স্ত্রী, একটা এতিম নাতনী নিয়ে একা অসহায় দিন কাটায়। আজ অসহায় হয়ে অভাবের তারণায় পিষ্ঠ। একবেলা খাবারের অপেক্ষা……….
[বলতে বলতে ফুপিয়ে কাদতে থাকে দাদা। তার কান্না থামাতে ইচ্ছা করে না। তার বুকের ভিতরের কষ্টগুলো কান্না হয়ে ভাসিয়ে দিক সব কিছু। হিংস্র কষ্টগুলো থাবা বসিয়ে রেখেছে এই বৃদ্ধ লোকটির বুকে। সেই থাবা কান্নার নোনা জল হয়ে বের হয়ে যাক।]
নাজিরঃ দাদা এত কষ্ট একা একা বয়ে বেরাচ্ছেন কেন? আমাকে বলেন। প্রথম থেকে সব ঘটনা বলেন। আমি শুনব।
দাদাঃ হ্যাঁ বলব। আমি তোমাকে সব বলব। [কাঁন্না থামাতে থামাতে বলে।]

রীপার রান্না শেষ। রীপা এই দিকেই আসছে।
রীপাঃ অ-দাদা তুমি কি লোকটারে সারা রাইত এইখানে বসায়া রাখবা? খাওয়নের সুযোগ দিবানা?
দাদাঃ তোর রান্না শেষ হয়ছে?
রীপাঃ রান্না শেষ সেই কখন….। এখন ওঠ। খায়তে আয়।
[নাজির রীপার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। এই পিচ্চি মেয়ে কত সুন্দর করে রান্না শেষ করে আসল।]
দাদাঃ রীপার দিকে… যা ঘরে গিয়া ভাত বার। আমরা আইতাছি।
[রীপা চলে যেতে থাকে; দাদা নাজিরের দিকে তাকায়।]
-চল ভাই ঘরে চল। এবার খাওয়া দাওয়া সারি। তোমার কেনা বাজার দিয়ে তোমার মেহমানদারি করি। তোমাকে আপ্যায়ন করার মত সামর্থ তো আমার আর নাই।
নাজিরঃ দাদা এইটা কি বলন দাদা!! আমিতো নিজেকে আপনাদের থেকে আলাদা কিছু মনে করছিনা।
[এই বলে দাদা এবং নাজির উঠে দাড়াঁয়। ঘরের ভিতর যাওয়ার সময় দাদা পড়ে যেতে নেয়। নাজির খুব দ্রুত দাদাকে ধরে সামলে নেয়।]
নাজিরঃ কী হল দাদা? শরীরটা কি খারাপ লাগছে?
দাদাঃ না না না কিছু না ভাই। বয়স হয়ছে তো। আমি ঠিক আছি।
[নাজির দাদাকে ধরেই ঘরের ভিতর গিয়ে দাড়াঁয়। রীপা একটা ভাঙ্গা পাটি মাটিতে বিছিয়ে দেয়। দাদা আর নাজির আর কোন কথা না বলে পাটিতে বসে পড়ে।]

_____________________________
নাটকঃ এক খন্ড জীবন [ পর্ব-১]
নাটকঃ এক খন্ড জীবন [ পর্ব-২]
নাটকঃ এক খন্ড জীবন [ পর্ব-৩]

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১০ টি মন্তব্য (লেখকের ৫টি) | ৫ জন মন্তব্যকারী

  1. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ০৮-০৮-২০১৯ | ২১:৪৩ |

    খণ্ড জীবনের গল্প পড়লাম ফেনা ভাই। ভালো থাকুক ওরা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • ফেনা : ০৮-০৮-২০১৯ | ২৩:০৬ |

      অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

      GD Star Rating
      loading...
  2. রিয়া রিয়া : ০৮-০৮-২০১৯ | ২১:৫১ |

    কবিতার ভীড়ে আপনার সংযোজনটি অনন্য। চলুক।

    GD Star Rating
    loading...
    • ফেনা : ০৮-০৮-২০১৯ | ২৩:০৮ |

      অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

      ভাল থাকুন।

      GD Star Rating
      loading...
  3. সুমন আহমেদ : ০৮-০৮-২০১৯ | ২১:৫৬ |

    আমার কাছে আপনার লিখাটি পড়তে ভালোই লাগছে। অন্যান্য সবার মতো বলবো চলুক। 

    GD Star Rating
    loading...
    • ফেনা : ০৯-০৮-২০১৯ | ১২:৩১ |

      অনেক ধন্যবাদ। সাথে থাকুন।

      GD Star Rating
      loading...
  4. মুরুব্বী : ০৮-০৮-২০১৯ | ২২:০০ |

    গল্পটির প্রেক্ষাপট আমাদের যাপিত জীবনের খুব কাছাকাছি হওয়ায় আমার মনে হয় পাঠকের ভালো লাগবে। কেননা এই গল্প আমাদের অনেকের বেশ পরিচিত।
    ধন্যবাদ মি. ফেনা। 

    GD Star Rating
    loading...
    • ফেনা : ০৯-০৮-২০১৯ | ১২:৩২ |

      প্রিয় মুরুব্বী আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। 

      ভাল থাকুন সুন্দর থাকুন।

      GD Star Rating
      loading...
  5. সাজিয়া আফরিন : ০৮-০৮-২০১৯ | ২২:১৮ |

    রীপার জন্য মায়া লাগছে। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • ফেনা : ০৯-০৮-২০১৯ | ১২:৩৫ |

      ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

      মায়া এক অদ্ভুত অনুভূতি। ভাবিয়ে তুলে নিজেকে নিজের জীবনকে।

      GD Star Rating
      loading...