শব্দতরী'তে প্রকাশিত আমার লিখা ... জীবন ... একটি অনুগল্প

sadness

এ বছরে যেন বরষা খুব বেশী রকমের এগিয়ে এলো। ফি বছরে এমনটা হয়নি। দিন কি দ্রুত বদলে যাচ্ছে !! ঋতুকাল বলে কি আর কিছু অবশিষ্ট আছে ?
বলা নেই কওয়া নেই, ঝরঝরিয়ে মুষলধারে বর্ষণ !! তাও আবার ফাল্গুন মাসে। আনমনা হয়ে সেটাই ভাবছে জীবন।

হ্যাঁ, গল্পের নায়কের নাম জীবন। যে কিনা জীবনের অর্থ খুঁজে পায়নি কখনো। বাবা-মা কি কারণে জীবন নাম দিলেন, সেটাও ভেবেছে ও। তবে কি নাম নামের এই শব্দটা সকলের ব্যাপ্তিতে থাক; সেটাই চেয়েছিলেন !!

মেলা শেষের দিকে। বইমেলার প্রচন্ড ভীড়ে আট বছরের মেয়ে চর্যাকে নিয়ে ভিজছে জীবন। ভিজছেই তো ভিজছেই। বাবা মেয়ে জুবু থুবু হয়ে বড় আম গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে। দোকানীরা দোকানের ঝাঁপি ফেলে খোশ-গল্পে মত্ত। কাউকে এগিয়ে আসতে দেখলেই চেহারার আকার পরিবর্তন করে ফিরিয়ে দিচ্ছে। … কি আশ্চর্য, বই গুলোন তো ভিজে যাবে ভাই। একটু সরে দাঁড়ান না।

এই সরতে সরতেই ঠাঁই মিলেছে গাছের তলে। খুব ইচ্ছে করছে ভিজে যাওয়া পকেটে প্যাকেটের অবস্থা জানতে। আহ্, বৃষ্টি হচ্ছে হোক, একটা সিগারেট যদি ধরানো যেতো !! মনের কথাটা বুঝতে পেরেই বুঝি, বৃষ্টি যেন আরো তেজ বাড়ালো। হবেনা। ধোঁয়া বিলাস আর সম্ভব না। গাছের দিকে তাকানোর চেষ্টা নিলো। যেখানে পেয়েছে সামান্য আশ্রয়।

আরে, এই গাছটা সেই গাছটাই না ! তাইতো !! আরো ছোট ছিল, কিভাবে এমন বড় হয়ে গেলো !! আনমনা হয়ে গেলো জীবন। আহা কত স্মৃতির এই গাছ। বৃষ্টি জলে নেয়ে যাচ্ছে শরীর। এক পশলা শিরশিরে বাতাস দোলা দিয়ে গেলো মন। নাড়িয়ে দিল মগজের তন্ত্রীতে নিতান্তই অবহেলায় যে স্মৃতি ছিল সঞ্চিত কোন গোপন কুঠরিতে।

গল্পের নায়িকা আকাশ। যে কিনা খেয়ালী। চ্যালেঞ্জ তার হবি।
আকাশ খুবই ছেলেমানুষি ভালোবাসতো। কখন কি যে ভর করবে ওর পরে, আগে ভাগে বোঝা মুশকিল। সেদিন এমনই এক বাদলা দিনে, দুজন বসে ছিলো, এই গাছটারই ছোট্ট ছায়ায়। লুকিয়ে বসতে চায়নি। বলেছে খোলা হাওয়ায় বসে ভিজি। জীবন বললো, ভিজতেই যদি হয়, তবে গাছের ছায়ায় কেনো, খোলা সড়ক কি অন্যায় করলো। ঐ যে সেই জেদ। পরাস্ত হতে হয়েছে জীবনকে। বসতে হয়েছে পাশে।
> বলতে পারো- আকাশ কেনো কাঁদে? এমনিতেই বিরক্ত লাগছিলো, তার উপর প্রশ্ন শুনে অবাক হতে হলো জীবনকে।
বললো- তোমার যেমন শখ হয়েছে বসে ভিজবার, আকাশেরও আজ ইচ্ছে করেছে কাঁদবার।
> ভুল বললে জীবন। এভাবে বোলোনা। বলো, আকাশ আজ দুঃখী। ও তার দুঃখগুলোন গড়িয়ে দিচ্ছে এ ধরার বুকে।

জীবন, আকাশের নিষ্পৃহ কণ্ঠ শুনে বিচলিত হয়। আকাশ তো কখনো এভাবে বলে না !! কি জানো জীবন, বৃষ্টির এই কান্নার সাগরে যদি একবার ঝাঁপ দিতে পারতাম। তোমাকে না বলা সব দুঃখ আমার একাকার হয়ে যেতো। জীবনের মাথায় আশু বিপদের অশনি ঘন্টা বেজে উঠলো। কি বলে আকাশ। কী বলতে চায় !! জীবন, আমাদের আর দেখা না হওয়াই ভালো। চলো না বৃষ্টি থেমে গেলে আমরা একে অপরকে ভুলে যাই। মনে করো, আমরা কেউ কাউকে জানিনা। চিনিনা। অচেনা কেউ। বৃষ্টি জলে ধুয়ে যাক আমাদের সকল পরিচিতি। কি, খুব স্বার্থপর ভাবছো, না ? আচ্ছা তুমিই বলো, আমরা এ পৃথিবীতে ক’জনাই বা স্বার্থের বাইরে নিজেকে ভাবি? আজ আমি স্বার্থপর। স্বার্থপরের মতই বলবো, চলো আমরা অপরিচিত হয়ে যাই। জীবন, আমাদের পরিচয় আজ না হয় বছর তিনেকের ই হবে, তার তো বেশী না, আমরা সহজে ভুলে যেতে পারি দু’জনকে, কোন চিহ্ন না রেখেই। হ্যাঁ, বলেছিলাম- ভালোবাসি। ভুল বলিনি। এখনো বাসি। না না তোমার কোন অন্যায় নেই, ভুল নেই, যা কিছু সব আমার।
অন্যায় যদি করে থাকি, তা আমি করছি। আমি তোমাকে স্বপ্ন দেখানো শিখিয়েছি, দু’জনে মিলে সারাটি জীবন পথ পাড়ি দেবার শপথ পড়িয়েছি।

জানো জীবন, আকাশের এই কান্না দেখে, আমার জীবনের সমস্ত দুঃখের কান্নায় তোমার জীবনটাও ভরিয়ে তুলতে চাই না। আমার কান্না আমার কাছেই না হয় থাক। আমাকে ক্ষমা করে দিও।
জীবন স্তম্ভিত হয়ে যায় আকাশের কথায়। ভাষা যেন হারিয়ে যায়। সেই চোখ, সেই মুখ, সেই সহজাত ভঙ্গি। বৃষ্টিস্নাত এক মানবী। নিষ্প্রাণ যেন। ঘোর তমসার রাত্রিতে নিশি পাওয়া মানুষ যেমন, এলোমেলো পা ফেলে অজান্তে এগোয়, জীবনও তেমনি এগিয়ে যায় পথের দিকে। একবার আকাশের দিকে ফিরে তাকায়; ঠাঁয় বসে আছে, অন্যমূখী হয়ে।
সম্পর্ক কতো ঠুনকো, কাঁচের মতন। ইচ্ছে হলো ভেঙ্গে দিলাম। সহসাই অপরিচিতের ঘরে নাম লিখিয়ে নিলাম। হায় জীবন !!

আজ দশটি বছর পর সেই আকাশ আজ আবার ভর করলো জীবনের চোখে। আর কোন দেখা হয়নি। যোগাযোগ পর্যন্ত না। দুই জগতের দুই বাসিন্দা। কেউ চেষ্টাও করেনি। না বলা কথাসমস্ত আর কারুরই শোনা হয়ে ওঠেনি। দুঃখ না দুঃখ বিলাস নিয়ে দু’জনেই হলো জীবন নামে জীবনের অচেনা অতিথি।

বৃষ্টিটা মনে হয় একটু ধরে এসেছে। আটকে পড়া মানুষজন ছুটছে। মেয়ে চর্যাকে নিয়ে বললো, মা চল। বাসায় ফিরি। সন্ধ্যে হয়ে এলো। আজ বোধহয় বৃষ্টি আর থামবে না। আজ আকাশের অনেক কান্না। বলেই মেয়ের হাত ধরে ত্রস্ত পায়ে ফিরে চলে জীবন। চোখটা ছলছল করে উঠলো। ঝাপসা দেখছে। মেয়ে বাবার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কি হলো বাবা ?
না, মা, চোখে যেন কি একটা পড়লো। বাবা মেয়ে ফিরে যাচ্ছে নীড়ে। কাঁদুক। আকাশ আজ যত পারে কাঁদুক। জীবনের দুঃখ আছে। কষ্ট নেই।

sadness1

লিখাটি ব্লগারস ফোরাম এর নিয়মিত প্রকাশনা শব্দতরী তে প্রকাশিত হয়েছিলো।
জীবন … একটি অনুগল্প। শব্দনীড় এ পড়তে লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেন। আর হ্যাঁ, নিয়মিত লিটিল ম্যাগ শব্দতরী ৪র্থ বর্ষে! আসছে প্রথম সংখ্যা একুশের বইমেলায়। শীর্ষক পোস্টে নিয়ম জেনে আপনার লিখা পাঠিয়ে দিন অতি সত্বর। কেননা আগামীকাল ৫ই জানুয়ারী লিখা পাঠানোর শেষ তারিখ। মনে রাখবেন। যেতে যেতে বলে যাই … গল্পটি যদি যুতসই মনে হয় তাহলে রেটিং অথবা প্লাস মাইনাস বাটনে টোকা দিতে ভুলবেন না যেন। বাম চোখ টিপ দেবার ইমো হবে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

কোন মন্তব্য নেই

মন্তব্য বন্ধ আছে।