অমাবস্যা এবং পূর্ণিমা

ভারতের হিমাচল প্রদেশকে বলা হয় দেবভূমি। উত্তর প্রদেশ হিমাচলের রাজধানী- সিমলা। পশ্চিম হিমালয়ের পার্বত্য রাজ্য যার নাম হল হিমাচল প্রদেশ। হিমাচল প্রদেশে প্রচুর দেখবার মতো সুন্দর জায়গা আছে যেমন- সিমলা, রামপুর, সাংলা, কল্পা, সারহানা, মান্ডি, কুলু, মানালী, নাকো, টাবো, ডালহৌসী, রেকিংপিও, কাজা, রোটাং পাশ এবং মণিকরন। এপ্রিল থেকে জুন এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের সময়ে এখানকার আবহাওয়া বেশ ভালো থাকে। শীতকালে অনেকগুলি জায়গাতে তূষারপাত হয়।

সমভূমি থেকে ২১০০- ২৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলা। এখানে বৃটিশ যুগের নানা স্হাপত্যের নির্দশন দেখা যায়। এখানকার ম্যাল- পর্যটকদের কাছে একটি বিশেষ আর্কষন। দেখবার মতো কয়েকটি জায়গা হলো– চাদউইক জলপ্রপাত, যা প্রায় ৭০ মিটার দীর্ঘ- দুরত্ব সিমলা থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার। সঙ্কটমোচন মন্দির (সিমলা থেকে ৭ কিলোমিটার), ইনস্টিটিউট অব এডভান্স স্টাডিজ (সিমলা থেকে ৪ কিলোমিটার), স্টেট মিউজিয়াম, গেইটি থিয়েটার (সিমলা থেকে ৩ কিলোমিটার), নলদেরা (সিমলা থেকে ২৩ কিলোমিটার), তত্তাপানি (সিমলা থেকে ৫৩ কিলোমিটার), সসস্ক্যান্ডাল পয়েন্ট (এখান থেকে ভাইসয়রের কন্যা অপহৃত হয়েছিলেন) ইত্যাদি। সিমলার উচ্চতম জাকু হিলস, জাকু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত হনুমান মন্দির, চাদউইক ফলস, প্রসপেক্টস হিলস, কামনাদেবীর মন্দির, তারাদেবীর মন্দির ( সিমলা থেকে ১১ কিলোমিটার )।

সিমলা অর্থ পাহাড়। মূলতঃ সমুদ্রতল থেকে সাত হাজার ফিটেরও বেশী উচ্চতায় অবস্থিত জাকুহিল, প্রসপেক্টস হিল, অবজারভারভেটরী হিল, ইলিসিয়াম হিল আর সামার হিলের চূড়ায় গড়ে ওঠা জনপদ নিয়ে সিমলা।

জীবনের কতো চেনা ঘটনাই না আবার ফিরে আসে, হাল ফ্যাশনের চক্‌চকে মোড়কে। সত্য হলো ফ্যাশনের ধর্মই তাই। সাইক্লিক অর্ডার মেনে চলে। কক্ষপথ তার ৩৬০ ডিগ্রী। হাই হিল আর বেলবটমের মত। অমাবস্যা পূর্ণিমার মত। সময় নিলেও ঘটে প্রকৃতির নিয়মে। ব্যত্যয় নেই। জোয়ার ভাটা যেমন।

ভালই হলো। অমাবস্যা পূর্ণিমা প্রসংগ সহসা এসেই যখন গেল, সনাতন মহাভারতের কাহিনি থেকে পড়া একটা লেখার উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছিনা। বিষয়টা ইন্টারেস্টিং।

এখানকার হুসেন ভ্যালি থেকে সিমলার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী খুব একটা দূরে নয়। এরপরই “তারা মন্দির”। পাহাড়ের ওপর স্থাপিত ছোট ছিমছাম মন্দির। কথিত আছে যে, চন্দ্ররাজসুয় যজ্ঞ শেষে কামার্ত হয়ে পড়েন এবং দেবতা বৃহস্পতির স্ত্রী তারা দেবীকে হরণ করেন। এতে চন্দ্রের বিরূদ্ধে ক্ষুব্ধ বৃহস্পতি যুদ্ধের আয়োজন করতে থাকে। দেবতা ব্রহ্মা যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করে চন্দ্র ও তারা দেবীকে বৃহস্পতির কাছে প্রত্যাবর্তনে বাধ্য করে। কিন্তু সন্তানসম্ভাবা থাকাতে বৃহস্পতি তাকে নিতে অস্বীকার করে। ব্রহ্মা তারার কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে যে, চন্দ্রই এ সন্তানের পিতা। তখন সিদ্ধান্ত দেয় যে, তারা সন্তান প্রসবান্তে বৃহস্পতির কাছে ফিরে যাবে। তারা সন্তান প্রসব করলে চন্দ্র তাকে নিজের কাছে নিয়ে যায় এবং বুধ নাম দিয়ে আকাশে নিজের বিপরীত দিকে স্থাপন করে। হ্মুব্ধ বৃহস্পতি তারাকে ফিরিয়ে নিলেও চন্দ্রকে অভিশাপ দেয়। ফলে চন্দ্র ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্ষয় হতে হতে বিলুপ্ত হয়ে যায়। চন্দ্র পরে অত্রি মুনির সহায়তায় ধীরে ধীরে নিজ গোলাকার দেহ পুনরায় প্রাপ্ত হয়। তবে বৃহস্পতির কোপ বর্তমান থাকাতে সে প্রতিমাসের অর্ধাংশ সময়ের মধ্যে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যায়। অপরদিকে অত্রি মুনির বরে মাসের বাকী অর্ধাংশে পুনরায় নিজ দেহ প্রাপ্ত হয়। হিন্দু ধর্ম মতে এর ফলেই অমাবস্যা এবং পূর্ণিমা হয়ে থাকে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

কোন মন্তব্য নেই

মন্তব্য বন্ধ আছে।