ডাংগুলি খেলার দিন

2873 ছোট্র বন্ধুরা, আজ তোমাদের একটি গল্প শোনাবো। গল্পটি তোমাদের স্মৃতির পাহাড়ে বেড়াতে সাহায্য করবে। হারিয়ে যাওয়া দিনগুলি সম্পর্কে তোমরা বিশেষভাবে জানতে পারবে। তাহলে চলো, গল্পটি শোনা যাক। অনেক অনেকদিন পর আমজাদ সাহেব পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। গ্রামে এসে ইউশা, ঐশী এবং আরশির আনন্দ আর ধরে না। উনি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় থাকেন। একটি কারখানায় উচ্চ পদে মোটা বেতনে চাকুরি করেন। বলা যায়, একজন ছেলে, দুইমেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে তার সুখের সংসার। সমস্যা একটাই কারখানায় প্রচুর কাজের চাপ থাকে। মালিক পক্ষ ছুটি দেয় না। ছুটি দিতে চায় না। সেইজন্য আমজাদ সাহেবেরও আর গ্রামে যাওয়া হয়ে উঠে না। এবার অনেক বলে-কয়ে পাঁচ দিনের ছুটি মঞ্জুর করিয়েছেন।

আমজাদ সাহেবের গ্রামের বাড়ি অত্যন্ত মনোরম। চারপাশে সবুজে ঘেরা। সারি সারি সুপারি আর নারকেল গাছ। এদের ফাঁকে ফাঁকে আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ অন্যান্য সকল ফলবান গাছ। এখন মধুমাস৷ প্রতিটি গাছেই থোকা থোকা ফল ঝুলছে। কোনটা পাকা, কোনটা আধাপাকা আর কোনটা কাঁচা। এইসব ফল খেতে গাছে গাছে পাখপাখালির মেলা। কিচিরমিচির আওয়াজ শুনতে কার না ভালো লাগে! এমনি মনোহর পরিবেশে আমজাদ সাহেব দুপুরের খাবার শেষে বাহির বাড়িতে মাদুর পেতে বসে আছেন। বাবার পাশেই বসে আছে আরশি, ঐশী, ইউশা। বিকেল সবেমাত্র শুরু হয়েছে। আমজাদ সাহেব যখন বাপ-দাদাদের স্মৃতি রোমন্থন করা শুরু করেছেন, তখনই দল বেঁধে আসল পাড়ার সকল ছেলেমেয়ে। তাদের হাতে ক্রিকেট খেলার বল আর ব্যাট। নিমিষেই তারা দু’দলে ভাগ হয়ে খেলা শুরু করে দিল। ইউশাও তাদের সাথে খেলায় যোগ দিল। যারা খেলছে না, তাদের প্রায় সবার হাতে হাতে মোবাইল। কেউ গেমস খেলছে আর কেউ ফেসবুক, ইউটিউব নিয়ে ব্যস্ত আছে। তাদের যেন দুনিয়ার কোনো খেয়াল নাই। আমজাদ সাহেব আপন মনে প্রিয় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। হঠাৎ কী মনে করে সবাইকে কাছে ডাকলেন।

আমজাদ সাহেবকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। ছোট হউক কিংবা বড় হউক এভাবে সবার সামনে বসে বসে কথা বলা সমীচীন হবে না। এই ভেবে তিনিও দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলেন, বাবুরা তোমরা কী কী খেলা খেলতে পছন্দ কর?

সবাই সমস্বরে জবাব দিল, আমরা বছরের বেশির ভাগ সময় ক্রিকেট খেলি। তবে বর্ষাকালে ফুটবল আর শীতকালে ব্যাডবিন্টন খেলি।

আমজাদ সাহেব ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললেন, আমরা তোমাদের বয়সে কি খেলতাম, তা কি তোমরা জান?
সবাই মাথা নেড়ে জবাব দিল, জী না।
আমজাদ সাহেব আবার বললেন, আমরা ডাংগুলি, বউচি, কানামাছি, ডাকসই, দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, হা ডু ডু এসব খেলতাম।

আমজাদ সাহেবের কথা শোনে ছেলেমেয়েরা সবাই পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলো। ভাবখানা এমন যে, তারা কোনোদিন এসব খেলার নামই শোনেনি। বিষয়টি বুঝতে পেরে আরশি বলল, বাবা আমার মনে হয় ওরা এসব খেলে না।

আমজাদ সাহেব বললেন, বুঝতে পেরেছি মা আরশি। আর বাবুরা সবাই শোন, তোমরা ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন খেল… আমার তাতে আপত্তি নেই। তবে মনে রেখো এগুলো আমাদের দেশীয় খেলা নয়। এগুলো বিদেশি খেলা। আমি যে খেলাগুলোর নাম বললাম সেগুলো হল আমাদের দেশীয় খেলা। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। তোমরা যদি আমাদের নিজ দেশের খেলাগুলো না খেল, তাহলে তো সেগুলো হারিয়ে যাবে। কিন্তু সেসব খেলা কে আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। আমরা দেশ-কে যেমন ভালোবাসি, তেমনি ভালোবাসি আমাদের দেশীয় খেলা। তোমরা কি আমার কথা বুঝতে পেরেছ?

সবাই মাথা নেড়ে সায় জানালো। কেবল সাজিদ নামের একজন ছেলে বলল, আমরা এসব খেলতে জানি না।

আমজাদ সাহেব মুচকি হেসে বললেন, এ বিষয়ে তোমরা কোনো চিন্তা করো না। আমি যে কয়দিন বাড়িতে আছি, প্রতিদিন বিকেল বেলা আমি তোমাদেরকে সেসব খেলা শেখাবো। শুধু তাই নয়; আমি তোমাদের সাথে খেলবোও৷ তবে আরও একটি কথা এখন থেকে তোমরা কেউ মোবাইলে গেম খেলতে পারবে না। কি সবাই রাজি তো?

আমজাদ সাহেবের কথা শোনে সবাই খুব খুশি হল। করতালির মাধ্যমে সবাই উল্লাস প্রকাশ করলো।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
ডাংগুলি খেলার দিন, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২০-০৭-২০২২ | ৯:০৩ |

    আবারও চমৎকার একটি অণুগল্প পড়লাম প্রিয় কবি। শুভেচ্ছা জানবেন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. নিতাই বাবু : ২১-০৭-২০২২ | ২০:৪৫ |

    আপনার লেখা পড়ে সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল! কিন্তু সেই দিনগুলোতে কি আর ফিরে যাওয়া যাবে?

    GD Star Rating
    loading...