স্ত্রী বন্দনা

285a

স্ত্রী:
স্ত্রী হলো একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী। আর নারী হল পৃথিবীর সকল নারীপুরুষের মায়ের জাতি। প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষের সাথে যার যার ধর্মমতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার পর আমাদের দেশীয় ভাষায় তাঁদেরই বলা হয় স্ত্রী। কিন্তু এঁরা মায়ের জাতি নারী। যৌবনকালে এঁরা কারো-না-কারোর স্ত্রী হয়।

ভুমিকা:
এঁদের ভূমিকা আদিকাল থেকেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অপরিসীম। কিন্তু আগেকার সময়ে আমাদের এই মা জাতিকে গৃহপালিত জীব এবং পুরুষের দাসত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কোনও কোনও দেশে নারীদের নিলামেও বেচাকেনা করতে দেখা যেত। বর্তমান সভ্যজগতে এখন আর সে রকম কিছু চোখে পড়ে না।

এখন মায়ের জাতি নারীগণ সেসব বাঁধা অতিক্রম করে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে। প্রাচীনকাল হতে এযাবৎকাল পর্যন্ত অনেক নারীর বীরত্বের কথাও ইতিহাসে লেখা রয়েছে। ইতিহাসে লেখা রয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে নারীদের অগ্রণী ভূমিকার কথা। সাহসের সাথে রাজ্য পরিচালনায় অনেক নারীদের অনেক ইতিহাসও রয়েছে। বর্তমানে আমাদের এই দেশটাও পরিচালনা করছেন মায়ের জাতি এক নারী। সাথে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছেন অনেক নারী। এঁরাও কারো-না-কারো সহধর্মিণী (স্ত্রী) হয়ে ছিলেন বা আছেন। বলা যায় বর্তমান সভ্যজগতে মায়ের জাতি নারীদের এখন জয়জয়কার সময়। তবুও অনেক স্থানে অনেক পুরুষেরা নারীদের দাসী হিসেবেই মনে করে, এবং আমাদের দেশসহ অনেক দেশের অনেক স্থানে তাঁদের প্রাপ্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমনকী মিথ্যে অপবাদ আর কলঙ্কের বোঝা মাথায় দিয়ে সংসার থেকেও বিতাড়িত করা হচ্ছে।

আকৃতি:
মা জাতি নারীদের আকৃতি সাধারণত পুরুষ থেকে একটু খাটো। চেহারায় থাকে মায়াবী মায়াবী ভাব। এঁদের পোষাক পুরুষের মতন নয়। এঁরা সালোয়ার কামিজ ও শাড়ি পড়তে বেশি পছন্দ করে। কেউ কেউ আবার এই সভ্যসমাজে পুরুষের মতন শার্ট-প্যান্ট পড়ে।অনেক সময় রাস্তাঘাটে যুবতি মেয়েদের হাফপ্যান্ট পড়েও ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

মা জাতি নারীদের মাথায় লম্বা চুল থাকে। মাথার চুলকে তাঁরা জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। তবে বর্তমান ডিজিটাল যুগে কিছু-কিছু নারীরা বিদেশীদের মতন মাথার চুল কেটে ছোট করে রাখে। এটা একপ্রকার আধুনিক ফ্যাশন। এঁদের শত সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকার পরও সেজেগুজে থাকতে বেশি পছন্দ করে। মা জাতি নারীদের নাক ও কান ফোঁড়ানো থাকে। উঠতি বয়সেই এঁদের নাক-কান ফোঁড়ানো হয়। সেই ফোঁড় দিয়ে তাঁরা সোনা অথবা রূপার তৈরীকৃত জিনিস ঝুলিয়ে রাখে। নাকে রাখে নাকফুল, আর কানে ঝুলিয়ে রাখে কানের দুল। মাথার লম্বা চুলে ক্লিপ, ব্যান্ড ব্যবহার করে। অনেকে মাথার লম্বা চুল খোপায় বেঁধে রাখে।

স্বভাব ও প্রকৃতি:
মায়ের জাতি নারীদের কথায় থাকে মধুমাখা। কণ্ঠে থাকে সুমধুর কোকিলের মতো সুর। অনেক নারীদের গলার সুর থাকে উচ্চস্বর। ওইসব উচ্চস্বর শুনলে অনেক সময় অনেক পুরুষের মাথা এমনিতেই গরম হয়ে যায়। আবার কিছু কিছু নারীদের কথা শুনতে হুবহু পুরুষের গলার স্বরের মতন। তবুও এঁরা আমাদের মায়ের জাতি স্ত্রী (নারী)। লজ্জাই তাঁদের একমাত্র সম্বল। কথায় আছে, ‘লজ্জা নারীর ভূষণ।’ এই লজ্জা যেন মা জাতির কাছে এক অলংকার স্বরূপ। কিছু ব্যতিক্রম থাকা সত্ত্বেও বলবো, নারীর লাজুক বৈশিষ্ট্যতা একমাত্র বাঙালি নারীর মধ্যেই বেশি দেখা যায়।

উপকারিতা:
মা জাতি স্ত্রী (নারী) সব দুঃখকষ্ট নীরবে সয়ে যায়। তাঁরা পুরুষের শত অত্যাচার সয়ে-সয়ে নিজের গর্ভজাত সন্তান ও স্বামীর সংসার আগলে রাখার চেষ্টা করে। নিজে না খেয়ে থেকেও স্বামী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেয়। আমাদের সমাজে অনেক নারীকে শত কাজ আর শত দুঃখকষ্টের মাঝেও, স্বামী-সন্তান, ঘর-সংসার দেখভাল করতে দেখা যায়। এমন কর্তব্য পালনে কোনোরকম কমতি দেখা যায় না। জ্ঞানীগুণীদের মতে এসব নারীই হচ্ছে, আমাদের সমাজের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার সেরা উপহার।

অপকারক:
সময়-সময় এর উপকারের বিপরীতে অপকারও দেখা যায়। দেখা যায়, অনেক মায়ের জাতি স্ত্রী (নারী)’রা থাকে নিজের সুখ আর স্বার্থ আদায়ের ধান্ধায়। নিজের সুখের কথা ভেবে সোনার সংসারে অনেক সময় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। একজন পুরুষের সহধর্মিণী হয়েও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরপুরুষের প্রেমের টানে নিজের গর্ভজাত সন্তানাদি ছেড়ে অন্যের ঘরে চলে যায়। অনেক সময় পরকীয়ার মরণব্যাধির কারণে অনেক স্থানে খুনখারাপি হয়ে থাকে। আবার অনেক স্ত্রী স্বামীকে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবেও মনে করে। (যেমন আগেকার সময়ে স্বামীরা স্ত্রীর গলায় রশি বেঁধে রাখতো, ঠিক তেমনভাবে এ যুগের কিছু কিছু নারীরাও নিজের স্বামীর গলায় রশি বেঁধে রাখতে চায়)। তাঁরা নিজের বিবাহিত স্বামীকে যখন-তখন আদেশ উপদেশ দিয়ে থাকে। যাকে বলা হয় হুকুম।

এইরূপ হুকুমের হেরফের কিছু হলেই, সংসারে লেগে যায় আগুন। শুরু হয় ভাংচুর, সাংসারিক কাজে অনীহা, সন্তানের প্রতি অবহেলা, শ্বশুর-শ্বাশুরির প্রতি করা হয় চরম বেয়াদবি। এসবের মূল কারণ হল, স্বামী থেকে নিজেকে বুদ্ধিমান মনে করা। এসব (স্ত্রী) নারীরা তাদের বিবাহিত স্বামীকে হুকুমের গোলাম হিসেবেই বেশি গণ্য করে থাকে। তাদের কাছে মনে হয় যে, এই স্বামী নামের প্রাণীগুলোকে যে-ভাবে খুশি সে-ভাবেই পোষ মানানো সম্ভব। এইরূপ অতি কুবুদ্ধি পূর্ণ স্ত্রীদের জ্ঞানী গুণীজন এই সমাজের ঝঞ্ঝাট মনে করে থাকে।

কারণঃ এরূপ নারীদের এরকম ব্যাবহারের ফলে স্বামী নামের একজন পুরুষ মানুষের সুন্দর মন-মানসিকতা নষ্ট হয়ে চরিত্রবান থেকে দুশ্চরিত্রবান লম্পট সেজে সমাজের আরও দশজনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার কোনোকোনো পুরুষ নিজের বিবাহিত স্ত্রীর জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করে ঠিক একটা গৃহপালিত পশুর মতনই সংসার জীবন চালিয়ে যায়। আবার কোনোকোনো জেদী পুরুষ ঐরকম স্ত্রীদের রাখে প্রহার ও মাইরের উপর।

অবহেলিত স্ত্রী (নারী):
বলা যায় বর্তমান সভ্যজগতে মায়ের জাতি নারীদের এখন জয়জয়কার সময়। তবুও অনেক স্থানে অনেক পুরুষেরা স্ত্রীদের দাসী হিসেবেই মনে করে থাকে। আমাদের দেশসহ অনেক দেশের অনেক স্থানে তাঁদের প্রাপ্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়। মাঝে-মাঝে যৌতুক আদায়ের জন্য অসহায় স্ত্রীদের ওপর সাঁড়াশি অভিযানও চালানো হয়। যৌতুক দিতে স্ত্রীর পরিবার থেকে অপারগতা প্রকাশে সইতে হয় নানারকম নির্যাতন। লোভী পুরুষেরা যৌতুক আদায়ে ব্যর্থ হয়ে, এক সময় মিথ্যে অপবাদ দিতে শুরু করে। এর ফলস্বরূপ অবলা নারীকে কলঙ্কের বোঝা মাথায় দিয়ে সংসার থেকেও বিতাড়িত করা হয়। এমনকি অনেক সময় অনেক স্থানে কাপুরুষ নামের জানোয়ারগুলো যৌতুক আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অবলা নারীদের নির্মমভাবে মেরেও ফেলে। কেউ এর সঠিক বিচার পায়, কেউ আবার পায়ও না। তবু থেমে নেই আমার মায়ের জাতি নারীদের পথচলা আর সংসার গড়া।

উপসংহার:
নারী বলতে পৃথিবীর অন্যতম প্রাণী মানুষের স্ত্রী-বাচকতা নির্দেশক রূপটিকে বোঝানো হলেও, সময় সময় এই স্ত্রীর (নারী) কারণেই অনেক সোনার সংসার ধ্বংস হয়ে যায়। মুহূর্তেই তছনছ হয়ে যায় কাঁচের স্বর্গ। তবুও এঁরা আমার মায়ের জাতি। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় তাঁদের নিয়ে সংসার গড়ি, সমাজ গড়ি।

দ্রষ্টব্য: এখানে মায়ের জাতি নারীকে ছোট করে দেখা হয়নি। ভুল হলে পোস্ট খানা মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

ছবিতে আমার সহধর্মিণী।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
স্ত্রী বন্দনা, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৮-০৬-২০২২ | ১২:১৬ |

    নারী বলতে পৃথিবীর অন্যতম প্রাণী মানুষের স্ত্রী-বাচকতা নির্দেশক রূপটিকে বোঝানো হয়েছে। এঁরা আমার মায়ের জাতি। আমরা যেন আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় তাঁদের নিয়ে সংসার গড়ি, সমাজ গড়ি।

    আপনার লিখনির অন্যতম শক্তি হচ্ছে, বাক্য-পাঠে বিষয়বস্তুর গভীরে তিল তিল বিবেচনায় শব্দ সম্ভার সাজানো। এমন ডিটেইলে খুব কম মানুষেই লিখেন বা ভাবেন। অনেক শুভ কামনা মি. নিতাই বাবু। বৌদির প্রতি শুভকামনা। ভালো থাকেন যেন তিনিও। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ০৯-০৬-২০২২ | ১২:১৬ |

      আপনার মূল্যবান মন্তব্যে আমার লেখা স্বার্থক হলো। 

      শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা। 

      GD Star Rating
      loading...
  2. ফয়জুল মহী : ০৮-০৬-২০২২ | ১৩:৪০ |

    লেখাটি পাঠে একরাশ মুগ্ধতা ।
    শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইল ।

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ০৯-০৬-২০২২ | ১২:১৬ |

      সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, প্রিয় দাদা। 

      GD Star Rating
      loading...