অনেক সময় দেখা যায় আমরা অনেকেই নিজেকে বীরপুরুষ, সিংহপুরুষ বলে দাবিও করে থাকি। কিন্তু যতই বীরপুরুষ আর সিংহপুরুষই হই-না-কেন, আমরা সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার পরে দুই রকমের বীরের কাছে সবসময়ই পরাস্ত। একটি হলো প্রাকৃতিক মৌসুমি বীর ‘শীত’। অপরটি হলো মশা বা মশক। তো মৌসুমি বীর শীত নিয়ে নাহয় অন্যদিন আলোচনা করবো। আজকে আলোচনা করছি মশা নিয়ে।
‘মশা’ হলো মহান স্রষ্টার সৃষ্টি এক ক্ষুদ্র প্রাণী। যার নাম ‘মশা’। এই মশাকে মহান স্রষ্টার নিজস্ব সৈনিকও বলা হয়। কেননা, খোদাদ্রোহী নমরুদকে ধ্বংস করার জন্যই নাকি এই ক্ষুদ্র প্রাণী মশার সৃষ্টি। যা ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়।
নমরুদ ছিলেন একসময়ের অত্যাচারী বাদশাহ। যিনি নিজেকে স্রষ্টা দাবি করতে পছন্দ করতেন। কিন্তু বাধ সাধে হযরত ইব্রাহিম (আ.)। যিনি ছিলেন মহান স্রষ্টার অনুসারী। নমরুদ তার মুল্লুকে থাকা জনসাধারণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আর অত্যাচার নির্যাতন করে নিজেকে একটু গুছিয়ে আনতে পারলেও, হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে কিছুতেই বশে আনতে পারছিলেন না। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-ছিলেন একনিষ্ঠ খোদা প্রেমী বা খোদা ভক্ত। এটা কিছুতেই অত্যাচারী নমরুদ সহ্য করতে পারছিলেন না। একবার হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে শাস্তিমূলক আগুনের কুণ্ডলীতেও ফেলেছিলেন, এই অত্যাচারী নমরুদ। কিন্তু মহান স্রষ্টার অশেষ কৃপায় আগুনের কুণ্ডলী থেকে হযরত ইব্রাহিম (আ.) অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসেন। এতে অত্যাচারী নমরুদ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর উপর আরও জ্বালাময়ী হয়ে উঠেন। তখন খোদা প্রেমী হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব হলো, খোদার সাথে যুদ্ধ করার ইচ্ছা প্রকাশ।
শেষপর্যন্ত তা-ই হলো। যুদ্ধের দিনক্ষণ ঠিক হলো। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, “তোমার খোদা থাকে কোথায়”?
হযরত ইব্রাহিম (আ.) বললেন, “আমার খোদা আসমানে থাকে”।
তারপর অত্যাচারী নমরুদ শয়তানের পরামর্শ নিয়ে আকাশে উঠার বুদ্ধি বের করলো। অবশ্য এর আগে অনেক উঁচু এক মিনার তৈরি করেছিলেন, নমরুদ। মিনারের উঁচু মাথায় উঠে আকাশের কূলকিনারা না পেয়ে সেই চেষ্টা বাতিল করে। একসময় নমরুদ কর্তৃক মিনারটিও ভেঙে পড়ে, মহান সৃষ্টিকর্তার ইশারায়। এবার শুরু হলো অত্যাচারী খোদাদ্রোহী নমরুদের ভিন্নরকম শয়তানি বুদ্ধি!
বুদ্ধি হলো চারটে শকুনের সাথে একটি বাক্স রশি দিয়ে বাঁধবে। তারপর নমরুদ বাক্সে উঠবে। আর শকুনের মাথার সামনে একটুকরো করে গোসত ঝুলিয়ে দিবে। এতে শকুনগুলো গোসতের লোভে সামনে এগুতে থাকবে, আর বাক্স সহ নমরুদ আকাশে উঠতে থাকবে। আকাশে উঠে খোদার সাথে যুদ্ধ করে আসার সময় শকুনের মাথার সামনে থাকা গোসতের টুকরোগুলো আবার শকুনের পায়ের নিচে বেধে দিবে। এতে শকুনগুলো গোসতের লোভে বাক্স সহ নমরুদকে নিয়ে নিচে নামতে থাকবে। এই হলো অত্যাচারী বাদশা নমরুদের শয়তানি বুদ্ধি। এমন যাত্রাও নমরুদের বিফল হয়।
অবশ্য শকুনের সাথে বাক্স বেধে নমরুদ আকাশে ঠিকই উঠেছিল। খোদাকে উদ্দেশ্য করে তীরও নিক্ষেপ করেছিল। (এই তীর নিক্ষেপ করা নিয়েও একটা কাহিনী আছে, তা আরেকটা লেখায় প্রকাশ করবো।) খোদাকে উদ্দেশ্য করে নমরুদ আকাশের উপরে তীর নিক্ষেপ করে যখন খুশিতে হাহা করে হাসতে ছিলো, তখনও খোদা প্রেমী হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর একই কথা, “আমার খোদাকে তুমি কোনও অবস্থাতেই মারতে পারবে না। আমার খোদা না থাকলে এই পৃথিবীর কিছুই থাকবে না। তুমিও না, আমিও না। চন্দ্রসূর্য, গ্রহতারকা, আকাশ বাতাস কিছুই থাকবে না।
কিন্তু অত্যাচারী নমরুদ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কথায় বিশ্বাসী নয়! নমরুদ খোদার সাথে ভুমিতে সামনাসামনি যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলো, “তোমার খোদার সৈন্য সংখ্যা কত? উত্তরে হযরত ইব্রাহিম (আ.) বললে, “তা আমার জানা নেই!”
তা জানা থাকুক আর না থাকুক, অত্যাচারী নমরুদ খোদার সাথে যুদ্ধ করবেই করবে।
এদিকে হযরত ইব্রাহিম (আ.) খোদার কাছে ফরিয়াদ করে বলতে লাগলো, “হে খোদা, তুমিই বলো–আমি এখন নমরুদকে কী বলতে পারি! নমরুদ তোমার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চায়”!
উত্তর এলো, “তুমি নমরুদকে বলো তাঁর সৈন্যদল নিয়ে তৈরি হতে। যুদ্ধ হবে খোলা মাঠে”।
তারিখও নির্ধারণ করা হলো।
একসময় অত্যাচারী নমরুদকে হযরত ইব্রাহিম (আ.)- বলে দিলে, “অমুক তারিখে আমার খোদা তোমার সাথে যুদ্ধ করবে। তা হবে বড় একটা খোলা মাঠে। তুমি তোমার সৈন্যদল নিয়ে তৈরি হও”।
অত্যাচারী নমরুদ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মুখে এই কথা শুনে দিনতারিখমত তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে এক খোলা মাঠে গিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিলো।
হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে বললো, “তোমার খোদার সৈন্য কোথায়? তাড়াতাড়ি আসতে বলো। আমি এবং আমার লালিত সৈন্যদল তোমার খোদার সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে আছি”।
এমন সময় মাঠের চারদিক কালো অন্ধকার নেমে আসতে লাগলো। নমরুদ ভাবতে লাগলো, হয়ত আকাশে মেঘ জমেছে। কিন্তু না, এই অন্ধকার আকাশের মেঘ নয়!
কালো অন্ধকারের সাথে বিকট শোঁ শোঁ শব্দ শুরু হয়ে গেলো। নমরুদের সৈন্যদল চোখে কিছু দেখতে-না-দেখতেই শুরু হয়ে গেলো কোটিকোটি মশার আক্রমণ। অত্যাচারী নমরুদের লক্ষলক্ষ সৈন্যের নাক, কান দিয়ে মশা মস্তকে ঢুকতে লাগলো। এভাবে অত্যাচারী নমরুদের সৈন্যবাহিনীর মস্তকে মশা ঢুকে, সৈন্যদের মাথার মস্তক খেয়ে খালি করে ফেললো। অনেক সৈন্য মশার ভয়ে পালাতে শুরু করে দিল। কিছু সৈন্য নমরুদের আশপাশে অবস্থান করছিল। যেহেতু নমরুদ ছিলেন একজন বাদশাহ, তাই।
খোদার প্রেরিত সৈন্যদের কমান্ডার ছিলো এক লেংড়া মশা। কমান্ডার লেংড়া মশা নমরুদের নাক দিয়ে মস্তকে ঢুকে কামড়াতে লাগলো। একপর্যায়ে মশার কামড় সহ্য করতে না পেরে অত্যাচারী নমরুদ অবশিষ্ট সৈন্যদের হুকুম দিলেন, তার মাথায় আঘাত করতে। সৈন্যবাহিনী তাদের পায়ের জুতা দিয়ে নমরুদের মাথায় আঘাতের পর আঘাত করতে লাগলো। মাথায় জুতার আঘাতে নমরুদের একটু শান্তি পেতো। মাথায় আঘাত করা থেমে গেলেই নমরুদের অশান্তি শুরু হতো। শুরু হয় মস্তিষ্কে মশার কামড়ের তীব্র যন্ত্রণা। আবার শুরু হয় নমরুদের মাথায় সৈন্যদের পায়ের জুতার আঘাত। এভাবে একসময় অত্যাচারী নমরুদ কমান্ডার লেংড়া মশার কামড়ে আর তার নিজস্ব সৈন্যবাহিনীর জুতার আঘাতে মৃত্যুবরণ করে। মশার কামড় হলো অত্যাচারী খোদাদ্রোহী নমরুদের পাপের শাস্তি।
এখন কথা হলো, মহান সৃষ্টিকর্তা সত্যি সত্যি যদি অত্যাচারী খোদাদ্রোহী নমরুদকে খতম করার জন্যই মশা এই পৃথিবীতে পাঠিয়ে থাকে, তাহলে সেই মশা এখন আমাদের দিনরাত ২৪ ঘণ্টা আক্রমণ করছে কেন? এতে কী বোঝা যাচ্ছে? এতে বোঝা যাচ্ছে, বর্তমান বিশ্বের আমরা সকল মানুষই এখন খোদাদ্রোহী নমরুদ?
হ্যাঁ অবশ্যই অবশ্যই আমরা খোদাদ্রোহী নমরুদ! কারণ মহান সৃষ্টিকর্তা হয়তো আগেই জানতেন যে, এই নমরুদের মতো চলমান পৃথিবীতে আরও আরও নমরুদ পয়দা হবে। যার কারণে মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টি মশার ডিউটি শেষ হবার পরও নমরুদ সম আমাদের জন্যই মশা এই পৃথিবীতে রেখে দিয়েছিল। যতদিন না আমরা সত্যিকারের মানুষ না হতো পারবো, ততদিন খোদার সৈনিক মশা আমাদের সেই খোদাদ্রোহী নমরুদ মনে করে আমাদের আক্রমণ করবেই। কারণ বর্তমানে আমরা ঐ নমরুদের চেয়েও কুখ্যাত নমরুদ।
বি:দ্র: লেখায় কোনও অসংগতি প্রকাশ পেলে সমালোচনা না করে মন্তব্যের বাক্সে গঠনমূলক মন্তব্যের মাধ্যমে জানালে কৃতার্থ থাকবো।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ।
loading...
loading...
খোদাদ্রোহী নমরুদকে ধ্বংস করার জন্যই নাকি এই ক্ষুদ্র প্রাণী মশার সৃষ্টি। যা ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়। _এখানেে “নাকি” লিখে আপনি এই ধ্রুব সত্যকে খাটো করেছেন। ভালো হবে নিজ ধর্ম নিয়ে লিখুন আমরা জানতে পারবো কিছু।
মহান সৃষ্টিকর্তা সত্যি সত্যি যদি অত্যাচারী খোদাদ্রোহী নমরুদকে খতম করার জন্যই মশা এই পৃথিবীতে পাঠিয়ে থাকে l সত্যিই সত্যিই নয় শতভাগ সত্য। যে কোনো মুসলিম কোরান মানলে এইটা মানতেই হথে। প্লিজ দাদা স্টপ
loading...
হ্যাঁ, আপনি বলুন, "এটা সত্য! আমি নাকি লিখেছি এই কারণে যে, আমি আপনার ধর্মের অনুসারী নই দাদা, তাই। সত্য-মিথ্যা তো আপনি প্রমাণ করবেন, করছেনও। তাহলে আমিতো ভুল কিছু লিখিনি মনেহয়, দাদা। যদি পৃথিবীতে মশা আসার এই কাহিনি মিথ্যে হয়, তাহলে বলুন, আমি আমার লেখাটা উঠিয়ে নিবো।
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
loading...
আমরা খোদাদ্রোহী নমরুদ হতে চাই না। অথবা তার অনুসারীও হতে চাই না।
যতদিন না আমরা সত্যিকারের মানুষ না হতে পারবো, ততদিন খোদার গজব আমাদের আক্রমণ করবেই। কারণ বর্তমানের আমরা ঐ নমরুদের চেয়েও কুখ্যাত। হয়তো।
loading...
হ্যাঁ দাদা, এটাই বাস্তব কথা। আপনার মন্তব্যের শেষাংশের কথা আমি আমার লেখার শেষাংশে প্রকাশ করছি, দাদা।
শুভকামনা থাকলো দাদা। আশা করি ভালো থাকবেন নিশ্চয়!
loading...