বুক সেলফ-এ দাঁড়িয়ে আছে সারি বদ্ধ বই
মলাটে মলাটে বাঁধানো নৈবেদ্য, স্বপ্ন থই থই
দাঁড়িয়ে আছে একে অপরের বুকে
তাঁকে তাঁকে একে অন্যের পিঠে হেলান দিয়ে
রবীন্দ্রনাথের লম্বা সারির পর শরৎচন্দ্রের ভারী ভারী গ্রন্থ
নজরুল, বঙ্কিমের সাথে রয়েছে মধু সূদন দত্ত
রয়েছে তারা শংকর, সুনীল, শীর্ষেন্দুর মস্ত মস্ত সৃষ্টি
বৃষ্টি আর জোছনা বিলাস নিয়ে অনেকটা স্থান দখল করেছে ‘হিমু’র জনক
এর্নেস্তো কার্দেনালের কবিতার সাথে লেপটে আছে নেরুদার প্রেমের স্তবক
হেমলেটের স্রষ্টা বসে আছে ফিনল্যান্ডের কবি এডিথ স্যোডেরগ্রান-এর সাথে
বাংলার শামসুর রাহমান হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে স্বাধীনতা তুমি’র আলোয়
প্রলয়ের স্রোতে যায়নি ভেসে সব্যসাচী হকের প্রত্যয়; বুকে অসীম ক্ষত নিয়ে
হেনরিক হাইনের কবিতারা উদ্ভাসিত হুমায়ূন আজাদের হাতে; প্রমত্তা নদীর মত
বই গুলো সর্বদা জাগ্রত, অবিরাম ধ্বনি তোলে চেতনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে
কখনো জীবনানন্দ, কখনো জসীম উদ্দিন অথবা মায়কোভস্কি’র কবিতা ময় সন্ধ্যে
রাতের শেষ শশীতে ভালবাসি কোরানের মর্মবাণীতে ডুবতে, চুপি চুপি খবর নেয়
রিয়াদুস সালেহীন আমি কেমন আছি জানতে; আলোর কুপির মত
ধ্রুব কিরণ দিয়ে যায় শেখ সাদী আর রুমীর মসনবি সমগ্র, অন্তরে অভ্যন্তরে
অনন্ত প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ে, চোখ জলে ভেজা সেঁতসেঁতে নবীজীর জীবনীতে…
বেড়ে যায় প্রাণের আকুতি, প্রশান্ত মন বিনম্র চিত্তে!
সেই পথে যেতে যেতে খুঁজে পাই এক একটি মহা জীবনের শিরস্ত্রাণ
যুগে যুগে কালে কালে যাদের আগমনে ধন্য হয়েছে পৃথিবী- মানব জন্মস্থান;
এক প্রান্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান অন্য প্রান্তে নেলসন ম্যান্ডেলা
ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যারা ভালোবেসেছে মানুষ – সারা জীবন সয়েছে জ্বালা!
আমার বুক সেলফে সারি সারি সাজানো আছে সে সব গ্রন্থ- জীবনী
অসহায় মুহূর্তে ছুটে যাই তাদের কাছে, তাদের সৃষ্টির কাছে- খুঁজি বিশুদ্ধ বানী!
কত প্রেম, কত দহন কত শত হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণ
সমুদ্র মন্থনের মত রুদ্রের কবিতা আমাকে টানে ভীষণ;
থেমে নেই হেলাল হাফিজ, নির্মলেন্দু গুণ; রফিক আজাদ, শহীদ কাদেরীরাও
উজ্জ্বল করে আছে যার যার আসন। দ্বিধা- বাঁধা ভেদ করে জাতি সত্তায় মিশেছে নরুল হুদা
প্রজন্মের কবিরাও রয়েছে সাথে সালেক নাছিরের পদাবলীর যাত্রায়, লিটল ম্যাগে অপ্রকাশিত আবেগে…
রয়েছে মাসুদ রানা, রাকিব হাসান আর কাজী আনোয়ার
সেই সাথে ডেল কার্নেগী, মহাজাতকের সম্ভাবনার নতুন দ্বার
আছে মাক্সিম গোর্কি, ফেলুদা সম্ভার
আনিসুজ্জামান, আবু সাঈদ স্যার এর লিখায় পথ চলেছি দুর্বার!
রক্তে বাজে অগ্নিবীন, শোণিতের স্রোতে দ্রোহের উত্তাল
হাতে নিলে নীলিমা ইব্রাহীম, রোকেয়া বেগম অথবা সুফিয়া কামাল;
জ্ঞানে –বিজ্ঞানে মন কাড়ে জাফর ইকবাল,আহসান হাবিব
পোড়ে হৃদয় তারা শংকরের দাত্রী দেবতায়, চুম্বকের মত টানে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
ইমদাদুল হক মিলনের নূরজাহান; কত শত বেদনায় ডাকছে আনিসুল হকে মা প্রতিটি সন্ধ্যায়
কত পথ কত জঞ্জাল পেরিয়ে খুঁজে পাই মহাদেব সাহার নির্জন মৌন পাহাড়
অবিশ্রান্তির নিবিড়ে জয় গোস্বামীর উজাড় প্রেম, খুঁজে পাই নিজেকে
স্বকৃত নোমানের কালকেউটের সুখে,
পুস্তকের পাতায় পাতায়… মিশে থাকা স্মৃতি, আকুতি, প্রাণের স্পন্দন
আমি সব খুঁজে পাই প্রতিদিন – প্রতি ছোঁয়াতে
খুঁজে পাই কবিকে, কবির আত্মাকে; গল্পের বাঁকে বাঁকে,ইতিহাসের পরতে পরতে…
ওদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই
এক একটি বই- এক একটি নক্ষত্র! এক একটি আলোকবর্তিকা!
তাপে উত্তাপে আমার নিঃসঙ্গতা ঘুচিয়ে এঁকে দেয় নিবিড় সন্তাপে
কখনো প্রিয়তমা, কখনো গুরুদৃষ্টি আবার কখনো স্রেফ নির্ভার সহচর
ওরা ঘিরে থাকে আমার আষ্টেপৃষ্ঠে… হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে
সঙ্গ সুধার মত অবিরাম আগলে রাখে, খেয়াল রাখে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে।
loading...
loading...
উত্তাপে আমার নিঃসঙ্গতা ঘুচিয়ে এঁকে দেয় নিবিড় সন্তাপে
কখনো প্রিয়তমা, কখনো গুরুদৃষ্টি আবার কখনো স্রেফ নির্ভার সহচর
ওরা ঘিরে থাকে আমার আষ্টেপৃষ্ঠে… হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে
সঙ্গ সুধার মত অবিরাম আগলে রাখে, খেয়াল রাখে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে।
loading...