(শুরু করেছি ভারত – বাংলাদেশ – পাকিস্তানের ময়নাতদন্তমূলক নিবন্ধ “এদেশ ওদেশ”। লেখাটি আগে একটি কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু আমার মনে হয় ২০১৫ সালে লেখা এই নিবন্ধ এখনো প্রাসঙ্গিক। আজ চতুর্থ পর্ব।)
দুই দেশেই প্রথম দিকে মৌলবাদকে মদত দিয়েছিল শাসকগোষ্ঠী। পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল উপনিবেশ পূর্বঅংশকে তাঁবে রাখা, আর এপারে ভোটের রাজনীতি। ফলে উত্তর বা পশ্চিমের পাক অঞ্চলে বিষবৃক্ষ হয়ে বাড়ছিল উগ্রবাদ। ভারতের পূর্বাঞ্চলে।
নিরীহ বাঙালি বহুদিন চুপ করেই ছিল। আগেই বলেছি, ভাষাআন্দোলনের মত কিছু অরাজনৈতিক ক্ষোভ ছাড়া তারা মোটামুটি মেনেই নিয়েছিল বঞ্চনার ইতিবৃত্ত। তলেতলে ক্ষোভ দানা বেঁধেছিল কিন্তু বিস্ফোরণের স্তরে পৌঁছে যায়নি।
সেই ৪৭ এ অনেক স্বপ্ন দেখেছিল মানুষ। ভেবেছিল ইংরেজ গেলে স্বর্গরাজ্য হবে। প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা ছুটেছিল। মানুষকে বোঝানো হয়েছিল স্বাধীনতা মানেই দুর্নীতির অবসান, স্বাধীনতা মানেই দারিদ্র্য মুক্তি।
অথচ বাস্তবে দেখা গেল, ইংরেজ আমলে তাদের চাটুকারবৃত্তি করে যারা রীতিমতো পরাক্রমশালী আর ধনশালী হয়ে উঠেছিল, তারাই মাছির মত শাসন মধুর চারপাশে ভীড় জমালো। আর আশ্চর্যজনক ভাবে তারাই ক্ষমতার চাবিকাঠি পেতে শুরু করল।
এতে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের আখেরে লাভ হলেও দ্রুত বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে শুরু করল শাসক দলগুলো। একের পর এক দুর্নীতির ছবি ফাঁস হয়ে যাচ্ছিল। এপারে জীপ কেলেংকারীর দায়ে পদত্যাগ করলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কৃষ্ণমেনন। বিশ্বাস হারিয়ে মানুষ খুঁজতে লাগলো বিকল্প।
প্রশাসনিক স্তর ক্রমশঃ আমলা নির্ভর হয়ে উঠলো। আর যেহেতু শীর্ষ আমলারা প্রায় সকলেই সমাজের উচ্চশ্রেণীর তাই স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছিল তাদেরই। মধ্যবিত্ত উচ্চের পদলেহন করে উপরে ওঠার মসৃণ চেষ্টা একমনে করছিল। আর নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র আর দরিদ্রেতর অসহনীয় যন্ত্রণায় দিনাতিপাত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছিল।
এর মধ্যেই ছোটোখাটো ইস্যু থেকে জ্বলে উঠছিল আগুন। দাবানলের শক্তি কব্জা করে ছড়িয়ে পড়ছিল। অভুক্ত মানুষ সামিল হচ্ছিল তেভাগা আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন, এক পয়সার ট্রাম ভাড়া বৃদ্ধির আন্দোলনে।
এর মধ্যেই নরমপন্থী কংগ্রেসের দিক থেকে মানুষ ঝুঁকে পড়ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর দলগুলোর দিকে। এদের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি বেড়ে উঠছিল তরতর করে। নীচুতলার সমাজ থেকে উঠে আসা কিছু যুবক যুবতী সমাজ পাল্টে বিভেদ অবসানের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। অন্যদিকে বিষগাছের মত সংগোপনে ছড়াচ্ছিল ধর্মের নামে বেসাতি করা মৌলবাদের শিকড়।
একটা সময় এল, যখন আম মানুষ কংগ্রেসের নামই শুনতে চাইত না। তবুও ভিভিআইপিদের বিভিন্ন দেবস্থানে ভোট নদী পার হওয়ার জন্য মাথা ঠোকার ছবি ফলাও করে খবরের কাগজে ছাপা হলেই সবাই হুমড়ি খেয়ে দেখত, কারন ভেতরে ছিল আজন্মলালিত হাজার কুসংস্কার। আর দুর্নীতির দুর্গন্ধ আড়াল করতে নেতারাও বেশী করে প্রচারের শিরোনামে থাকার জন্য এরকম ছবির পোজ দিতে লাগলো।
(ফের আগামীকাল)
loading...
loading...
নীচুতলার সমাজ থেকে উঠে আসা কিছু যুবক যুবতী সমাজ পাল্টে বিভেদ অবসানের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। অন্যদিকে বিষগাছের মত সংগোপনে ছড়াচ্ছিল ধর্মের নামে বেসাতি করা মৌলবাদের শিকড়।
loading...