আমরা সব একা ফুল। আবার কোনও ফুল সঙ্গে আনে সুতোও।
স্কুলযুগের শেষকালে আমি এক রাজনৈতিক মতবাদ মিক্সড উইথ চিন্তাধারা-র ‘ছোঁয়া’-য় পড়েছিলাম। ছোঁয়া প্রথমে ছদ্মবেশে সাহিত্য-সমালোচনার সরু লাইন ধরে এগোল, তারপর বিজ্ঞান-দর্শন-অর্থনীতি করতে করতে হঠাৎ তুলে দিল সব পর্দা-হ্যায়-পর্দা: এতদিন তোমাকে যা বলেছি, সব দলের তত্ত্ব। ঠিক মনে হচ্ছে তো আমাদের পার্টি জয়েন করো।
চিরকালের অসৎ, ভিতু, ফাঁকিবাজ ছেলেটি পলায়ন করে। সে বড় হয়, চাকরি আসে, সংসারধারণ, কিন্তু সেই ছোঁয়া একইরকম ছিল — রোগা, কালো, চোখের জায়গায় কাদামাটিতে দুটো মার্বেল-গুলি বসানো — মা দুর্গার সিংহ যেন।
খবর পেতাম, স্পর্শ আবার নতুন কিছু ছেলে ধরেছে, যাতায়াত করছে অন্য কোনও স্কুল কি কলেজে। অভ্যস্ত প্রেমিক যেভাবে প্রত্যেক সঙ্গিনীর একই আদরের নাম রাখে, ছোঁয়া তার পূর্বোক্ত স্কিম নিয়ে ফিরফিরতি এগোতো পা টিপে টিপে…শুধু এইটুকু আবিষ্কার করার জন্যে যে জাল ফুটো ক’রে “পক্ষী উড়িয়া পলায়”।
কমিউনে তার সামান্য বিছানার কোনে বসে জিগ্যেস করেছি, শংকরদা, (স্পর্শ বা ছোঁয়ার আর এক নাম শংকর ঘোষ) আপনার স্বপ্ন তো সফল হওয়ার নয়। তবু কীসের আশায় লেগে থাকেন? বিষণ্ণ এক ভালোবাসার হাসি হাসতেন: একটাই তো জীবন। নয় ভুল আদর্শের পেছনেই বইয়ে দিলাম!
এখন ভাবি, মতাদর্শ মানুষের তৈরি, তার ভুল বা ঠিক হয় না, হয় মানুষের। তাই একই কথা আমি বললে ভস্ম, তুমি উচ্চারণ করলে ভাস্বর!
তো ভাস্বরের সঙ্গে আমার দ্বিতীয় জন্মের দেখা হল আলোকিত কোম্পানি বাগানে, যার চেনা নাম কলকাতা বইমেলা। দেখি একটা ফুল সুতো হাতে ঘুরছে, মালা তৈরির নেশায়। আলাপ হয়, ঠিক তেমনই ঝাঁকুনি দিয়ে হাত আঁকড়ে ধরা, আমার অবাক লাগে! কালো নয়, রোগাও নয়, তাহলে কে… কে আবার, বারীন ঘোষাল — পাশ থেকে বন্ধু বলে দেয়। আমি এতক্ষণে মুখের দিকে তাকিয়েছি — চোখের কাদামাটিতে গাঁথা দুটো মার্বেল-গুলি, মা দুর্গার সিংহ যেরকম।
loading...
loading...
শুভেচ্ছা জানবেন প্রিয় কবি প্রিয় চন্দন ভট্টাচার্য দা।
loading...