প্রথম চিঠি (অণু গল্প)

2021

এক এক করে পুরাতন সব বন্ধুদের সাথে দেখা হলো কিন্তু মিথিলার কোনো খবর পেলাম না। কাউকে জিজ্ঞাসাও করতে পারছি না লজ্জার কারণে। অথচ মন উতলা তাকে দেখার জন্য, তাই অবিরত তাকেই খুজছি।
মন খারাপ কেনো। মুচকি হেসে ফারজানা প্রশ্ন করে।
মনের ভিতর শীত শীত লাগছে তাই হাঃ হাঃ হাঃ।
লাগারই কথা মিথিলা আসে নাই তাই। তুই তার সাথে দেখা করতে এসেছিস, আমার মনে হয়।
না ফারজানা,আমি তোদের সবার সাথে দেখা করতে এসেছি। তবে মিথিলাকে ফেলে আরো ভালো লাগতো ঠিক আছে অন্যদিন দেখা হলে তাকে বলবো।
না থাক, বলতে হবে না ফারজানা।

শীতের শিশিরসিক্ত সোনালী সকাল। কলেজ মাঠে ছোট ছোট দলবদ্ধ হয়ে ছাত্ররা আলাপচারিতায় ব্যস্ত। নবীনদের পদচারণায় মুখরিত কলেজ ক্যাম্পাস। আমি অন্য কলেজ হতে গিয়েছি পুরাতন সহপাঠীদের সাথে দেখা করার জন্য এবং মিথিলার দেখাও পাওয়ার আশা ছিলো। ফাইনাল পরীক্ষার পর আর কোনো দিন দেখা হয়নি তার সাথে। ফল প্রকাশ হলো কলেজে ভর্তি শুরু হলো অথচ মিথিলার কোনো খবর পেলাম না অদ্যাবধি, তাই মনটা উতলা।

প্রেম ভালোবাসার অনেক রকম ভেদ হয়। মুখ ফুটে বলতে পারিনি ”তোমাকে ভালবাসি“ অথচ তার নামে পুজা সাজাই। স্বাধীনতার অভাব, সাহসের অভাব, প্রতি উত্তর শুনার পর মানসিক শক্তির অভাব। এইসব অভাব এসে মিলিত হয়েছে সময়ের সাথে। এই অভাবগুলি আজ মিথিলাকে করেছে আরব দেশের প্রিন্সেস আর আমি হয়েছি দরিদ্র দেশের খেটে খাওয়া আজনবী।

চল এক আত্মীয়ের বাসায় যাবো।
রাতুলের কথায় রাজি হয়ে আমি তার পিছু নিই। চিকণ সরু ডাকবাংলা রোড়ে টিন চালা ঘরটিতে রায়হানের আত্মীয় বাস করে। ওটা আবার মিথিলার আপন খালার বাসা আমার জানা ছিলো না। লাল টক টকে রুহ আফজাহ শরবতে চুমুক দেওয়ার পর রায়হান হাসি মুখে এই বার্তা আমার কানে ফিসফিস করে বলে। দপ করে হৃদয় নেচে উঠে, ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের এই ছোট শহরকে ভালোবাসার কানন মন হলো। শমসের গাজীর ছাগল কাহিনী হতে যে ছাগলনাইয়া শহরের নাম হয়ে ছিলো তা সেকাল এর মনে হলো। টেবিলের উপর ছোট বাচ্চার এলোমেলো বই খাতা, একটা খাতার উপর পাতায় টুপ করে আমার ঠিকানাটা লিখে ফেললাম। লিখে দিলাম দুই লাইন কবিতা।

চিঠি দিও মিথিলা,
কথা আছে শত বেলার।

ডাকবাংলার এই রাস্তায় বড় একটা আম গাছের নিচে জরাজীর্ণ পোষ্ট অফিস। আমার লিখা ঠিকানা মিথিলার চোখে পড়লেই হলুদ খাম দুই টাকার টিকেটে ভর করে এই পোষ্ট অফিস হতে উঠবে আমার নামে। ভাবতেই কেমন যেনো শিহরিত হলো মন প্রাণ তাই একটা উড়ন্ত চুমা ছুড়ে দিলাম পোষ্ট অফিসের দিকে। শহরের উত্তরে সবুজ শ্যামল গ্রামের নাম আন্ধার মানিক। গ্রামের রাস্তার দু’ধারে বড় বড় তাল গাছ, একটা রাস্তা সোজা ত্রিপুরার দিকে চলে গিয়েছে। অর্ধেক ভারতে এবং অর্ধেক বাংলাদেশে বিখ্যাত এক মাজার আছে এইখানে, যা দুই দেশের মানুষের কাছে মানত করার জন্য প্রসিদ্ধ স্থান। এইসব ভাবতে ভাবতে কলেজে ফিরে এসে রাতুলকে মন থেকে ধন্যবাদ দিলাম। আরো ধন্যবাদ দিতে মন চাইলো রাতুল কথাটা অন্য কাউকে বলেতেছে না দেখে।

সপ্তাহ চলে গিয়ে পক্ষে পড়লো মিথিলার চিঠির কোনো খবর নাই। মনে হয় আমার ঠিকানা তার চোখে পড়েনি। তাদের কলেজে যেতেও আর মন চাইতেছে না কারণ তার দেখা যদি না মিলে। ভাবনা কখনো আমাকে আসমানে চড়ায় আবার কখনো পাতালে। রোজ রোজ গিয়ে দেখে আসি কলমা পট্টির সেই ঠিকানা নির্ভুল কিনা। এমনই চলতে চলতে আসলো মিথিলার প্রথম চিঠি।
প্রিয় কৌশিক
——————-
——————-
ইতি মিথিলা।

বিঃদ্রঃ সম্ভব হলে আমার কলেজে আসিও কথা হবে। হলুদ খাম পেয়ে আমি যেমন ভরা জোছনার চাঁদ পেলাম তেমনি চিঠি পড়তে গিয়ে চাঁদহীন অন্ধকার রাত পেলাম।পুরো পৃষ্ঠায় প্রিয় আর ইতি এবং বিশেষ দ্রষ্টব্য।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ১টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. আলমগীর সরকার লিটন : ১৪-০৬-২০২১ | ১১:৪৪ |

    খুব সুন্দর লাগল মিথিলা গল্প মহী দা

    GD Star Rating
    loading...
    • ফয়জুল মহী : ১৫-০৬-২০২১ | ১:৪২ |

      Thank you dear brother for comment 

      GD Star Rating
      loading...
  2. মুরুব্বী : ১৫-০৬-২০২১ | ১৪:১০ |

    অসামান্য একটি লিখা উপহার দিয়েছেন মি. ফয়জুল মহী। সুন্দর। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
  3. নিতাই বাবু : ১৫-০৬-২০২১ | ২০:৩০ |

    আপনার প্রথম চিঠি ( অণু গল্প) পড়ে এক সময়ের  নিজের প্রেমের কথা মনে পড়ে গেল। ঠিক এমনই ছিলো আমাদের প্রেমপত্র। 

    শুভকামনা থাকলো দাদা। 

    GD Star Rating
    loading...