অন্ধকার সময় সম্পর্কে আন্দাজ ছিল, ইতিহাসের পাতায় যুদ্ধ, মহামারী অনেক পড়েছি। পড়ে ধারণা হয়েছিল অন্ধকার সময় এমন হয়, কিন্তু সত্যিকার অন্ধকারের মুখোমুখি হয়ে ইতিহাসের অন্ধকার সময়কে রূপকথা মনে হচ্ছে।
বিশ্বাস করুন এর চেয়ে অন্ধকার পৃথিবীতে আগে আসেনি। মৃতের বিছানার পাশে কেউ নাই। মৃতের শেষকৃত্যে কেউ নাই। চিতা একা একা জ্বলে যাচ্ছে, কেউ নাই শেষ মুহূর্তে এক মুঠো ধূপ ছুড়ে দেবে।
ভোরের সূর্য প্রতিদিন পুবাকাশে উঁকি দিচ্ছে ঠিকই আকাশের অন্ধকার কিন্তু তিরোহিত হচ্ছে না, মানুষ ভুলে গেছে সূর্যের সখ্যতা। ঘরের দরজা খুলতে ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে মানুষ, ঘরের জানালায় পড়েছে চিরস্থায়ী খিল।
অপেক্ষায় মানুষের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স, কবর খুঁড়তে খুঁড়তে ক্লান্ত গোরখাদক। কাঁদতে কাঁদতে শুকিয়ে গেছে চোখের জল, স্বজনের বেদনায় বুকের পাথরের ওজন ক্রমেই ভারি হচ্ছে। অদৃশ্য শত্রু করোনা লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে পরিচিত জনপদ। মানুষের দূরত্ব ছ’ফুট ছাড়িয়ে ছ’শ ফুটের অধিক হয়ে গেছে। মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস তলানিতে ঠেকেছে। জন্মদাতা পিতা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, সন্তান মৃত্যু পথযাত্রী পিতার মুখে এক ফোটা জল ঢেলে দিতে ভয় পাচ্ছে। মমতাময়ী মায়ের হাত কাঁপছে, জ্বরে কাবু সন্তানের কপালে জলপট্টি দিতে গিয়ে ভয়ে শিউরে উঠছে।
মানুষ প্রাণপণে সাঁতরাচ্ছে, অন্ধকার জলে সাঁতরাতে সাঁতরাতে মানুষ তলিয়ে যাচ্ছে। মানুষ সুরঙ্গ খুঁড়ছে, আলোর প্রত্যাশী মানুষ সুরঙ্গের অন্ধকারে লাশ হচ্ছে। তাদের প্রাণের আকুতি কেউ শুনতে পারছে না, শুনলেও আলো হাতে কেউ এগিয়ে আসছে না।
ইতিহাসে অন্ধকার থাকে, ইতিহাসের অন্ধকার পড়ে মানুষ ব্যথিত হয় কিন্তু বাস্তবের অন্ধকারে ব্যথা, বেদনা থাকে না, থাকে হাজার, লক্ষ লাশের সারি। মানুষের লাশে চাপা পড়ে আছি, কে সরাবে লাশ! কে উদ্ধার করবে!
loading...
loading...
একটি নিরাপদ সকালের অপেক্ষায় আজও আছি। থাকি।
loading...
চমৎকার অনুভূতির প্রকাশ।
loading...