আমি দেখেছি স্রোতে ভাসা শ্যাওলা
কচুরিপানার যাযাবর জীবন,
বালুকাবেলায় একলা দাঁড়িয়ে —–
দেখেছি জীবন সমুদ্র :
আমি বসে আছি সেই
পুরোনো কফিশপের কর্ণারের টেবিলে,
তুমি আমার উল্টো দিকে
ভীষণ অস্থিরতায় ভূগছো-
হয়তো কার ও অপেক্ষায় —–
আমি একা —
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই,
এক নিঃশব্দ আঁধারের বুকে আমি
ডুবে আছি,
সমুদ্র উন্মাতাল আমারই দৃষ্টি ছুঁয়ে
জলের গভীরে,
উন্মত্ত হাওয়া বইছে
রাত বাড়তে থাকে,
আমি বেঁচে আছি এক রকম
বলতেই হবে ;
কিছুক্ষণ আর তোমার দিকে আমার মন নেই,
সমুদ্র নিয়ে ভাবছি
হঠাৎ অজানা সুন্দরীর কটাক্ষ কিংবা
লাস্যময়ীর কফিশপ কাঁপানো
অট্টহাসিতে আমি চমকে উঠলাম,
যেন রাতের চাঁদটা তোমার পাশে
নেমে এসেছে —
চাঁদ আর ঐ লাস্যময়ী মুখটা একাকার
সে এক নরম সুন্দরী,
যার নরম তুলতুলে রক্তাত্ত শরীর,
টিপ দিলে রক্ত ছুটবে,
অহঙ্কারে মেয়েটি সোজা হয়ে দাঁড়াতে
পারছে না,
আর আমি
ক্রমাগত এক সমুদ্র বিষণ্নতায়
ডুবে যাচ্ছি,
জানতাম আমার এভাবেই মৃত্যু হবে,
বড় কঠিন সে মৃত্যু যন্ত্রণা
বেঁচে থেকেও মরে যাওয়া
এর নাম মৃত্যু —–!
আমি ভীরু হরিণীর মতো নিজেকে
গুটিয়ে নিয়েছি শামুকের মোড়কে —– !
পৃথিবীর সমস্ত আকাশ আজ থমথমে
নীল-
গাঢ় স্তব্ধতার কঠিন অন্ধকারে ঢেকে গেছে
রাত্রিবেলা,
আমি রাত্রির গভীরতায় তলিয়ে যাচ্ছি
ক্রমশই;
আমি যাচ্ছি,
আমি যাব
চিরকাল
মৃত্যুর কাছে যে আমার অপেক্ষা রয়েছে,
মেয়েটির মার্বেল মার্কা দু’টি চোখ,
স্বপ্নের মতোই দেখতে লাগছে,
আর দু’ ঠোঁটের ভাঁজে হাসিতে
সুচিহ্নিত গোপন শিশির মুক্তা ধরে
আছে,
মেয়েটির উগ্রতা আর প্রসাধনের মধ্যে তুমি
কেবলই ডুবে যাচ্ছিলে,
নারীর যৌবনের খাপ ছাড়া তলোয়ারের মতোই-
রাত্রিবেলা কফিশপে নীল, নিয়ন বাতি
জ্বলছে
সাথে চমৎকার সুরের মূর্ছনা —–
আমি বিশুদ্ধ বিশ্বাস পান করছি বসে বসে,
তুমি মেয়েটির হাত ধরে আমার টেবিলে
আমি তখন প্রচন্ড সূর্যের দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছি,
অথচ তখন রাত্রিবেলা:
দিনের ক্লান্তি শেষে
রাত্রির নিবিড়তায় আমিও বড় বেশি ক্লান্ত,
হঠাৎ যেভাবে একদিন এসেছিলে,
আবার আমার আকাশ গাঢ় নীলিমায় ঢেকে চলে গেলে,
মানুষের মন তো !
খেয়ালী হয় এমন,
আজ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
পথ গেছে দু’ দিকে বেঁকে,
কতটা অভিমানে ভিজছি আমি…
জানি আর কাছে এসে এ চোখের
বেদনার — মেঘ জল মুছে দিয়ে
বলবে না কখনোই —–
দূর ..! অযথাই সমুদ্রে বৃষ্টি পাত হচ্ছে,
এতো নরম তুলতুলে গালে ;
গোলাপ বাগানে
সারা রাত্রি জেগে জেগে শিশির ঝরছে,
এ রাত্রির আহবান কান্নার মতোই লাগছে,
কেন কাঁদছ?
আমি তো আছি,
যাইনি কোথাও — —–
এ সত্যিই !
আমায় ছুঁয়ে দেখো —
এসো আমরা অবরুদ্ধ সমুদ্রের বুকে
বরফ কুচি ভাঙ্গি —
মানুষের মন তো বিচিত্র কিছুই নয়,
রাত্রি ও স্তব্ধতা এক নয়
নিঃসঙ্গতা ও একাকীর মতো ও নয়,
ও আমার বান্ধবী,
ভালবাসার দাবিদার তো নয়
আমাদের ভালবাসা সাদা বিছানায়
ঘন নীল ঘুমে,
কখনই না,
অরণ্যের কিছু পাখি উড়ে এসেছে
রাত্রির ডানায়,
রাত্রি ডুবে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রের বুকে,
আমি তখন লুকায়িত সমুদ্রের কান্না দেখি—
কিছুক্ষণ পরেই দেখি দৃশ্য বদলে যাচ্ছে
এক এক করে,
তোমার নরম মাখনের মতো প্রিয় বান্ধবীটি
এক ঝাঁক যুবকের সাথে নৃত্য করছে
কফি বারে —
আমার দৃষ্টি প্রসারিত হয়ে উঠল,
মেয়েটি সাদা গাউন পরে নৃত্য করছে
মেয়েটি খুব কৌশলী ও জটিল,
অনেকটা দূর্বোধ্য কবিতার মতোই —
তুমি আঙুর লতা বাগানের উপচে পড়া
শিশির স্নানে ভিজতে ভিজতে বললে,
ও পর্দার ওপাশে আড়ালের মেয়ে
অরুন্ধতী সেন :
আজ আরও গাঢ় হওয়ার কথা
শব্দ আর পাতাদের ..।
মনে আছে তুমি ‘ এক গুচ্ছ পাতা বাহার
স্বপ্ন সাজিয়ে নিয়ে,
মনের গভীরে–
এসেছিলে বেলা শেষে শেষ বিকেলে – ?
বিশ্বাস করো,
এখন ও প্রত্যেকটা দিন নতুন
ভাবে শুরু হয় —-
প্রত্যেকটা দিনের গল্প
আলাদা –
তুমি আমার ভোরের আলো,
প্রতিটি সোনালি ভোরের ডানায় ভর করে
আমি তোমার সাথে,
শুদ্ধ আগামীর বুকে হেঁটে যাব,
আবার এমন রাত্রি কবে আসবে ?
loading...
loading...
চমৎকার লেখেছেন কবি আপু
loading...
দীর্ঘ কবিতায়, কবিতার মেজাজ ধরে রাখা ভীষণ কঠিন এবং দূরহ কাজগুলোর মধ্যে একটি, এটি আমি স্বীকার করি। আপনি সেই অসাধ্যকে বারবার জয় করেছেন কবি হাসনাহেনা রানু। কবিতার জন্য শুভেচ্ছা জানবেন।
loading...
চমৎকার উপস্থাপন I
ভালো থাকুন সবসময়
loading...
অনেক দিন পর দিদির লেখা একটা কবিতা পড়লাম। খুব ভালো লাগেছে।
শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় কবি দিদি।
loading...