জেসমিন রিয়াদ হতে আটশ কিলোমিটার দূরে গ্রাম এলাকায় এক হাসপাতালের আয়া। বাপ মরা মেয়েটা সৌদি আসে মা এবং অন্যান্যদের সুখের আশায়। ভালোই দিন যেতে লাগল। ওই যে বলে না “সুখে থাকলে ভূতে কিলায়” জেসমিনের বেলায়ও তাই হলো। পরিচয় গাঢ় হলো তারই কলিগ কুমিল্লা নিবাসী এক ছেলের সাথে। তারপর আর কি – প্রেম ফিরিত অবশেষে বিয়ে। মৌলভীর মুখে মুখে কলমা পড়ে কবুল বললেই শুধু বিয়ে হয়না। বিয়ে প্রমাণের জন্য লিখিত কাগজপত্র লাগে। বিয়ে নামক খেলা খেলতে গিয়ে একত্রে বসবাস শুরু করে জেসমিনেরা। এমনি এক পর্যায় জেসমিনকে অবৈধ সেক্স করার দায় পুলিশ হাসপাতাল হতে গ্রেফতার করে। হয়তো কেউ তাদের তথ্য পুলিশকে দিয়েছে ! এখানে আবার বাংলাদেশীদের রাজনীতি ও রেষারেষির শেষ নাই। জেসমিন ধরা পড়ার পর পরই গা ঢাকা দেয় জেসমিনের স্বামী। স্বামীর বড় ভাই পরিচয় দিত না ভয়ে। তবে নিরক্ষর জেসমিন কাবিন ছাড়া বিয়ে হয় না, ছেলেটা যে তাকে প্রতারিত করেছে চৌদ্দ মাস জেলে থেকে তারপর বুঝতে পারে। জেসমিন যখন ধরা পড়ে তখন সে গর্ভবতী। জেলে গিয়ে ফুটফুটে একটা ছেলের মা হয়। এইসব মামলায় বাংলাদেশ দূতাবাস চোখে টিনের চশমা পরে কানে তালা মারে। আইনী লড়াইয়ে হারতে থাকে কাগজপত্রহীন বিয়ে করায়। এক পর্যায় দেশ হতে কাবিন করে নিয়ে দেখিয়ে অবৈধ সেক্স করার অপবাদ হতে পার পায়। এই পর্যন্ত লড়তে সাহায্য করে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশী সাংবাদিক ও কমিউনিটি। কিন্তু তারপরও তার মুক্তি মিলে না কারণ কোম্পানি তাকে স্বিকার করে না। এমনকি পাসপোর্টও হারিয়ে ফেলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক প্রচার হওয়ার পর দূতাবাস খোঁজ নিতে যায় জেসমিনের। এবং পাসপোর্ট করার আনুষঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করে। এই করোনা সব উলটপালট করে দেয়। জেসমিন দুধের বাচ্চা নিয়ে জেলে মানবেতর জীবন পার করছে।
গুটি কিছু বাংলাদেশী লোক মাঝে মাঝে নারীঘটিত ঝামেলায় জড়িয়েছে। যাহা হিসাবেও পড়ে না। নারী নিয়ে লোভ তেমন নেই বললে চলে। কিন্তু এর বিপরীত দেশে, তাহলে কি সব ভালো লোক সৌদিতে যায়। তা না, বরঞ্চ বেকার মামলা মোকদ্দমার আসামি বিদেশে পাড়ি দেয়। সেখানের আইনের কঠোর প্রয়োগ দেখে ভয়ে নারী নিয়ে উৎসাহ দেখায় না। আর বাংলাদেশ হতে গৃহকর্মী গিয়ে নিজের ইজ্জত আব্রু তুলে দিচ্ছে বর্বর হায়নাদের হাতে। ঢাকায় গৃহকর্মীর ভিসার দালাল আছে। এই দালালেরা মহিলা ভিসার নাম দিয়েছে গাই (গাভী) ভিসা। সৌদির অনেক গৃহকর্মী সরবরাহ অফিস আছে তারা গ্রুপ ভিসা ঢাকায় পাঠায়। আর ঢাকার রিক্রুটিং অফিস গাই খোঁজে লিপ্ত হয়। আর এই গাই সেখানে গিয়ে দুধ দিতে না পারলে জীবন নিয়ে ফিরতে কষ্ট হয়। আর এইসব গাই খেতে পারে না। ভয়ে বাহিরে যেতে পারে না। আইনের আশ্রয় নিতে পারে না।
বড় একটা হল রুম যেটাকে সৌদি ভাষায় দেওয়ানিয়া বলে। রাজ প্রাসাদের সব চেয়ে চমক এই হল রুম। দেয়ালে অপরূপ কারুকর্ম। বাদশা আজিজের ছবি এবং তার সাথে বর্তমান রাজার ছবিও দেয়ালে লাগনো। মেঝে বিছানো তুর্কীস্থানের সবচেয়ে দামি কার্পেট। এক কোণায় ডিস লাইনের রিসিভার বসানো। মাঝখানে ছোট ট্রি টেবিলে ফ্রাসের ছোট ছোট চায়ের পাত্র সাজানো। তবে কোন চেয়ার টেবিল নাই, সবাই চারিদিকে নিচে বসেই আলাপ করে। এখানে যারা আসে সরকারি বড় বড় অফিসার, আসে বড় বড় পয়সাওলা লোক। নারীদের জন্য আলাদা দেওয়ানিয়া (হল রুম) আছে। গাড়ি হতে নেমে আলাদা দরজা দিয়ে মহিলা রুমে চলে যায়। সৌদিতে প্রত্যেক বাড়ি হোটেল, মোটেল এবং রেস্ট হাউজ সব জায়গায় মহিলার জন্য সংরক্ষিত দরজা আছে। সদর দরজার সাথে রুমের দরজা সংযোগ যাতে পুরুষ না দেখে। মহিলাদের পর্দা রক্ষায় এই নিয়ম মেনে চলতে হয়। প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি নারী ঘরের বাহিরে বোরখা পরা বাধ্যতামূলক। তবে এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নারীরা গাড়ি চালাতে পারে, গ্যালারিতে বসে ফুটবল খেলা দেখে, গ্যাল্যারিতে বসে ছবি দেখে। বাদশা সুলতান বিন আবদুল আজিজ ব্যাপকভাবে আধুনিকীকরণ করেছে সমাজ এবং অর্থনীতিকে। এই সৌদি প্রাচীন কাল হতে কঠোর ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে চলা একটা দেশ। এখানে এখন ললনা স্বল্প বসনে সমুদ্র স্নান করে। বাহিরের লোক মহিলা পুরুষ বন্ধু হলেও হোটেলে রাত যাপন করতে নিষেধ নেই। যা আগে অবৈধ যৌনমিলন বলে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক কঠোর অপরাধ ছিল।
বেশীর ভাগ পরিবারে গৃহকর্মী এবং পারিবারিক ড্রাইভার থাকে। এই ড্রাইভারদেরও অনেক অসহনীয় কষ্ট এবং অপমান সহ্য করে কাজ করতে হয়। ড্রাইভারের নির্দিষ্ট কোন সময় থাকে না কাজের। রাতে এবং দিনে যখনি প্রয়োজন তখনি তাদের কাজের ডাক পড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ড্রাইভারের সাথে গৃহকর্মীর কিংবা সৌদি মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে। যা প্রকাশ হয় খুবই খুবই কম। আর প্রকাশ হলে রেহাই নাই। শুনেছি সৌদি মেয়েদের সাথে সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ করে ড্রাইভারকে দেশে ফেরত পাঠাতে। এই জন্য পারিবারিক ড্রাইভারের বয়স চল্লিশ বছর হতে হয়, বিবাহিত হতে হয়। এবং মহিলাদের কাপড় সেলাই করা ট্রেইলারদের বয়সও চল্লিশ বছর বয়স হতে হয়। এইসব ট্রেইলার দোকানে সবকিছু সংরক্ষিত হয়। মহিলা দোকানে গেলে নিজেকে নিরাপদ দূরত্ব রেখে ট্রেইলারের সাথে কথা বলতে হয়। জনবহুল এলাকায় এইসব মহিলা ট্রেইলারিং দোকান কম হয়। তবে এখন মহিলারা প্রচণ্ড পর্দা থেকে চাকরী, ব্যবসা বাণিজ্য, দোকান পাট সবই করতেছে। তবে আমাদের দেশের মত নারী আন্দোলন, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ হত্যা কোন কিছুই নেই। আছে অগণিত তালাক। আর সৌদিয়ান ঘরের নারীকে অত্যন্ত মূল্যহীন মনে করে। পুরুষদের ইচ্ছাই সব কিছু। এরা ছোট বড় সবাইকে নাম ধরে ডাকে। তবে সন্তান থাকলে বড় ছেলের নাম ধরে বলে অমুকের বাপ। মেয়ে বড় হলেও মেয়ের নাম বলে না। যেমন এই সৌদিয়ানের দুই মেয়ে বড়, ছেলে ছোট তবুও লোকজন উনাকে আবু আবদুল্লা (আবদুল্লার বাবা) বলে।
(চলবে)
loading...
loading...
যাপিত জীবনের প্রবাসী স্বরূপ। এই সেই চিত্র নয় অচেনা; যেন সেই অনাদিকাল থেকে চলছে। চলবেই …
loading...
না মহী দা আপনি খুব চমৎকার লেখেন
স্যালুট জানাই—————-
loading...
সৌদি আরবের নিয়মনীতি সম্বন্ধে অনেককিছু জানা হলো। তাঁদের প্রাইভেট ড্রাইভার বিষয়ে আগে জানা ছিল। ওঁরা আসলে খুবই নোংরা মন-মানসিকতাসম্পন্ন মানুষরূপী। তবে হ্যাঁ, একদিন-না-একদিন এই সৌদি আরবের নিয়মনীতি সবকিছুই চেইঞ্জিং হয়ে যাবে। মানে আমাদের দেশের মতন গণতান্ত্রিক হবে।
loading...
আপনার লেখা পড়া অনেক অজানা কথা জানলাম। আপনার এই সিরিজ লেখাটি মিস করা যাবে না, প্রতীক্ষায় রইলাম।
loading...