মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র (প্রথম পর্ব)

আমার মা বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। আমি আমার আম্মুর সাথে ঢাকায় থাকি আর আব্বু থাকেন কানাডায়। আব্বু সেখানে গিয়ে অন্য মহিলার সাথে জড়িয়ে যায়। কারন সে নাকি ভীষণ একা। তাছাড়া ওই মহিলা সেখানের নাগরিকত্ব পেতে সহযোগিতা করবে। তবে যাওয়ার আগের দিন চোখের জলে বুক ভাসিয়ে বলে ছিল যেত দ্রুত সম্ভব দেশে এসে আমাদের নিয়ে যাবে। অবশ্যই আব্বু দেশে এসে ছিল তবে আমাদের নিতে নয়। এসে ছিল আম্মুকে তালাক দিতে। আমার আম্মু একটা স্কুলে শিক্ষকতা করেন। উনি খুবই আত্মসম্মানবোধ মানুষ। আব্বু যাওয়ার পর আস্তে আস্তে আচরণ পরিবর্তন হতে দেখে আম্মু বুঝতে পারে যে আব্বু দূরে সরে যাচ্ছে। তাই দেশে এসে বিনা বাঁধায় আব্বু তালাক নিতে পারে। এবং এটি কেউ জানলোও না। যা কিছু আত্মীয় স্বজন জেনেছে নানুর বাড়ির লোক হতে।

একদিন নানু আর মামা আমাদের বাবায় এসে খুব রাগারাগি করলো। মাহির এই সিদ্ধান্ত কেন তুই আমাদের জানালি না। আমরা জানলে মাহিন কিছুতেই দেশ হতে পালাতে পারতো না। পারতো না তোকে তালাক দিতে, কত বড় সাহস একটা মেয়ে আছে, সংসার আছে। আর সে কিনা কোন এক বাজে মহিলার পাল্লায় পড়ে তোকে তালাক দেয়। কত বড় অমানুষ, আমরা জানলে এমন ব্যবস্থা করতাম যেন দেশ হতে বের হতে না পারে। আর তোর শাশুড়ী বা কি বলে উনার এত গুণী ছেলের বিষয়। এই তুমি এবার চুপ করো ভাইয়া। আর মা মাহিনের কথা বলে কোন হচ্ছে তোমাদের। যেখানে সে নিজেকে অন্য একজনের সাথে জড়িয়ে ফেলেছে। সেখানে কেন আমি জোর করে থাকবো। আমি কি ওর করুণার পাত্র।

আরে একটা মানুষ আমার সাথে থাকতে চাইতেছে না সেখানে জোর করে একজনের সাথে থাকা কত অপমান ও লজ্জা সেটা আমি বুঝি। আর আমিতো অপদার্থ নয় যে একা চলতে পারবো না। থাক তোর আত্মসম্মান নিয়ে। মা তুমি অযথা রাগ করছো। এতে নানু আরো করে। আর বলে এত বেশী বুঝ বলে তোমার জীবনটা আজ এত এলোমেলো। তোমাকে এই অবস্থায় রেখে মরলেও শান্তি পাবো না। আম্মু খুব রাগী বলে নানুর বাড়ির সবাই আম্মুকে খুব সমীহ করে চলে।

আব্বুর এই আচরণে দাদি খুব কষ্ট ফেল। দাদি এক রকম চুপ হয়ে গেল। এবং আব্বু আম্মুর তালাকের পর দাদি আমাদের গ্রামের বাড়ি চলে যায়। যাওয়ার আগে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না। বলে মা জলি বিভিন্ন জনের সাথে আমাদের বিভিন্ন সম্পর্ক হয়। পাশের বাসার লোকজনকে আমার মামা চাচা খালা ডাকি কেন। কারণ তাদের সাথে আমরা একটা সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করি। আর এইসব রক্তের সম্পর্ক হয় না তারপরও আমরা তাদের জন্য মায়া অনুভব করি। তাদের দুঃখে দুঃখ পাই, সুখে আমরা হাসি। মারে তোমার সাথে আমার ছেলে যে অন্যায় করেছে তার কোন প্রতিকার আমার কাছে নাই। ছেলে মেয়ে বড় হলে তাদের নিজের জগত হয় তখন তারা তাদের মত চলে। সেখানে মা বাবার আর কিছু করার থাকেনা। শুনো মা, তুমি মাহিনের বউ হিসাবে আমি তোমারও মা হয়ে ছিলাম। আজ তোমার আর মাহিনের তালাক না হয়ে যদি মাহিন মরে যেত তাহলে আমি তোমার মা‘ই থাকতাম। আর আজ মাহিন বেঁচে থেকেও আমি তোমার কেউ না (চোখ মুছে আঁচল দিয়ে)।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ১টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৭-০৫-২০২০ | ১৩:২৮ |

    আজকের প্রথম পর্বে মেয়ে ও মায়া বিষয়টি উঠে এলেও বাকি অংশ মাদক ও রাষ্ট্র তেমন ভাবে আসে নি। আশা করছি ধারাবাহিকের পরবর্তী অংশে নিশ্চয়ই পাবো। ধন্যবাদ মি. ফয়জুল মহী। শব্দনীড়ে আপনার সার্বক্ষণিক পদচারণা অসাধারণ লাগে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • ফয়জুল মহী : ০৭-০৫-২০২০ | ১৫:০২ |

      http://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif জ্বী পাবেন। শেষে আসবে মাদকের কথা। ভালোবাসা আপনাকে  

      GD Star Rating
      loading...
      • মুরুব্বী : ০৭-০৫-২০২০ | ২২:১৮ |

        অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানালাম ভাই। Yes

        GD Star Rating
        loading...