গল্পঃ বিবর্ণ সময়

[১] ফজরের আজান হয়ে গেছে বেশ খানিকটা আগে। এ সময় পাখিরা জেগে ওঠে ধীরে ধীরে। মসজিদের দিকে দারুণ ব্যস্ততায় ছুটে যায় মুসুল্লীরা। আজকাল অবশ্য মুসল্লীদের ছুটে চলা দেখতে পাওয়া যাচ্ছেনা করোনা ভাইরাসের জন্য মসজিদে নামাজ পড়ার বিধিনিষেধের কারণে। চারদিক শুনশান শব্দহীন নীরবতা। অভি প্রতিদিন খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে। এটা তার ছোট বেলাকার অভ্যাস। তারপর সে মাকে ডেকে তোলো। এবং তারপর তারা প্রাত্যহিক ইবাদত সারে খুবই আন্তরিকতার সাথে।

পারতপক্ষে মা ছেলে দুজনের একজনও ফজরের নামাজ কাজ্বা করে না। কিন্তু আজ হঠাৎ ছন্দপতন হলো, অভি আজ ওঠেনি। সালেহা নামাজ শেষে খেয়াল করলো অভি নামাজ পড়তে ওঠেনি। একটু চিন্তিত হয়েই তিনি অভির ঘরে ঢুকলেন। মনে মনে ভাবলেন ছেলেটার শরীর খারাপ করেনি তো।

লক ডাউনের দিনে এতো বার করে মানা করার স্বত্ত্বেও ছেলেটা প্রায় বাইরে বেরিয়ে যায়। বড় বউমা প্রায় দিনই এনিয়ে দু’চার কথা শুনাতে ভুল করে না সাথে অন্যান্য কথাও বলে। ভদ্রতার খাতিরে সালেহা বেগম তেমন একটা উত্তর দেন না। অশান্তি এখন আর তার ভালো লাগে না।

অভির বয়সী আজকালকার ছেলেমেয়েরা বড্ড বেশি বেয়াড়া কিছুতেই কথা শোনে না সেটা তিনি জানেন, আর এটাও জানেন অভি কি ধাঁচের ছেলে। মায়ের মন তো ভয় একটু লাগেই। তবে অভি যে কারণে বাইরে যায় এই লকডাউনের দিনে তা সালেহা বেগমের কাছে পরিষ্কার অভি তার মায়ের সাথে কোনদিন কোন লুকোচুরি খেলে না। অভি যায় মানুষের প্রয়োজনে মানবতার টানে। ছেলেটা একটা দুস্থ লোকেদের মাঝে খাদ্য বিতরণকারী স্বেচ্ছাসেবক দলের ভলান্টিয়ার। গরীব দুঃস্থ মানুষের মধ্যে খাবার পৌছে দিয়ে এই সংস্থার কাজ।অভির কাজ খাবার প্যাক করা।

এজন্য মনে মনে ভয় আশঙ্কা থাকলেও ছেলের জন্য ভিতরে ভিতরে একটা অহংবোধ ও কাজ করে মায়ের। আর যেহেতু এক্ষেত্রে অভির কাজটা আউটডোরে নয় ইনডোরে তাই খুব একটা রিস্ক ও নেই। তাছাড়া সব সময় শুধু নিজের কথা ভাবলে সে মানুষ আবার মানুষের পর্যায়ে পড়ে নাকি। মানুষ তো মানুষের বিপদের দিনের জন্যই, নাকি?

সালেহা বেগমের দুই ছেলে বড় জাহিদ আর ছোট অভি। অল্প বয়সের বিধবা তিনি। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে জাহিদ এই সংসারকে দাঁড় করিয়েছেন। পিছন থেকে উৎসাহ বা অনুপ্রেরণা যাই হোক না কেন তার অবদান একমাত্র সালেহা বেগমের।নিজেদের সন্মিলিত কঠোর পরিশ্রমের ফলে শেষ বয়সে সুখের মুখ দেখেছেন তিনি। তারপর বড় ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন সঠিক সময়ে। সংসার থেকে আস্তে আস্তে সরেও এসেছেন নিজেই। এখন ছোট ছেলেটির একটা ব্যবস্থা হলেই তার কাজ শেষ। ছোট ছেলেটিও এবছর পড়া শোনা শেষ করবে। আর তো কটা মাস তারপর নিশ্চিন্তের জীবন।

সালেহা বেগম প্রথমে জানালার পর্দা সরিয়ে দিলেন। অভি আলো একেবারে বারে সহ্য করতে পারে না। পর্দা সরালেই তার ঘুম ভেঙে যাওয়ার কথা। আজ পর্দা সরালেও অভির ঘুম ভাঙলো না। নিসাড় হয়ে ঘুমাচ্ছে ছেলেটা। নিশ্চয় শরীর খারাপ করেছে। সালেহা বেগম মশারি সরিয়ে ছেলের কপালে আলতো করে হাত রাখলেন। অভির গায়ে বেশ তাপ। এসময় জ্বর এলে তো বিপদ। চারিদিকে করোনা ভাইরাসের ভয়। ডাক্তার পাওয়া মুসকিল। তার উপর অভির বাইরে বের হওয়া নিয়ে কম অশান্তি করেনি রুমা। এখন জানতে পারলে কি না কি বলে বসে।

জাহিদ আগে বেশ প্রতিবাদ করতো রুমার যে কোন উল্টাপাল্টা ব্যবহারে কিন্তু ইদানিং সে মনে হয় যে কোন কারণে হোক বউকে বেশ ভয় পায়। মা বা ভাইয়ের পক্ষে তাকে আর কথা বলতে দেখা যায় না। মাঝে মাঝে সালেহার এ নিয়ে বেশ দুঃশিন্তা হয়। ছেলেটা তার হাত থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছে।

জাহিদের বউ অভিকে কেন যে দেখতে পারে না তা সালেহার কাছে স্পষ্ট নয়। সালেহা বেগম নিজের কানে শুনেছেন রুমা জাহিদকে বলছে যে তোমার মা ভাইকে অন্য জায়গা দেখতে বলো। ওরা থাকলে আমাদের প্রাইভেসী নষ্ট হয়।

সালেহা চুপ করে থাকেন। তিনি জানেন এখন তার পাথরের তলায় হাত। এখন কিল খেয়ে কিল হজম করার সময়। একটু ভুল করলেই পা হড়কে খাদে পড়ে যাবেন তাই তো তিনি ছেলে বউ এর শলাপরামর্শ শুনেও না শুনার ভান করেন। সেই কারণে সদা সতর্ক সালেহা এখনই বড় বউ এর হাতে কোন কোন ইস্যু তুলে দিতে চান না। তিনি প্রতিটি মুহুর্তে গা বাঁচিয়ে বুদ্ধি করে চলেন আর তো কয়েকটা মাস।

ছেলের মাথায় পানি দিয়ে গা মুছিয়ে দ্রুত রান্নাঘরে এলেন সালেহা বেগম। নিজে না চাইলেও ছেলে ও ছেলের বউ এর ইচ্ছায় রান্না বান্নার কাজ গুলো তাকেই চালিয়ে নিতে হয়। অবশ্য কাজ করতে সালেহার ভালোই লাগে,কাজের বেলায় তিনি কোন দিনই অলসও না এতে বরং সময়টা দ্রুত কেটে যায় কিন্তু ইদানিং একটা সমস্যা হয়েছে করোনা পরিস্থিতির কারণে বাসায় বাড়তি লোক আসার ব্যপারে কড়াকড়ি চলছে। তারই জের হিসাবে প্রথমেই ড্রাইভার ও কাজের লোককে ছাড়িয়ে দিয়েছে রুমা। এক্ষেত্রে সালেহা বেগমের উপর চাপ বেশি পড়ে যাচ্ছে। রান্ন্বাবান্নার সাথে ধোয়া মোছা কাটা কুটিও যোগ হয়েচে বাড়তি হিসাবে। রুমা কোন কাজে কোনদিন হাত দেয়নি এখনও দেয় না।

নাস্তার টেবিলে সবাই মিলেই নাস্তা খাওয়ার চল এ বাড়ির বহুদিনের। যদিও রুমা এ ব্যপারটা ভালো চোখে দেখেন না কোনদিনও তবু জাহিদের আপত্তির কারনে এখনও সহ্য করে খানিকটা। প্রাইভেসীর অজুহাতে সবটাতেই তার শুধু চিল চিৎকার। এসব ন্যাকা মার্কা কথা শুনলে সালেহা বেগমের খুব হাসি পায়। মাঝে মাঝে তিনি হো হো করে হেসেও নেন খানিক।

সকাল সকাল ফেসবুকে চোখ রাখতে রাখতে নাস্তার টেবিলে হাজির হলো রুমা। জাহিদ অভিকে না দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
অভি কোথায় মা, অভি ওঠেনি?

সালেহা বেগম বলবেন না বলবেন না করেও মুখ ফসকে বলে ফেললেন
-অভির খুব জ্বর এসেছে, শুয়ে আছে।
মানুষ মনে হয় ভুত দেখলেও এতোটা চমকে ওঠে না। রুমা তড়াং করে লাফিয়ে উঠে বলল
-জ্বর? কবে থেকে।
-ভোরেই তো দেখলাম।
-শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট?
জাহিদ রুমাকে থামিয়ে বলল,
-বার বার করে নিষেধ করেছিলাম বাইরে না যেতে, দেখো এখন করোনা বাধিয়ে এনেছে কিনা, বাড়ির সবাইকে এবার সাফার করতে হবে।

এবার রুমা এক নিঃশ্বাসে বলল, মা আপনি অভিকে এক্ষুনি বাড়ি ছাড়তে বলেন,আমি কিছুতেই করোনা রুগির সাথে এক বাড়িতে থাকবো না। সালেহা বেগম অশান্তি চান না তবু এখন রুমার ব্যবহার তাকে আহত করলো তাছাড়া অভি এখন কোথায় যাবে? আর অভিকে বাড়ি ছাড়তে বলার মানেই বা কি? সামান্য জ্বরে বা যে কোন রোগে মানুষ কি তার অধিকার হারিয়ে ফেলে। আগে তো কখনো মানুষের এরকম আচরণ দেখো যায়নি রুমা কিভাবে এসব কথা বলছে আর কিভাবে বলার সাহস পাচ্ছে। জাহিদের কোন উচ্চবাচ্য নেই সেও ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত। সালেহা মৃদু প্রতিবাদ করলেন,
-এসব তুমি কি বলছো বউমা অভি এখন কোথায় যাবে?
-কোথায় যাবে কি করবে তার আমরা কি জানি।ওর ভুলের জন্য তো আমার আমাদের পরিবার সাফার করতে পারে না।

[২]
সালেহা বেগম মাথাটা ধুইয়ে দেবার পর অভির একটু সুস্থ বোধ হতে লাগলো। নাস্তার টেবিলের প্রত্যেকটি কথা অভির কানে গেলো। কথা তো নয় যেনো বিষের বড়ি অভি চোখ ভিজে গেলো। এতো বাজে বাজে কথা মানুষ কিভাবে বলে?

মানুষের শরীর খারাপ হলে মনটাও দূর্বল হয়ে যায়। বড় ভাবী যে তাদের মা ছেলেকে এই সংসারে অবাঞ্ছিত মনে করে সেটা অবশ্য অভি ভালো করেই জানে। তবু আজকের কথা গুলো বড় বেশি সুই ফোটালে মনের গহীনে। অপমানেরও একটা সীমা থাকে। মা আর ভাইয়া যে কেন বড় ভাবী কে ভয় পায়, তা অভি বোঝে না। তারা নিজেও কিছু বলে না আবার বলতে গেলেও বলতে দেবে না। প্রশ্রয় পেয়ে পেয়ে সীমা অতিক্রম করেছে ওই ভদ্রমহিলা।

হঠাৎ অভিমান এসে ভর করলো অভির মনের মধ্যে। আর যাই হোক সে আর এ বাড়িতে থাকবে না। যে বাড়িতে তার এবং তার মায়ের কোন সম্মান নেই সে বাড়িতে থাকার চেয়ে না থাকাই অনেক ভালো। বিপদে আপন পর চেনা যায়। পাশাপাশি বাস করেও অনেক সময় শত বছরে কেউ কেউ আপন হয় না। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই মাথাটা একটু চক্কর দিয়ে উঠলো। তবু অভি কোন রকমে চটি পায়ে গলিয়ে আস্তে আস্তে বাড়ীর বাইরে চলে এলো। এখন অনেক কাজ পড়ে আছে খামাখা ভয়ে ঘরের কোনে ইঁদুরের মতো লুকিয়ে থাকার কোন মানে হয় না।

বেশ খানিকটা হেঁটে আসার পর তার মনে হলো ফোনটা ভুল করে সে বাড়িতে রেখে এসেছে। এখন আর বাড়ি ফিরে যাবার কোন মানে হয় না। নানা কথা শুনতে হবে অকারণে।

হাঁটতে হাঁটতে অভির মনে হলো এখন ঠিক মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। নিজের অজান্তেই অভি পথের পাশে কখন জানি বসে পড়লো। তার খুব পানি পিপাসা পেয়েছে। একটু পানি পেলে খুব ভালো হতো। পানি পিপাসা পেতে পেতেই অভি শরীর আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো।কিছুক্ষনের মধ্যেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। প্রচন্ড জ্বরে তার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। সেই সাথে মুখ দিয়ে বের হচ্ছে গোঙানির মতো আওয়াজ ।

লক ডাউনের কারণে রাস্তায় স্বাভাবিকের চেয়ে লোক চলাচল কম হলেও যারা পথচারী ছিলো তারা কেউ কেউ থমকে দাড়িয়ে গেলো। বেশিরভাগই সময়ের ব্যবধানে চলে গেলেও, কেউ কেউ অবাক চোখে দাড়িয়ে রইলো। কিন্তু করোনা ভাইরাসের ভয়ে কেউ সামনে এগিয়ে এলো না। অনেকেই আহা উহু করতে লাগলো শুধু দূর থেকেই। একজন অতি উৎসাহী মহিলা মাতৃ সুলভ আবেগে কাছাকাছি চলে আসতেই অন্য অনেকে হাহা করে উঠলো।
-চাচী কি করেন সরে যান সরে যান। ওনার কাছে যাওয়া যাবে না।
পৃথিবীর সব মানুষ সমান নয়। এই মহিলা অতি দয়াবতী মহিলা। আহারে একটা মানুষ রাস্তার উপর এভাবে পড়ে আছে আর সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। তিনি রাস্তার উপর পাগলের মতো চিল্লাচিল্লি করতে লাগলেন।

বেশ খানিক পরে একদল টহল পুলিশের নজরে পড়ল ব্যপারটা। তারা হাসপাতালে খবর দিলো। মহিলার কাছে জানতে চাইলো সে রুগীর কিছু হয় কিনা? অনেক ঝামেলার পরে দুপুরের একটু আগে আগে অভিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। পৃথিবীটা বড় বিচিত্র জায়গা। এখানকার মানুষ তার চাইতে বিচিত্র। হাসপাতালের ডাক্তার নার্সে পরম সেবা যত্নে অভির দুদিনের মাথায় জ্বর ছেড়ে দিলো। সুস্থ হয়ে উঠলো দ্রুত।

তৃতীয় দিন তার শরীরটা বেশ ঝরঝরে হয়ে এলো। ডিউটি নার্স অলকা জানতে চাইলো তার বাড়ির কথা। সব প্রশ্নের উত্তর মানুষের জানা থাকে না বা জানা থাকলেও বলতে মন চায় না। এখন যদিও অভি সুস্থ তবু বার বার তার মনের মধ্যে বড় ভাইয়া আর ভাবীর বলা হৃদয়হীন কথাগুলোই মনে পড়ছে। ভাবী না হয় পরের বাড়ির মেয়ে কিন্তু ভাইয়া কথাগুলো ওভাবে না বললেই পারতো। অভিমানে অভির চোখ আবারও ভিজে উঠলো।

নার্স অলকা হাসিহাসি মুখ নিয়ে এগিয়ে এসে জানতে চাইলো,
-আপনার নামটা কিন্তু জানা হয়নি? শুধু জ্বরের ঘোরে একবার মনে হয় বলেছেন কবি। আপনার নাম কি কবি? আমি কিন্তু কবি নামেই এন্ট্রি করেছি।
অভি মাথা নাড়লো,বলল
– আমার নাম অভি।
-পুরো নাম? পুরো নামটা বলুন আমাদের খাতায় এন্ট্রি ঠিক করতে হবে।

অভি পুরো নাম বলল।
আপনার বাড়ি কোথায়? বাড়িতে কে কে আছে? আপনি কি বাড়িতে কাউকে খবর দিতে চান?
অভি আবারো কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। কিছু কিছু পরিচয় মানুষের জীবনের জন্য কখনও কখনও বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। অভি সে বোঝা থেকে মুক্তি পেতে চায়। সে খানিক সময় নিয়ে ভেবে তারপর অনেকদিন আগে ফেলে আসা গ্রামের নাম বলল। বলল তার নিজের বলতে কেউ নেই এই পৃথিবীতে। সে একা।
অলকা একটু অবাক হয়ে তাকালো, সম্ভবত কথাগুলো তার বিশ্বাস হয়নি তারপর বলল,
– অভিমান ভালো তবে বেশি অভিমান কখনো কখনো জীবনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে সেটা কি জানেন? বয়স কম মাথা একটু ঠান্ডা করে ভাবুন? আপনি এখানে এলেন কিভাবে? একেবারে পথের ধারে বেহুঁশ হয়ে পড়ে ছিলেন। ঘটনা কি বলুন তো?
অভি কিছুই বলল না। তার চোখ কেন জানি ছলছল করে উঠছে। এ জীবনে হয়তো সে তার পরিচয়ই হারিয়ে ফেলেছে। পরিচয়হীন মানুষ স্রোতে ভাসা শেওলার মতো শুধু ভেসে বেড়ায়। কোথাও তার ঠাই হয় না।

অলকা কি ভাবলো কে জানে, সে তার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। হাসপাতালে রোগীরা পরিচয় গোপন করছে এটা তার কাছে নতুন না। এ জীবনে মানুষের জীবনের উঠা পড়া চরাই উৎরাই অনেক কিছু তার দেখা হয়ে গেছে এটা আর নতুন কিছু নয়। এসব তার আবেগকে তার আর আগের মতো স্পর্শ করে না। সে নিজের কাজে মন দিলো্।

পরেরদিন অলকা এসে জানালো অভি যেহেতু এখন সুস্থ সেহেতু তাকে আজ রিলিজ দেওয়া হবে। তার করোনা টেস্ট রিপোর্ট ও চলে এসেছে করোনা নেগেটিভ দেখাচ্ছে। তাকে অভিবাদন জানালো অলকা। অলকার কর্তব্য পরায়ণতায় অভি মুগ্ধ হয়ে গেলো। এরকম কিছু কিছু মানুষের জন্য পৃথিবীটা এতো সুন্দর।

অভির মনের অভিমানের মেঘ হঠাৎ করে সরে গিয়ে সেখানে রোদ ঝলমল আলোর রেখা দেখা দিলো। তার মুখের হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে অলকার খুব ভালো লাগলো। অলকা জানে হাসি খুব ছোঁয়াচে। একজনের মন ভালো দেখলে তার বরাবর মন ভালো হয়ে যায় তবে তার নিজের কাজের প্রতিও সে খুব দায়িত্বশীল। এখন অনেক কাজ ।সামনে অনেকটা পথ তাকে তীব্র সংগ্রাম করতে হবে। অচিরেই আবারো সে তার নিজের কাজে মন দিলো। যাক ছেলেটি হয়তো তার নিজের বাসায় ফিরে যাবে।

অভি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার আগেই ভেবে রেখেছে তার কি করণীয়। সে আর ওই স্বার্থপর বাড়িতে ফিরে যাবে না। তার চাইতে সে তার কাজে ফিরে যাবে।

দেশের এই মহা দূদিনে তার মতো ভলান্টিয়ারের খুবই দরকার। করোনা ভাইরাসকে নিয়ে ভয়ে ঘরে বসে থাকার কোন যুক্তিই নেই। মানুষের মুক্তির পথ খুজে বের করতে হবে। মানুষকে সাহায্য করতে হবে। তারপর যা হয় দেখা যাবে। আগে ভয়কে জয় করতে হবে। শুধু নিজে নয়। করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে তাকে/তাদেরকে দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে জয় লাভ করতেই হবে। সামনে মোড় ঘুরলেই ”এসো হাত বাড়াই” এর ছোট্ট অফিস। সে রোদ ঝলমল পথে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাটতে লাগলো।

সমাপ্ত

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. ফয়জুল মহী : ০১-০৫-২০২০ | ১৩:২০ |

    Excellent 

    GD Star Rating
    loading...
  2. মুরুব্বী : ০১-০৫-২০২০ | ১৩:২৮ |

    জীবন থেমে থাকে না। এখন অনেক কাজ পড়ে আছে। সামনে অনেকটা পথ সবাইকে তীব্র সংগ্রাম করতে হবে। অচিরেই আবারো আমাদের নিজের দায়িত্বে মন দিতে হবে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...