বাসে যেতে যেতে হঠাৎ চোখে চোখ পড়ে গেলো মেয়েটির। মনে হলো আমার দিকে সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চিনি কি আমি তাকে? আমি তাকাতেই সে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো অনত্র। আপাদমস্তক ইসলামী পোষাকে ঢাকা, শুধু চোখ দুটো দেখা যায়। এত মায়া মায়া দৃষ্টি যে কি আর বলবো আমার চোখ দুটো খুব সহজেই আটকে গেলো তার দিকে। আবার ফিরে তাকাতেই আমার চোখে তার চোখাচোখি হয়ে গেল। মনে মনে ভাবলাম পরিচিত না হয়ে যায়না। কিন্তু মেয়েটি কে ? ঠিক ধরতে পারলাম না। আবারো তাকালো মেয়েটি, কয়েক সেকেন্ড মাত্র, মেয়েটি চোখ সরিয়ে নিলো। ভাবলাম ওর সাথে কথা বলতে হবে। কিন্তু বাসে প্রচন্ড ভীড়। কিছু বলার আগেই মেয়েটি হঠাৎ উধাও হয়ে গেলো্। মনটা সারাদিন খচখচ করতে লাগলো। সত্যি কি আমি ওকে চিনি? কে মেয়েটি? আমার দিকে অমন গভীর দৃষ্টিতেই বা তাকিয়ে ছিলো কেন? কিছু কি বলতে চায়?
এরপর অনেক কটা দিন পার হয়ে গেছে। প্রতিদিনের ব্যস্ততায় আমিও ব্যস্ত হয়ে পড়লাম স্বাভাবিক নিয়মে। চলতি পথে প্রতিনিয়তই তো মানুষের জীবনে কত ঘটনা ঘটে। কে আর কয়টি মনে রাখে। আমিও এই সামান্য এই সামান্য ঘটনা ভুলে গেলাম স্বাভাবিক নিয়মে।
বেশ অনেকদিন পরের কথা আমি গেছি মার্কেটে একটা চটি কিনবো বলে। বর্তমান চটি জোড়া ছিড়ে গেছে বেশ অনেকদিন হলো। কোনরকমে জোড়া তালি দিয়ে চালাচ্ছিলাম আজ আবারো ছিড়ে যাওয়াতে নতুন একজোড়া কেনার সিদ্ধান্ত নিলাম। একটু হেঁটে লিবার্টি সু এর দোকানে ঢুকতেই দেখলাম সামনের সারিতে বসে জুতো পছন্দ করছে একটি মেয়ে। কেন জানি মেয়েটির মুভমেন্টে চোখ আটকে গেলো। আমি দাড়িয়ে পড়লাম্। সেই মেয়েটি না ?
হ্যাঁ সেই তো, বেশ কাকতালীয় ব্যাপার। অপেক্ষা করলাম, মেয়েটির মুখ আজ ভালো করে দেখতে ই হবে। জানতে হবে কেন সে ওইদিন ওভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
কিছু সময় যেতেই মেয়েটি তার কাজ শেষ করে মুখ তুলে চাইলো।
আর মুখ তুলে চাইতেই একেবারে চোখাচোখি আমার সাথে। আমি ও একটু ও সময় ব্যয় না করে হড়গড়িয়ে বলে ফেললাম,
-মাফ করবেন আপনার নামটা জানতে পারি প্লিজ?
মেয়েটি কেমন যেন একটু বিচলিত হলো। স্বাভাবিক ভাবে সে বেশ ঘাবড়ে গেল মনেহয়। একটু অপ্রস্তুত হলো বই কি।অন্তত তার চেহারায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠলো। ইতস্তত করে আনত নয়নে বলল,
– আপনি কে? আপনাকে তো আমি চিনি না। অপরিচিত কাউকে আমার নাম বলবো কেন?
-সে ঠিক আছে, তবে আমার কেন যেন আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে।
মেয়েটি বেশ কেটে কেটে উত্তর দিলো,আপনাকে আমার একটুও চেনা লাগছে না। স্যরি।
আমি মরিয়া হয়ে জানতে চাইলাম,
আচ্ছা চেনা হোক বা অচেনা নামটা জানাতে দোষ কি?
-আচ্ছা নাছোড়বান্দা তো আপনি ,পথ ছাড়ুন। আমায় যেতে হবে।
আমি আহত হৃদয়ে পথ ছেড়ে দিলাম।লোকজন খেয়াল করছে।অন্যকোন রকম পরিস্থিতি হোক আমি ও তা চাই না। বিচিত্র ভাবনায় মনটা হঠাৎ বিক্ষিত হয়ে গেলো।
মেয়েটিও আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অকস্মাৎ জোরে ছুট লাগালো এক নিমেষে। এরকম পরিস্থিতি হতে পারে আমি কখনো কল্পনা করতে পারি নি । মেয়েটির আচরণ বড়ই অদ্ভুত।
সেলসম্যান মনে হলো আমার প্রতি চরম বিরক্ত হয়েছে ।সে বিরক্তি নিয়ে জানতে চাইলো আমার কি লাগবে।
ততক্ষণে আমার কিছু কেনাকাটা করার ইচ্ছাটাই উবে গেছে। আমি বিহ্বল হয়ে শুধু মেয়েটির পথের পানে চেয়ে রইলাম।কে মেয়েটিি ?এমন লুকোচুরি খেলছে কেন সে আমার সাথে? কি চায় সে? নাকি কিছুই চায় না। সব আমার মনের কল্পনা।
নাহ! ভুল তোআমার হবার কথা নয় । শুধু শুধু মেয়েটিকে চেনাই বা লাগবে কেন?আমার তো এমন হয় না। নিশ্চয় এ আমার ভুল নয়্।
বারবার মন বলছে আমি মেয়েটিকে চিনি, আমি অবশ্যই এই মেয়েটিকে চিনি।কিন্তু কিছুতেই এই মেয়ের সাথে স্মৃতিগুলো মনে করতে পারছিনা। কোথায় যেন দেখেছি …কোথায়?
চটি না কিনেই বাড়ি ফিরে এলাম তাড়াতাড়ি। মনটা আজ প্রচন্ড অশান্ত।বারেবার স্মৃতির ডায়েরী উল্টে পাল্টে একাকার ,কে মেয়েটি?আমি সাধারণত সিগারেট খাই না ।আজ সিগারেট ধরলোম একের পর এক। হেড অফিস বার কয়েক উকি ঝুকি মারলেও আমাকে বিরক্ত করলো না। সে সবসময় আমাকে ভালো বোঝে।অকারণ জ্বালাতন সে কখনো করে না।বারান্দায় হাটাহাটিতে রাত প্রায় শেষ হয়ে এলো।কখন জানি দুচোখ জুড়ে গভীর ঘুম চলে এলো্ নিজেই জানি না ঘুম ভাঙলো অনুপমার হাঁকডাকে।
loading...
loading...
লেখা বেশ ,মন ছুঁয়ে গেল লেখা।
loading...
অনেক ধন্যবাদ রইলো মহী ভাই
loading...
অণুগল্পটি পড়লাম মি. ইসিয়াক। ভালো লিখেছেন।
loading...