ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে গত রাত থেকে। দীর্ঘ বর্ষার আলামত। অনবরত বৃষ্টির ছোঁয়ায় সমস্ত চরাচর ভিজে একাকার। চিরচেনা প্রকৃতির এই হঠাৎ বদল মনে বেশ অন্যরকম দোলা দেয়।
ভালো লাগে বর্ষার সদ্য স্নাত স্নিগ্ধ প্রকৃতি। ভালো লাগে আকাশ, খোলা মাঠ, জল টলমল পুকুর, ভেজা সবুজ ঘাস ও লতা পাতা। এই সময় প্রকৃতিকে বেশি করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। মনের গতি প্রকৃতিও কেমন যেন বদলে যায়। কাব্যকথার জলছবিতে ভরে ওঠে।
আমার একলা জীবনে আমি প্রায় বেড়াতে বের হই প্রাকৃতিক এই নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করার মনোবাসনায়। রাস্তায় গাড়ির চাপ থাকে কম, মোটামুটি জনশূন্য রাস্তাঘাট। ইচ্ছা মতো হেঁটে চলে এক অন্য রকম অনুভুতির প্রকাশ খেলা করে যায় মনের অলিন্দ জুড়ে। ভালো লাগলে সাথে থাকা ক্যামেরায় টুপটাপ ছবি তুলতে কখনো ভুল করিনা। চারপাশটা দেখি খুব নিবিড়ভাবে, ভেজা কাক,শালিক………… আজ মনে হলো কিছুদিন আগে কলেজপাড়ার দীঘিতে অনেক লাল শাপলা ফুটতে দেখেছিলাম। সেই ছবি তুললে কেমন হয়। টুপটাপ জল গড়িয়ে পড়ছে পাতায় আর ফুলে। সেই ছবি ফ্রেমে ধরার আশায় নানা ভাব কল্পনায় একটু বেখেয়ালই ছিলাম মনে হয়। হঠাৎ সড়গড় কথায় আমি চমকে উঠলাম।
-আরে তুই?এখানে এই বৃষ্টিতে কি করছিস।
প্রথমে বুঝতে পারলাম না সামনের মানুষটি কে? সে নারী নাকি পুরুষ। কারণ পুরোদস্তুর রেইনকোটে মোড়ানো মানুষটাকে সহসা ঠাওর করা আমার জন্য কিছুটা দুষ্কর মনে হলো্।
অকস্মাৎ বিষ্ময়ে আমি কিছুটা নির্বাক তাকিয়ে রইলাম।
-কণ্ঠটি আবার ঝনঝনিয়ে উঠলো,
-কিরে ভ্যাবলা কান্তর মতো হাঁ করে তাকিয়ে আছিস কেন? চিনতে পারছিস নাে ? এত সহজে ভুলে গেলি আমায়?
হঠাৎ ধুলোর রাশি ঝড়ো হাওয়ার মতো উড়িয়ে নিয়ে গেল যেন স্মৃতিপটের উপর থেকে। নিজের অজান্তে মুখ ফুটে বেরিয়ে এলো,
-আরে ইরা তুই? এখানে? এখানে কি করে? কি করছিস?
-আরে বাবা এতো প্রশ্ন উত্তর একসাথে কি করে দেবো? তবে ভালো লাগছে তুই আমাকে চিনতে পেরেছিস্ দেখে।
-কি যে বলিস তোকে কি করে ভুলবো তবে তোকে তোর বর্তমান অবস্থায় চেনা কষ্ট। একেবারে চিকনি চামেলী হয়ে গেছিস তার উপরে রেইনকোট পড়ে অদ্ভুতুড়ে অবস্থা। তবে তোর বিখ্যাত কণ্ঠ আমাকে চিনতে সাহায্য করেছে। একেবারে মার্কা মারা হা হা হা।
-তারপর কেমন আছিস দোস্ত?
-ভালো বেশ ভালো। তবে তুই এই শহরে ? দেখে একটু অবাক হচ্ছি।
-আছি তো অনেকদিন। আমার পোষ্টিং এখানেই।
শুনে বেশ অবাক হলেও ভালো লাগলো এতদিন বাদে ইরার দেখা পেয়ে। কথায় কথায় জানা হলো, শোনা হলো অনেক কিছু। ইরা জানালো তার এখনো সংসার করা হয়নি নানা ব্যস্ততায়। আমি বেশ অবাক হলাম। সে আরো জানতে চাইলো চারুলতা, দীপা, আলেয়া সহ আরো অনেকের কথা। আমি বললাম কারো সাথেই তেমন যোগাযোগ নাই। তবে ইরা চাইলে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে। একথা শুনে ইরার সেকী হাসি হাসতে হাসতে ইরা বললো
-আচ্ছা একসাথে এতোগুলো মেয়েকে কীভাবে তুই ম্যানেজ করতিস বলতো? এটা কিন্তু আমার কাছে এখনো সেইরকম রহস্যময় লাগে। তোর ওই বিশ্ব প্রেমিক ইমেজ হি হি হি।
আমি হেসে সপাটে মনের কথা বলে দিলাম গড়গড়িয়ে, আচ্ছা তুই যে একজন মেয়ে এতো ছেলে তোর মতো রূপসীর পিছনে লাইন লাগিয়ে ঘুরঘুর করতো, তোর জন্য ফিদা ছিলো। এমনকি আমি পর্যন্ত। তুই কারো প্রেমে পড়লি না কেন?
হঠাৎ করে পরিবেশটা গম্ভীর হয়ে গেল যেন। ইরাবতীর চোখটা ছলছল করে উঠলো। সে আমার হাতের উপর হাতটা রেখে বলল,
-দেখা যখন হলো, সব কথাই হবে। তুই কেমন আছিস অপূর্ব?
এমন আবেগঘন পরিবেশে আমার দুচোখ ভিজে গেলো যেন ঘোর বরষায়। মুখে কিছু না বললেও মনে মনে বললাম। আমি ভালো নেই ইরাবতী। একটুও ভালো নেই।
loading...
loading...
গভীর স্পর্শী!…
loading...
অতুলনীয়, প্রিয় শুভ কামনা I
loading...
পূর্ণ সমাপ্তি না থাকলেও অণুগল্প হিসেবে লিখাটি বেশ হয়েছে। শুভেচ্ছা মি. ইসিয়াক।
loading...
শুভকামনা রইলো্
loading...