পৌষমাসে টুসু পূজা…….. টুসুর বন্দনা লোকগান তৃতীয় পর্ব
তথ্য সংগ্রহ ও সম্পাদনা আর সম্পাদকীয় কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
চোড়ল সহ টুসুর বিসর্জন এবং মকরস্নান হয় কাছাকাছি নদী বা বাঁধে। বাঁধ হল বড়ো জলাশয়। মেয়েরা শুধুই চোড়ল বিসর্জন দেয়। সরা বা ঘট ঘরে রেখে দেওয়া হয় এক বছর। একে বলা হয় লক্ষ্মী বাঁধা। লক্ষ্মীকে বেঁধে রাখা হয় ঘরে। চোড়ল বিসর্জন না দিয়ে আবার সেটা ভেঙে টুকরোগুলো ভাগাভাগি করে নেয়। কেউ কেউ আবার চোড়ল ঘরে ফিরিয়েও নিয়ে যায়।
বিসর্জনের দিন নদীর পারে বা বাঁধের পাশে মেলা বসে। বাংলা-বিহার সী্তে সুবর্ণরেখার বাংলা-বিহার সী্তে সুবর্ণরেখার তীরে তুলিনে, কাঁসাই নদীর তীরে দেউলঘাটায়, শীলাবতী নদীর উত্সস্থলে, জয়দা, সতীঘাট প্রভৃতি জায়গায় বসে জমজমাট মেলা।
মকর/টুসু পরবের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল পুলি-পিঠে। নানা রকমের পিঠের মধ্যে সবচেয়ে রসনালোভন হল বাঁকা পিঠা/পুর পিঠা/ গড়গড়্যা পিঠা। বিসর্জনের শেষে বাড়ি ফিরে খাওয়া হবে পিঠে। পিঠে ছাড়াও সচ্ছল মানুষের খাদ্য-তালিকায় থাকবে খাসির মাংস আর খিচুড়ি। উৎসবের উত্স নিয়ে নানা মুনির নানা মত। এসব ভাবনা বিদ্বৎকুলের জন্যই সংরক্ষিত থাক। এই মল্লভূমিতে পদার্পণের স্পর্ধা আমার নেই।
দেশের ক্ষীণতোয়া অথচ প্রাণদ নদীর মতোই দীর্ঘকাল ধরে প্রবাহিত প্রাণোচ্ছ্বল এই উৎসবের ধারাটি আজ হয়তো কালের প্রভাবে কলুষমুক্ত থাকতে পারছে না। সংক্রমিত হয়েছে হিন্দুত্ববাদ, দেবতায়ন, সভ্য সমাজের হিনমন্যতা, সচেতন হীনতা, অবহেলা, বারোয়ারি পুজোর উচ্ছৃঙ্খলতা, মাইকের উৎপাত, মত্ত কুৎসিত তাণ্ডবনৃত্য। তবু আশা করব, সব কিছু খুইয়েও আমরা যেমন শুভ সময়ের আশা করি, স্থানীয় লোকসংস্কৃতির এই সুন্দর ধারাটি সময়ের চোরা বালিতে তলিয়ে যাবে না।
জীবনের সাথে প্রতিদিন লড়াই করতে থাকা মানুষগুলোর জীবনে টুসু পরব এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তবে রুখামাটির দেশেও বিশ্বায়ণের ছোঁয়া, একটু যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে টুসু পরব। বেঁচে থাকুক টুসু পরব। টুসু গানে পৌষের কনকনে সন্ধ্যাগুলো জমে উঠুক। শহুরে ফটোগ্রাফারদের আজকাল ভিড় জমে টুসু বিসর্জনের ঘাটগুলোয়। সবাইকে আমন্ত্রন করবো ঘুরে আসুন শুখামাটির দেশে, হারিয়ে যান লোকগানে, গ্রাম্য উৎসবে।
ঘরে ঘরে সন্ধ্যা থেকেই ভেসে আসছে টুসুর নানা গান।
যেমন ‘আমার টুসু গাড়ি চালায়,
মাথায় হেলমেট পড়ে গো…’।
আবার বড় নোট বাতিলের জেরে কালো টাকার কারবারিরা বিপাকে পড়েছে বলেও টুসুর গানে উঠে এসেছে।
তাই শোনা যাচ্ছে—
‘যারা করলো লুকোচুরি, তাদের মুখোশ খুললো গো/
কালো টাকা দূর করতে তাই মোদীবাবু এলো গো’।
তথ্য সহায়তায়: আনন্দবাজার পত্রিকা
loading...
loading...
শুভেচ্ছা জানাবেন প্রিয় কবি মি. ভাণ্ডারী।
loading...
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত হলাম।
আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
শুভকামনা রইল।
জয়গুরু!
loading...