গল্পটি শুরু থেকে শুরু করা যায়, শেষ থেকেও শুরু করা যায়। কল্পনার ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য বা পক্ষপাতিত্ব থাকলেও সত্য ঘটনার ক্ষেত্রে লেখক মাত্রই নিরপেক্ষ। তাই গল্পটি মাঝ হতে অর্থাৎ জ্যামিতির ভাষায় যাকে বলে মধ্যবিন্দু হতে শুরু করছি।
মদনানন্দ মদাশ্বর একজন তন্ত্রসিদ্ধ পুরুষ। সুবিধা হয় বলে সবাই মদনা ওঝা নামেই ডাকে। এই নামে ডাকলেও তার প্রতি সমীহ ও ভীতির কোনো কমতি নেই। সমগ্র দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে তার প্রতাপ। তার কাছেই সবাই ছুটে যায়। তবে আজ মদনা ওঝা ছুটছেন, গন্তব্য আশোক রায় চৌধুরীর বাড়ি। চলতে চলতে তিনি আকাশ কাঁপিয়ে বাতাস দাপিয়ে জপ করছেন, “মা তারা… মা তারা.. অশোক মাস্টার রে, ওরে মাস্টার আমি আসছি, তারা.. তারা.. মা তারা।” তার জপে এক ধরণের উত্তেজনা ছড়িয়ে পরছে শেষ হেমন্তের হিমহিম সকালের মখমল রোদে, মফস্বলের শিশিরসিক্ত মেঠো পথে। রোদ-ছায়ার সাথে শিশিরের সবটুকু সরলতা মিলেমিশে নিপাট নরম তরলতাময় উত্তেজনা ও বিস্ময় সংক্রমিত হচ্ছে মানুষের মনে মনে, ‘আহা অশোক মাস্টার! আহা অশোক মাস্টার.. আহা..।
অশোক রায় চৌধুরী একজন অঙ্ক শিক্ষক- এমন একটি মাত্র বাক্যে অশোক স্যারের পরিচয় দেয়া সম্ভব নয়। তিনি অষ্টম শ্রেণিতে সাধারণ গণিত এবং বিজ্ঞান পড়ান। নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রদের পড়ান ক্যালকুলাস, বিজ্ঞান আর ইংরেজি ব্যাকরণ। সুতরাং তিনি শিক্ষক। তবে আর দশজন শিক্ষক হতে তিনি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। তিনি সাধারণ নন, তিনি বিশেষ।
অশোক রায় চৌধুরী কেনো বিশেষ- এ প্রশ্নের উত্তরও একটি মাত্র বাক্যে দেয়া সম্ভব নয়। অশোক স্যারের আদিপুরুষ ছিলেন শুদ্ধ আর্য, মাতাও তাই। বাপ-দাদার মত তার গায়ের রঙও হলুদাভ শাদা। খাড়া নাক। শক্তপোক্ত দেহের গঠন, ছয় ফুটের কাছাকাছি উচ্চতা। মধ্য পঞ্চাশ বছর বয়সেও সটান মেরুদণ্ড। শরীরে ‘রায় বাহাদুর’ খেতাব পাওয়া জমিদার বাড়ির রক্ত প্রবাহিত হবার আভিজাত্যের ছটা। পাঞ্জাবি বা হাওয়াই শার্ট নয়, তিনি সব সময় ইন করে হালকা রংয়ের শার্টের সাথে গাঢ় রংয়ের প্যান্ট পরেন। কোমড়ে গাঢ় চকোলেট কালারের বেল্ট। পায়ে ঝকঝকে চকমকে পালিশ করা কালো জুতো। যে জনপদে শিক্ষক মানেই সীমাহীন কথা বলা, থামতে না জানা সেখানে তিনি কথা বলেন মেপে মেপে, প্রমিত বাংলায়, শুদ্ধ ইংরেজিতে। গণিত, বিজ্ঞান আর ইংরেজি তিনি শুধু পড়ান না, নিজের আত্মায় ধারণ করেন। যত কুসংস্কার, যত বিজ্ঞানহীন বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণা, যত অসভ্য আচার আচরণ, ঝাড়ফুঁক তন্ত্রমন্ত্র- সবকিছুর বিরুদ্ধে তার সোচ্চার অবস্থান। এই গভীর বিজ্ঞানমনস্কতা আর যুক্তিভিত্তিক চিন্তা তিনি ছাত্রদের মন ও মগজে গেঁথে দিয়েছেন। ছাত্রদের সবাই তাকে অনুসরণ করে, অনুকরণ করে।
ছ’মাস ধরে অশোক স্যার মানসিকভাবে অসুস্থ। প্রথম পর্যায়ে অসুস্থতার লক্ষণগুলোকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। যেমন হঠাৎ করেই তিনি গলায় টাই পরতে শুরু করলেন। এতে কেউ অবাক হয়নি, ভাবখানা এমন যে এটাই স্বাভাবিক। বিপত্তি বাঁধলো যখন টাই-এর সাথে থ্রি পিসের কমপ্লিট স্যুট পরা শুরু করলেন। গ্রীষ্মের তালুফাটা গরমে শার্ট-প্যান্টের ওপরে ওয়েস্ট কোট, কোট, টাই পরে ক্লাশ নিতে গিয়ে দু’বার জ্ঞান হারালেন। স্কুল কমিটি তাকে এসব পরতে নিষেধ করায় প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়ে বললেন, “কোয়্যাইট ইমপৌসিব্যল, আই এম নট এন আনসিভিলাইজড পারসোন।” এর পাশাপাশি হাতে মাখিয়ে ভাত খাওয়ার পরিবর্তে চামুচ ও কাঁটা চামুচ দিয়ে খেতে শুরু করলেন। একদিন বুড়ো পিসি বলেছিলেন, “ওরে অশোক, হাতে মাখিয়ে আরাম করে খা বাবা।” স্যার ক্ষেপে জবাব দিয়েছিলেন, “ইট ইজ সিম্পলি হৌরিব্যল।” হৌরিবলকে হরিবোল ভেবে পিসি থেমে গিয়েছিলেন। একদিন দুই ডজন ডোর বেল এনে টেবিলে লাগালেন। এরপর দিনে-রাতে ইচ্ছে হলেই স্যুইচ টেপেন, ডোর বেলের সার্কিটে কর্কশ স্বরে বেজে ওঠে বিটোভেন বা মোৎসার্ট, অশোক স্যার চেঁচিয়ে ওঠেন, “ওহ গড! হোয়াঠটা বিউঠি..।”
প্রেম আর ষড়যন্ত্রের মত মানসিক রোগও গোপন থাকেনা, অশোক স্যারের মানসিক রোগও গোপন থাকেনি। রাজধানীর নামকরা দুই সাইকিয়াট্রিস্ট (মনরোগ বিশেষজ্ঞ বললে ততটা ভাবগম্ভীর শোনায় না) তার চিকিৎসা করছেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য। শূন্য বললে ভুল হবে, বলা ভালো মাইনাস। সময় গেছে আর স্যার অসুস্থ হতে অসুস্থতর হয়ে পরছেন।
স্যারের দুই ছেলে প্রবাসী। স্ত্রী গত হয়েছেন একযুগ। প্রবাসী পুত্ররা প্রতিদিনই বাবার খোঁজ খবর নেন। তবে এক বুড়ো বিধবা পিসিই স্যারের দেখাশোনা করেন, যত্ন নেন। দিনে দিনে পিসি নিশ্চিত হয়েছেন অশোককে ‘তেনারা’ ধরেছেন। সম্মান বা ভীতি থেকেই পিসি ভুতের নাম নিচ্ছেন না। তেনাদের হাত থেকে ভ্রাতুষ্পুত্রকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র মদনা ওঝা। মদনা ওঝাকে ডাকার কথা বহু আগেই পিসি তুলেছিলেন। কিন্তু অশোক এবং তার পুত্রদ্বয় এ আবদার বারবার নাকচ করে দিয়েছেন। যতবার আবদার নাকচ হয়েছে ততবার পিসির অশ্রু বিসর্জনের বেগ বেড়েছে, খুনখুনে কান্নার দৈর্ঘ্য বেড়েছে। ইতিহাস স্বাক্ষী, এই ব-দ্বীপে পিসি-মাসির ক্রন্দন কৌশল কখনও ব্যর্থ হয়নি। অশোকের বেলায় এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
পুরানো জমিদার বাড়ির সদর দরজার সামনে বেশ ভিড়। হৈচৈ নেই, ফিসফিসিয়ে কথা চলছে। হাওয়ার মৃদু কিন্তু বিরতিহীন গুঞ্জরণ। ভুতের প্রতি পূর্ণ আস্থা থাকার পরও এরা বিশ্বাস করে যে স্যারের কাঁধে সওয়ার হওয়ার মত ভুত এখনো জন্মায়নি। দূর থেকে জটলা দেখে মদনা ওঝা হাঁকডাক থামিয়ে দিয়েছিলেন। খুব নিরবে জটলার কাছে এসে ‘জয় মা তারা.. জয়া মা তারা… অশোক আমি এসেছি” হুংকার দিতেই সবাই বাড়ির ভেতরে ঢোকার জন্য পথ করে দিলো। বুক চিতিয়ে তিনি বাড়ির ভেতর ঢুকলেন। সবার চোখ দরজার ভেতরের খোলা চত্বরে দিকে। আজ স্যারের ভুত ছাড়ানো হবে।
বাড়ির চত্বরে মদন ওঝার মুখোমুখি বসেছেন অশোক স্যার। মদন উচ্চস্বরে কঠিন কঠিন সব মন্ত্র পাঠ করে পরিবেশ সরগরম করে তুলেছেন। তিনি হঠাৎ দাঁড়িয়ে কোনো এক জন্তুর হাড় দিয়ে স্যারকে কেন্দ্র করে একটা বৃত্ত এঁকে দিলেন। এরপর ধূপের ধোয়া মুঠোয় ভরে স্যারের দিকে ছুড়ে দিয়ে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন-
: তোর নাম কি?
স্যারের চোখ দুটো মুহুর্তেই বেশ বড় হয়ে গেছে, ঠোঁটে ধূর্ত হাসি-
: নাম বলবো না। মদনা, তুই ভুত চিনিস, ভুতের নাম জানিস না! হাহাহাহাহা..
এ হাসি স্যারের নয়, অপার্থিব হাসিতে উপস্থিত সবার ভেতর ভয়ের শিহরণ বয়ে গেলো। মদনা ওঝা ধূপের ধোয়া মুঠোয় ভরে মন্ত্র পড়ে ফুঁ দিলেন, এরপর ওই অদৃশ্য ধোঁয়া স্যারের মুখে ছুড়ে দিতেই স্যার যেনো ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলেন। ওঝা পর পর তিনবার একই কাজ করলেন, স্যার ব্যাথায় কুঁকড়ে যেতে যেতে সম্পূর্ণ অপরিচিত কণ্ঠে বললেন-
: বলছি.. সব বলছি মদনা। কষ্ট দিস না, আমার শরীর পুড়ে যাচ্ছে যে.. ওহ মদনা থাম..
ঠোঁটে ক্রুর হাসি এনে ওঝা প্রশ্ন করলো-
: তোর নাম কি?
: আমার নাম মলমবাঁশ।
হাসি মিলিয়ে ওঝার ঠোঁট কাঁপতে শুরু করেছে, লাল চোখে ক্রোধের ঝলকানি। তিন আঙুলে ধূপের ছাই নিয়ে অশোকের দিকে ছুড়ে মারতেই সে কি জান্তব চিৎকার, গলা কাটা পাঠার মত ছটফটাচ্ছে অশোক। ওঝার আঁকা অদৃশ্য গণ্ডি থেকে বের হতে চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। কণ্ঠে পৃথিবীর সমস্ত তাচ্ছিল্য এনে মদন বললো-
: কি রে! এখন কেমন লাগে! তোর এতো স্পর্ধা! মদনানন্দ মদেশ্বের সাথে রসিকতা করিস!
কথা শেষে উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে ফের ধূপের ছাই ছুড়ে দিলেন অশোকের চেহারায়। অশোকের জান্তব কণ্ঠে ভয়-
: আমাকে এভাবে শাস্তি দিস না মদন। আমার নাম সত্যিই মলমবাঁশ। তোর সাথে রসিকতা করার স্পর্ধা আমার নেই, তুই ক্ষমা কর, ছেড়ে দে.. আমায় ছেড়ে দে..
উৎসুক দর্শনার্থীদের মধ্যে একটু আলোড়ন খেলে গেলো, যেনো বলতে চাইছে ‘এই না হলে মদনা ওঝা!’ তবে এই আলোড়ন মদনকে স্পর্শ করেনি, তার কণ্ঠে অবিশ্বাস-
: তোর নাম সত্যিই মলমবাঁশ?
: হু
: এটা কেমন নাম?
: আমাদের নাম এমনই হয় রে মদন..
বিশ্বাস, অবিশ্বাস এবং দ্বিধার ঘুরপাকে খাবি খাচ্ছে ওঝা। চেহারায় এসবের প্রকাশ না ঘটিয়ে জানতে চাইলেন-
: এটা কোন দেশি নাম?
: ইতালীয় নাম।
ওঝা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। দীর্ঘশ্বাস মানেই বেদনার নয়, কোনো কোনো দীর্ঘশ্বাস নির্ভার স্বস্তির প্রকাশ, ওঝার কণ্ঠে স্বস্তিময় কৌতূহল-
: ইটালী থেকে এসেছিস?
: হু
: তোর নামটা আবার বল-
: আমার নাম মলমবাঁশ, আমি নাবিক কলম্বাসের বড় ভাই।
ওঝার স্বরে বিস্ময়-
: কোন কলম্বাস?
: পৃথিবীতে কলম্বাস একজনই, যে ভারতবর্ষ আবিষ্কার করতে গিয়ে আমেরিকায় চলে গিয়েছিলো।
: ওহ.. মা তারা.. মা তারা..
কণ্ঠে সমস্ত রাগ এনে ওঝা জিজ্ঞেস করলো-
: তুই ওর ভেতর ঢুকেছিস কবে?
: বহু আগে, বহু বহু আগে।
: বহু আগে মানে কবে?
: পৌনে দু’ বছর আগে। তখন অবশ্য ও ছিলো না, ছিলো ওর পিতামহের প্রপিতামহ, মানে দাদার দাদা। তার কাঁধে সেই যে চেপেছি, আর নামিনি। বংশানুক্রমে শুধু কাঁধ বদল করেছি।
মদনানন্দ মদেশ্বর তার তান্ত্রিক জীবনে এমন ভুতের সাক্ষাৎ পায়নি, তাই তাড়ানোর আগে জিজ্ঞাসাবাদে তার ক্লান্তি নেই-
: ওর দাদার দাদার কাঁধে চেপেছিলো কেনো?
এবার স্যারের কণ্ঠে বিরক্তি-
: আমাকে ডাকলে, আদর-সোহাগ করে কেউ কাঁধে চাপাতে চাইলে আমি তার কাঁধে চাপবো না!
: মানে?
: তবে খুলেই বলি। মাত্র চার পাঁচশো বছর আগেও আমরা মানে ইউরোপের লোকেরা মনে করতাম তোদের দেশের পথেঘাটে সোনা, হিরে, মণি-মুক্তা, জহরত পরে আছে। তোরা সেসবের মূল্য দিসনা। আমার ভাই কলম্বাস এসব সোনা, রুপা, হিরে, জহরত লুট করার জন্যই ভারতবর্ষে আসতে চেয়েছিলো। কিন্তু লোভে পরে ম্যাপ চুরি করে ভারতবর্ষে চলে এলাম আমি।
: তারপর?
: ভুল মানচিত্রের খপ্পরে পরে কলম্বাস পৌছে গেলো আমেরিকায়। সেখানকার পথে পথে না আছে সোনা, না আছে রূপো, না আছে হিরে জহরত। তবে লুট করা যাদের স্বভাব তাদের রুখবে সাধ্য কার! কলম্বাসের পর ইউরোপীয়রা ওখানকার লোকদের কঁচুকাটা করে, হত্যা করে, জবর দখল করে গড়ে তুললো উপনিবেশ। এরপর-
কথার মাঝখানে থামিয়ে দিলেন ওঝা। কোথাকার কোন কলম্বাস – এর প্রতি তার আগ্রহ নেই, সে জানতে চায় মলমবাঁশের কথা-
: ওরে, তোর কথা বল-
: আমার কথাই তো বলছি। কলম্বাস আমেরিকায় যা করেছে, ভারতবর্ষে তা করতে পারিনি। অথচ লুটে নেবার জন্য ধন সম্পত্তির অভাব ছিলো না। এখানকার মানুষদের সাহস, ঐক্য, জেদের কাছে মার খেতে খেতে, শরীরে মলম লাগাতে লাগাতে মরে গেলাম। কিন্তু অতৃপ্ত লোভের কারণে মুক্তি পেলাম না, ভুত হয়ে বাঁশঝাড়ে নির্বাসনে গেলাম। সময়-সুযোগের অপেক্ষায় প্রতিটি দিন কিভাবে যে কেটেছে। তবে এসময়ই আমার নাম তার প্রথম স্বার্থকতা খুঁজে পায়।
: এরপর কি হলো?
: আমি লুটতে না পারলে কি হবে, আমার জাতভাই ইংরেজরা এসে লুটতে শুরু করলো। তোমাদের ভাষায় বলে চোরে চোরে মাসতুতো ভাই, ওই সমীকরণ অনুযায়ী লুটেরা ইংরেজরা আমার মাসতুতো ভাই। এই মাসতুতো ভাইদের সাহায্য করতে নির্বাসন থেকে ফিরলাম। সাথে নিয়ে এলাম চোখা চোখা গাঁটওয়ালা ক’টা বাঁশ। ওসব বাঁশে ভালো করে মলম মাখালাম, যাতে কারো পশ্চাদ্দেশে ঢুকানোর সময় ব্যাথা না পায়। ব্যাথা টের পায় মলম শুকানোর পর।
: বাঁশ দিয়ে কি করলি?
: আমি কিছু করিনি। অশোকের দাদার দাদা তখন আপন পশ্চাদ্দেশে বংশদণ্ড ঢুকানোর জন্য অস্থির। সে সভ্য হতে চাইলো..
মদনার স্বরে বিস্ময়-
: বলিস কি রে! অশোকের দাদার দাদা অসভ্য ছিলো না কি!
: হাহাহাহা, তার ধারণা সে অসভ্য ছিলো। আমি এসে তার পাগড়ী খুলে দিলাম, ধুতি খুলে দিলাম, পাঞ্জাবি খুলে দিলাম..
: ছি: ছি: ছি: তুই একজন ভদ্দরলোককে ন্যাংটো করে দিলি!
: ন্যাংটো করবো কেনো! ওকে আমি টুপি খুলে হ্যাট পরালাম, ধুতি খুলে পাৎলুন আর পাঞ্জাবি খুলে কোট পরালাম। তাকে বুঝালাম ইংরেজরা যা করে যা বলে সেটাই সভ্যতা, বাকী সব অন্ধকার অসভ্যতা। সেক্ষেত্রে ন্যাংটোর কথা যদি বলিস তবে অশোকের পিতামহের পিতামহ মানসিকভাবে ন্যাংটোই ছিলেন। তা না হলে কি আর কাঁধে চেপে বসতে পারি, এসব উদ্ভুট্টি ধ্যান-ধারণা শিখাতে পারি।
বিস্ময়ের পর বিস্ময়ের ধাক্কায় মদনা ওঝা রীতিমত বিপর্যস্ত, তন্ত্রসিদ্ধ পুরুষ না হলে এতোক্ষণে হাল ছেড়ে দিত। বিপর্যস্ততা গোপন করেই তিনি জানতে চাইলেন-
: অশোককে ছেড়ে যাবি কি না বল?
অশোক স্যারের ভেতর হতে উচ্চস্বরে হেসে ওঠে মলমবাঁশ-
: হাহাহাহাহাহাহাহাহা ধরলে তো ছাড়ার প্রশ্ন আসবে। আমি ওর কাঁধে চেপে আছি সত্য, তবে ওকে ধরিনি। ওই তো বংশগতভাবে আমাকে ধারণ করে আছে। ও আমাকে ছেড়ে দিক। আমাকে ছেড়ে দিতে বল মদনা হাহাহাহাহাহা..
ছেলেভুলানো কথায় আর যাকেই ভুলানো যাক মদনা ওঝাকে ভুলানো যায় না। ধূপের ছাই বুড়ো আঙুলে নিয়ে অশোকের কপালে তিলকের মত পরিয়ে দিলেন। অশোক ছটফটাচ্ছে। মদনার কণ্ঠে হুংকার-
: অশোককে তুই ছাড়বি কি না বল-!
: ছাড়বো.. ছাড়বো..। মনে রাখিস মদনা, যে ভুত রক্তে মিশে যায়, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে প্রবাহিত হয়- ওই ভুত কখনও ছাড়েনা। কারণ, মানুষই ওই ভুতকে লালন-পালন করে, ধারণ করে, বাঁচিয়ে রাখে। ওই ভুত মানুষকে ধরেনা, মানুষই ওই ভুতকে ধরে, এমনভাবে ধরে যে ভুতের মৃত্যু মানেই ওই মানুষের মৃত্যু।
অশোক স্যারের কাঁধ থেকে মলমবাঁশ বিদায় নিয়েছে। স্যার ফের ক্লাশ নিতে শুরু করেছেন। তিনি এখন আর কমপ্লিট স্যুট পরে ক্লাশ নিতে যান না। আগের মত হালকা কালারের ফুল স্লিভ শার্ট, গাঢ় রংয়ের ইংলিশ প্যান্ট আর কালো জুতো পরেই স্কুলে যান, ক্লাশ নেন। মানসিকভাবে অসুস্থ থাকা সময়ের কোনো স্মৃতি তার নেই। ওদিকে মদনা ওঝার নাম-ডাক এবং প্রভাব আরও বেড়েছে। ইদানিং সে ইংরেজিতেও মন্ত্র পাঠ করে। ব্ল্যাক ম্যাজিক, ভুডোইজম, প্যারা নরমাল এক্টিভিটিজের আর্ট-কালচার বিষয়ে কথা বলে। সাধনার অংশ হিসেবে জেলা সদরের মহিউদ্দীন দর্জির কাছ থেকে সে দুই সেট ইংলিশ স্যুট বানিয়েছে। এক একটা গাঢ় তমসার রাতে নিমগ্ন তন্ত্র সাধনার মাঝে ইউরোপের কামরুপ কামাক্ষ্যা হাতছানি দিয়ে তাকে ডাকে.. “আয়.. আয়.. আয়..।”
loading...
loading...
পরাবাস্তবতার মিশেলে অদ্ভুত এক অসাধারণ গল্প। অভিনন্দন মি. আবু সাঈদ আহমেদ।
loading...
loading...
দাদা, কামরূপ কামাখ্যা মন্দির কি আরেকটা ইউরোপেও আছে? আমিতো জানি ভারতের আসাম রাজ্যের গৌহাটি অদূরে কামরূপ জেলায় কামাখ্যা দেবীর মন্দির। তবে দাদা যাইহোক, আপনার লেখা গল্পটা হাসতে হাসতেই পড়তে হয়েছে। আসলেই সত্যি যে, মানুষকে ভূতে ধরে না! ভূতকেই মানুষে ধরে লালিতপালিত করে। এটা চির বাস্তব!
loading...
loading...
মদনানন্দ মদাশ্বর একজন তন্ত্রসিদ্ধ পুরুষ। মলমবাঁশ। চরিত্রের নাম নিবর্বাচনে আপনার তুলনা কই পাই।
loading...
loading...
মদনানন্দ মদাশ্বর একজন তন্ত্রসিদ্ধ পুরুষ। সুবিধা হয় বলে সবাই মদনা ওঝা নামেই ডাকে। এই নামে ডাকলেও তার প্রতি সমীহ ও ভীতির কোনো কমতি নেই। সমগ্র দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে তার প্রতাপ।
loading...
loading...
অসাধারণ অণুগল্প।
loading...
loading...
দারুণ রম্য গল্প দাদা ভাই।
loading...
loading...
* গল্প ভালো লেগেছে সুপ্রিয়….
loading...
loading...
loading...
loading...
ভীষণ মুগ্ধ হয়ে পড়লাম!
loading...
loading...
শুভকামনা অশেষ
loading...
loading...