গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকগান পঞ্চম পর্ব- যাত্রাগান-৫
যাত্রাপালা- সিঁথির বিবর্ণ সিঁদুর
সম্পাদনা, প্রযোজনা ও নির্দেশনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
সাধারণের জীবন ধর্মই হলো লোকসংস্কৃতি৷ গ্রামে গ্রামে কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষকে কেন্দ্র করেই লোকসংস্কৃতির উদ্ভব৷ গ্রামীণ জীবনের একটি যাত্রাপালা সহজ এবং সাধারণ জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ এটারই পোশাকি রূপ হলো নাটক৷ তাই সহজেই বলা যায় আধুনিক সংস্কৃতি তথা সাহিত্যের ভিত্তিই হলো লোকসংস্কৃতি বা লোকসাহিত্য৷”
অন্ধকার রাতে বিশাল প্যান্ডেলের মধ্যে শয়ে শয়ে মানুষকে বসিয়ে রাখার মত গল্প কোথায়? মন মাতানো গল্প লেখার লোক কোথায়? একদা তেমন শক্তিশালী কলম নিয়ে ময়দানে এসেছিলেন ব্রজেন্দ্রকুমার দে। তাঁর উত্তরসূরি যদি কেউ হন, তিনি ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়। তার পর? না, তেমন শক্তিশালী আর কেউ এলেন না। যাঁরা এলেন তাঁরা উপহার দিলেন কিছু নাচ-গান, হইহুল্লোড়। ব্যস, ওই দিয়েই ভাবলেন, বেশ সমসাময়িক করে তোলা গেল যাত্রাকে। ঘণ্টা! মানুষ শুনতে চায় গল্প। চরিত্র কিংবা আদর্শের সংঘাত। কেবল কিছু মানুষের স্টেজে হাঁটাচলা দিয়ে কিস্যু হবে না।’
মহাভারতে ভীষ্ম চোখের সামনে তিলে তিলে ক্ষয়ে যেতে দেখেছিলেন আস্ত এক রাজবংশ। বাঙালির যাত্রা শিল্পেও আছেন এক ভীষ্ম। ইন্ডাস্ট্রি তাঁর নাম দিয়েছে ‘বড়দা’। বড় ভাই নয়, প্রপিতামহ বলা যায় তাঁকে। বয়স ৮৩। তিনি মাখনলাল নট্ট। ঠিকানা শোভাবাজার। হরচন্দ্র মল্লিক স্ট্রিট। থাকেন যে বাড়িখানায়, তার বয়স সওয়াশো বছর, খসে পড়েছে পলস্তারা। সিঁড়িতে আলো নেই, দিনের বেলাতেই ঝুঁঝকো আঁধার। পা টিপে প্রায় হাতড়ে তিনতলায় উঠতে হল ভীষ্মের দেখা পেতে। ফোন করা ছিল। পৌঁছতে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন নট্ট কোম্পানির মাখনলাল। কী জানতে চাই, তা শুনে চোখের দিকে সোজা তাকালেন।
যাত্রাকে তা হলে বাঁচাবে কে? পুঁজি? একটু-আধটু হলেও, যাত্রা-পুনরুজ্জীবনে সহযোগিতার হাত কিন্তু বাড়িয়েছিল ব্যবসা সাম্রাজ্য। মাল্টিন্যাশনাল। তাঁদের প্ররোচনায় যাত্রার সংলাপে গুঁজে দেওয়া হচ্ছিল ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন। কী ভাবে? ধরা যাক, বৃদ্ধ স্বামী নিরুদ্দেশ। অনেক দিন পরে ঘরে ফিরলেন তিনি। তাঁকে দেখে ছুটে এলেন স্ত্রী। ‘ওগো কোথায় ছিলে?’ স্বামীর উত্তর, ‘সে অনেক কথা, পরে বলছি, আগে জল দাও।’ শুনে স্ত্রীর জবাব, ‘জল খাবে কেন গো, তোমার জন্য অমুক কোল্ড ড্রিংক আনছি!’ বা, বাচ্চা ছেলে অসুস্থ। তার মা স্বামীর উদ্দেশে বললেন, ‘ছেলিডারে এট্টু তমুক এনার্জি ড্রিংক খাওয়ানি লাগে। তা পাই কই?’ দরিদ্র স্বামী অনেক কষ্টে জোগাড় করে আনেন বলবর্ধক পানীয়টি এবং সারা স্টেজ ঘুরে স্ত্রীকে দেখাতে থাকেন। স্পটলাইটের আলো পড়ে বোতলের গায়ে ব্র্যান্ডের উপর। অবশ্য, বেশি দিন এগোয়নি এই ব্যবস্থা। মরা গাঙে যে আর কখনও বান আসবে না, সেটা বুঝে গিয়ে ব্র্যান্ড মালিকরা হাত গুটিয়ে নিয়েছেন যাত্রা থেকে।
এখন কোনও আশ্চর্য নতুন এনার্জি ড্রিংক যাত্রাকে আবার চনমনে করে তুলবে, সে আশা কারও নেই। বাঙালির আদরের এক শিল্প, অতএব, এখন দাঁড়িয়ে লাস্ট সিনে। যবনিকার অপেক্ষায়।
গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকগান পঞ্চম পর্ব- যাত্রাগান-৫
যাত্রাপালা- সিঁথির বিবর্ণ সিঁদুর
সম্পাদনা, প্রযোজনা ও নির্দেশনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
যাত্রাপালার প্রথম দৃশ্য:
দেখা যায় জি. টি. রোডের একাংশ-রাণীগঞ্জ মোড়ের চৌমাথায় সেদিন হঠাৎ একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। বরযাত্রীদের বাসের পিছনে দ্রুতগামী একটা মালবাহী ট্রাক এসে সজোরে ধাক্কা মারলো। মারমুখী জনতা পথ অবরোধ করলো। পুলিশ এলো। কিন্তু ক্রুদ্ধ জনতাকে শান্ত করা গেল না। পুলিশ শান্তিরক্ষার জন্য গুলি চালায়। সেই গুলিতে সন্দীপ…..
দৃশ্যান্তর:
“মরে গেছে!” সুদীপ্তার কণ্ঠে বিরাট জিজ্ঞাসা…???
সুদীপ্তাকে শান্ত করলো ওর ভাই অভয়।
অভয়:
মরে নি দিদি, গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলি লেগেছে বাঁ পায়ে। ডাক্তার বলেছে- পা টা কেটে বাদ দিতে হবে নইলে সারা শরীর বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে।”
হাউ-মাউ করে কেঁদে ওঠে সুদীপ্তা। এই তো জীবন! জীবনের প্রতি পদে পদে যে এত ভয়ংকর বিপদ লুকিয়ে থাকে তা কি জানতো সুদীপ্তা। কিছুই জানলো না সে। মাঝখানে একটা অবিচারের ঝড় এসে তার জীবনটা তছনছ করে দিল। সুদীপ্তা লগ্নভ্রষ্টা। কেউ আর তাকে বিয়ে করবে না। গভীর রাতে যখন দুঃসংবাদ পৌঁছাল তখন বিয়ের সানাই আর বাজলো না। এক এক করে সব আলো নিভে গিয়েছিল তখন। গভীর শোকে পরিবারবর্গ সবাই ভেঙে পড়েছিল।
নাটকের পটভূমিকা এমনি করেই অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে সন্দীপ আর সুদীপ্তার নাট্যসংলাপে-
সন্দীপ:
আমাকে তুমি ভুলে যেও সুদীপ্তা! মনে করবে আমি নেই। কোন এক কুক্ষণে তুমি তাকে ভালবেসেছিলে। সেই ভালবাসাই তোমার জীবনে অভিশাপ হয়ে নেমে এলো। আমার মত একটা বিকলাঙ্গকে জীবনের সাথী করে তোমার জীবনকে অভিশপ্ত করে তোল না।
সুদীপ্তা:
অমন কথা বলো না সন্দীপ! না সন্দীপ, ছিঃ সন্দীপ, এমন কথা বলতে নেই। তোমাকে আমি কোনদিনই ভুলতে পারবো না।
সন্দীপ:
আমাকে নিয়ে তুমি কোনদিনই সুখী হতে পারবে না সুদীপ্তা। তুমি স্বামী চাও, পুত্র চাও, সংসার চাও, সেইসুখ বোধ হয় আমি কোনদিনই দিতে পারবো না। উপরন্তু আমি তোমার জীবনে একটা বোঝা হয়ে থাকবো। বল সুদীপ্তা কি তুমি চাও?
সুদীপ্তা:
আমি চাই তোমার মত উদ্দীপ্ত যৌবনভরা পুরুষ যে সুখে দুঃখে চিরকাল আমার পাশে পাশে থাকবে। তোমাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন সন্দীপ। তুমি অমত করো না। আমাকে তোমার চলার পথে জীবনসাথী করে নাও। লগ্নভ্রষ্টার সিঁথিতে আবার তুমি সিঁদুর পরিয়ে দাও।
[সাঁঝের সানাই বেজে ওঠে]
তারপর শেষদৃশ্যে গোধূলি লগ্নে সন্দীপ সুদীপ্তার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিল। সুদীপ্তার সিঁথির সিঁদুর আজও বিবর্ণ হয়ে যায় নি।
মুলকাহিনী ও নাট্য-সংলাপ-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী। পরিবেশনায় ভাণ্ডারী অপেরা। নির্দেশনা ও সন্দীপের ভূমিকায় নট-নাট্যকার লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী। সামাজিক যাত্রাপালাটি গ্রামে গঞ্জে বহু কৃতিত্বের সাথে পরিবেশিত হয়।
loading...
loading...
গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকগানের দৃশায়ণ পড়লাম মি. ভাণ্ডারী। শুভ সকাল।
loading...
সুন্দর মন্তব্যে হৃদয় ভরে যায়। শারদীয়া অভিনন্দন রইল।
সাথে থাকুন। পাশে রাখুন, জয়গুরু!
loading...
পড়লাম কবি।
loading...
ধন্যবাদ। শারদীয়া অভিনন্দন রইল।
সাথে থাকুন। পাশে রাখুন, জয়গুরু!
loading...
দারুণ সব তথ্যসংবলিত উপস্থাপন। চলুক দাদা। সাথে আছি। আগাম শারদীয়া শুভেচ্ছা থাকলো।
loading...
ধন্যবাদ জানাই আপনাকে।
মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন।
জয়গুরু!
loading...
যাত্রাপালা- সিঁথির বিবর্ণ সিঁদুর
সম্পাদনা, প্রযোজনা ও নির্দেশনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।
প্রণাম জানাই প্রিয় কবি দা।
loading...
গীতাংশ: সুর আধুনিক
সে আমার রিয়া বোন, বড় আদরের রিয়া বোন।
লিখছি। তবে সময়ের অপেক্ষায়।
পরে প্রকাশ দেব।
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম প্রিয়কবি বোন আমার।
আপনার পাতায় যেতে না পারার জন্য বিশেষ দুঃখিত।
মার্জনা চাইছি।
শারদীয়া শুভেচ্ছা গ্রহণ করুণ।
সাথে থাকবেন- এটা প্রত্যাশা রাখি।
জয়গুরু!
loading...