বেকার শব্দটির অর্থ অশান্তি, জ্বালা। বেকার মানুষদের অনেকে শয়তানের লাঠিও মনে করে থাকে। বেকার থাকলে শয়তান নাকি কাঁধে চেপে বসে। আসলেই সত্যি! বেকার মানুষ বেকারের সাথেই আড্ডা বেশি দিয়ে থাকে। সবার কাঁধেই যখন শয়তান, তখন শয়তানি কর্মের দিকেই খেয়াল বেশি। শয়তান শয়তানের আড্ডা থেকেই অপকর্মগুলো মনের আনন্দে করে থাকে। কারণ, বেকার হয়ে থাকা মানুষের সময় শেষ হতে চায় না। তাই যে-কোনও বাজে কাজে সময় ব্যয় করে থাকে।
আবার বেকারত্বের সময় নাকি খুবই লম্বা। ঘড়ির কাটায় একঘন্টা, বেকার থাকা মানুষটার কাছে তা দুই ঘণ্টার মতো। বেকারদের সময় শেষ হতে চায় না! তাই বেকার মানুষের হাতে প্রচুর সময় থাকে বলেই, বেকার মানুষ অসৎ-কর্মে সময় ব্যয় করে বেশি। যেমন– তাস-খেলা, জুয়া-খেলা, বখাটেপনা করা, শয়তানকে বাঁশ দেওয়া। সৎ-কর্মে যদি সময়ই দিতে পারতো, তাহলে তো আর বেকার থাকতো না। যদি কিছু-না-কিছু অর্থ উপার্জন হতো, তাহলে দূর হতো বেকারের বেকারত্ব। কিন্তু না, তা আর হয় না বিধায়, মানুষ বেকার থাকাকালীন সময়ে সামান্য অর্থের পিছনে সবসময় ঘুরে বেড়ায়। সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে তাঁরা রাজনৈতিক সভা মিটিঙে যোগ দেয়। রাজপথে মিছিল করে। দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অংশ নেয়।
অসাধু প্রভাবশালীদের কুপ্রস্তাবে সারা দিয়ে মারা-মারি, খুনা-খুনিও করে থাকে। বেকার মানুষ এসব করে থাকে শয়তানের প্রবঞ্চনায়। ঐ-যে, কথায় আছে, “বেকার হলো শয়তানের লাঠি।” তাই অতি সহজেই ঐসব কুকর্মে জরিয়ে পড়া। অনেকে আবার ‘বেকারত্ব’কে জীবনের অভিশাপ বলেও মনে করে থাকে। সময় সময় পত্রিকায় শিরোনাম হয়, “বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বাঁচতে চায়।” এতে কেউ বাঁচে, কেউ আর বাঁচতে পারে না। বেকার থাকতে চায় না, এমন মানুষগুলো বেকারত্বের যন্ত্রণা নীরবে সয়ে যায়। কেউ আবার ইচ্ছে করেই বেকার থাকে। তাঁরা বেকার থাকা সৌখিনতা মনে করে। যাঁদের বেকার থেকে চলার সাধ্য আছে, তাঁরাই বেকার থেকে স্বর্গসুখ পেয়ে থাকে। আর যাঁদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তাঁদের অবস্থা যে কীরকম হয়ে থাকে; তা নিজে থেকেই অনুমান করতে পারি।
এই জীবনে নিজেও অনেকবার বেকার ছিলাম। বেকারত্বের জ্বালা তখন থেকে আমার শেখা। বেকার থাকাকালীন সময়ে মানুষের রূপ দেখেছি। ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবদের নীতি উপলব্ধি করেছি। অনেকের করুণার পাত্র হয়েছি। যাঁদের বড়ভাই মনে করতাম, তাঁরা ব্যবহার করেছে চাকর হিসেবে। তাঁদের চাকরগিরিও করেছি। অনেকে সুযোগ বুঝে কোপও মেরেছে। সেই কোপে শরীরে ঘা হয়ে গিয়েছিল। তাও নীরবে সয়েছি। শুনেছি ঘরের মানুষটির কটুকথাও। এখন বেকার নই।
বর্তমানে ছোট্টো একটা চাকরি করি। সকাল থেকে সারাদিন থাকি অফিসের কাজে। তাও রাত দশটা পর্যন্ত। বেশি পরিশ্রমের কাজ নয়। শুধু টেনশনের কাজ। শারীরিক কোনও পরিশ্রম নয়। হাঁটা-চলার মাঝে মানসিক পরিশ্রম। তারপরও সময়-সময় অনেক বিরক্ত হয়ে পড়ি। তার মানে হলো, ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।’ শুনেছি নিজ কর্মে বিরক্তবোধ মানে কপালে অলক্ষ্মী ডেকে আনা। তা আমি আনতে রাজি নই। পরিশ্রম যতই হোক-না-কেন, কর্ম আমি চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক। তাই আর নিজগুণে শয়তান ডেকে এনে আদর করে কাঁধে বসাতে রাজি নই।
কিন্তু বর্তমানে অনেক শিক্ষিত বেকার ছেলেদের চোরের মতও ঘুরতে দেখি। ওরা ইচ্ছে করলে যে-কোনও কাজ করতে পারে, কিন্তু লোকচক্ষুর ভয়ে ছোট-খাটো কাজ করতে চায় না। তাই অনেক শিক্ষিত বেকার ছেলেদের সংসারের বোঝা হয়ে থাকতে দেখি। বেকারত্ব জীবনে অপবাদের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে মরতেও দেখি। কিন্তু কেন? আমি এই সুন্দর পৃথিবীতে আয়ু থাকতে মরতে চাই না। প্রয়োজনে বাঘের সাথে লড়াই করে বাঁচবো। তাই আমি বেকার থাকতে চাই না। কারোর মাথার বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। কারোর কাছে দশ টাকা ধারকর্জ করতে চাই না। বড় অঙ্কের দেনার চেয়ে ছোট অঙ্কের দেনার ওজন অনেক বেশি। ছোট দেনার জ্বালাও বেশি। সময়-সময় মান-ইজ্জত নিয়ে টানা-টানি শুরু হয়।
তাই সময়তে বেকার থাকলেও ধার-কর্জের ঝামেলায় জড়াই না। চাকরি না থাকলে বেকার হয়ে ঘরে বসে থাকি না। একসময় বুড়ো- বুড়িদের মুখে শোনা যেত, ‘বেকার থাকার চেয়ে পেটে-ভাতে কামলা খাটাও ভালো।’ আমি সেটাই করি। নিজের হাত খরচের টাকাটা আসলে-ও-বা ক্ষতি কী! টেক্সটাইল মিলে যখন চাকরি করতাম, তখন সময়-সময় চাকরি থাকতো না, বেকার হয়ে পড়তাম। কারণটা ছিল, ব্যক্তিমালিকানাধীন টেক্সটাইল মিলে চাকরি কোনও নিশ্চয়তা ছিল না। মানুষের নিশ্বাসের যেমন বিশ্বাস নেই, ব্যক্তিমালিকানাধীন চাকরিরও তেমন নিশ্চয়তা ছিল না। চাকরি না থাকলেও ঘাবড়াতাম না। এখনো না। বেকার থাকতে হবে এমন আভাস পেলেই, কোমরে গামছা বেঁধে নেমে পড়ি অন্য কাজে। তাতে আমি একটুও লজ্জাবোধ করি না। করি শুধু সংসারের চিন্তা। এই চিন্তাটাই বেশি মাথায় রাখি। আর বেকারত্ব’কে ভয় করি।
loading...
loading...
টপিক টা খুব ভাল ছিল কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে একই কথা আপনি বার বার বলেই চলেছেন। আর কেমন যেন অগোছালো লেগেছে আমার কাছে।
লেখাটা লেখার সময় মনে হয় অন্য কোন বিষয় নিয়ে খুব টেনশনে ছিলেন।
ভাল থাকুন
loading...
আগোছালো লাগতেও পারে দাদা। সবার লেখা সবার কাছে যে প্রিয় হতে হবে,ত্য তো নয়! তবু আপনি পড়েছেন জেনে আমি খুশি হয়েছি দাদা। আপনার জন্য শুভকামনা।
loading...
এই সব দূর হবে লোকসংখ্যা কমলে।
loading...
লোকসংখ্যা কোনও ফ্যাক্টর নয় দাদা। কাজ করার মতো মন-মানসিকতার দরকার। চোখের সামনে অনেক বেকার দেখি। ওরা সুস্থ। কাজ করার ক্ষমতা আছে। কিন্তু কাজ করার মতো মন-মানসিকতা নেই। ওদের দেছে নিজের বেকারত্ব সময়ের কথা মনে পড়ে।
loading...
বেকারত্বকে আমি ভয় পাই। দুঃখজনক যে আমি নিজেও বেকার জীবন যাপন করছি।
loading...
তবু্ও তো যে-কোনো একটা কাজ নিয়েই আছেন শ্রদ্ধেয় দাদা। চোখের সামনে অনেক বেকার দেখি। ওরা সুস্থ। কাজ করার ক্ষমতা আছে। কিন্তু কাজ করার মতো মন-মানসিকতা নেই। ওদের দেছে নিজের বেকারত্ব সময়ের কথা মনে পড়ে।
loading...
প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ বেকারের জন্ম দিচ্ছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি।
শিক্ষার অভিমান নিয়ে তারা প্রবেশ করে সংসারে।
পরিবার হা পিত্যেশ করে বসে থাকে কবে চাকরি জুটবে।
বেকারত্বের জ্বালা মুছিয়ে দিতে সরকার এগিয়ে আসুক
এটা আমার, আপনার, আমাদের সকলের দাবী।
লেখককে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
সাথে থাকবেন। জয়গুরু!
loading...
আপনার সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অজস্র ধন্যবাদ। সাথে শুভকামনা। জয় গুরু জয় গুরু।
loading...
যাপিত জীবনের এই গল্প একসময় সম্ভবত আমার জীবনেও অতিবাহিত হয়েছে নিতাই বাবু। খুব বেশী চেনা চেনা, অসম্ভব সত্যতার আভাষ আছে স্বীকার করি।
loading...
আমার যাপিত জীবনে এমনও সময় গিয়েছে যে, বছরে দুই তিনবার বেকার হয়ে পড়তাম। কিন্তু বেশি দিন বেকার থাকতে পারতাম না। মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।
loading...
বেকারত্বের বাস্তবতা মানে অসহায়ত্ব।
loading...
ঠিকই বলেছেন শ্রদ্ধেয় দিদি। আমি নিজেই বেকারত্বের ভুক্তভুগী।
loading...
আপনার ভাবনার প্রতি আমি সম্মান জানাই।
loading...
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
loading...