প্যালেষ্টাইনে প্রথম প্রহর…
তেল আবিব হতে শেষ মুহুর্তে হোটেল বুক করার সময় ইচ্ছে করেই পুরানো জেরুজালেমের একটা হোটেল বুক করেছিলাম। নাম হোটেল হাশেমি। এক শহর হতে অন্য শহরে আসতে একঘণ্টার বাস জার্নি। বাসে উঠে ঠিকমত বসার আগেই ড্রাইভার জানালো চলে এসেছি। জেরুজালেমের সেন্ট্রাল বাস ষ্টেশন। লোকে লোকারন্য। দলে দল পর্যটকরা আসছে। তিন ধর্মের পূণ্যভূমি এই শহরকে ঘিরে আছে অনেক ইতিহাস। এ ইতিহাস আমাদের যেমন নিয়ে যায় হাজার বছর আগে, তেমনি সমসাময়িক পটভূমিতে। এ মুহূর্তে ইতিহাস এবং তাকে ঘিরে স্থানীয়দের কনফ্লিক্ট নিয়ে লিখতে চাইনা নিরাপত্তার কথা ভেবে। তবে এখন আমি প্যালেষ্টাইনে। দামাস্কাস গেইটে ট্যাক্সি ছেড়ে পায়ে হেঁটে চলে এসেছি হোটেলে। বুঝতেই পারিনি নীরবে অতিক্রম করেছি এমন একটা সীমানা যাকে দেখার স্বপ্ন আজীবন লালন করেছি…
ছবির ব্যাকগ্রাউণ্ডে এই সেই দেয়াল যা ইসরাইল ও প্যালেষ্টাইনকে আলাদা করে। দরজাটাই দামস্কাস গেইট। পাশেই দুটো বাস ষ্টেশন। একটা যাত্রীদের নিয়ে যায় বেথেলহেম এবং অন্যটা প্যালেষ্টাইনের অলিখিত অস্থায়ী রাজধানী রামাল্লায়।
ঘড়ির কাটায় স্থানীয় সময় ঠিক কটায় ঘুম ভাঙ্গলও আন্দাজ করতে পারলাম না। স্মার্ট ফোন, স্মার্ট ঘড়ি দু’টোর একটাও স্থানীয় সময় দেখাচ্ছে না। একটাতে ক্যালিফোর্নিয়া অন্যটাতে এখনো নিজ অঙ্গরাজ্য নিউমেক্সিকোর সময়। অথচ আমার দরকার স্থানীয় সময় এবং সাথে বাংলাদেশ ও পেরুর। ১৪ ঘণ্টা বিরামহীন জার্নির পর এমনিতেই ক্লান্ত। তার উপর ক্ষুধা। ডিনার করা হয়নি এই ভেবে বিকাল ৬টায় দেয়া ফ্লাইটের ডিনারই হয়ত রাত কাটিয়ে দেবার জন্যে যথেষ্ট। কিন্তু লম্বা একটা গোসল দিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পরতেই পেট আওয়াজ দিতে শুরু করল। ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে।
ঘুম খুব একটা লম্বা হয়নি। পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি ঘোর অন্ধকার। হঠাৎ করেই অংকটা মাথায় এলো; এয়ারপোর্টে নেমে কষে নিয়েছিলাম। আমার শহরের চাইতে ৯ ঘণ্টা এগিয়ে ইসরাইলের সময়। সে হিসাবে এখন ভোর প্রায় ৪টা। দুয়েকটা গাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছে বাইরে। রাস্তা পরিষ্কার করার ট্রাকটাকে দেখলাম বেশ সময় নিয়ে পরিষ্কার করছে।
বাইরে তাকালে মনে হবে ঢাকার কোন গলির কার্বন কপি। জরাজীর্ণ দালানের অনেক জায়গায় পলিস্তরা খসে খসে পরছে। ছাদের উপর পুরানো দিনের এন্টেনা। জানালার পর্দাগুলোও স্যাঁতস্যাঁতে। শুধু বাকি ছিল মসজিদ হতে আজানের ধ্বনি ভেসে আসার।
ভোরের আলো ফুটতেই পেটের খিদা জ্যামিতিক হারে বাড়তে শুরু করল। অপেক্ষা করার সময় ছিলনা। নীচে নামতেই দেখি হোটেলের মুল ফটক তখনো তালা দেয়া। রেসিপশনে কেউ নেই। অজান্তেই মুখ হতে অশ্রাব্য একটা গালি বেরিয়ে এলো। লবিতে ফ্রি কফির ব্যবস্থা ছিল। এক কাপ কফি হাতে নিয়ে ফিরে এলাম রুমে।
৮টার দিকে দ্বিতীয় চেষ্টাতে বেরিয়ে পরলাম। তেল আবিব। আধুনিক একটা শহর। চারদিক চকচক করছে। রুম হতে দেখা পুরানো বাড়িটা মনে হল একটা যাদুঘর। মানুষের কোলাহল বাড়ছে রাস্তায়। সাথে গাড়ি। হাঁটছি অলস গতিতে। উদ্দেশ্যবিহীন। একটু এগুতেই চোখে পরল দৃশ্যটা। সমুদ্র! রাশি রাশি ঢেউ আছড়ে পরছে কূলে। সাত পাঁচ না ভেবে দ্রুত রওয়ানা দিলাম ওদিকটায়। ১১টার দিকে রওয়ানা দেব জেরুজালেমের দিকে। সময় কম। এ শহরে যা দেখার অল্প সময়ের ভেতরই দেখে নিতে হবে।
বীচের কাছাকাছি আসতেই দেখলাম অসংখ্য মানুষ দৌড়চ্ছে। মেয়েদের মিছিলটা একটু লম্বা। অনেকের পরনের কাপড় একবারেই সংক্ষিপ্ত। ২৪ ঘণ্টারও কম সময় এ দেশে। এরই ভেতর একটা উপসংহার টানলে বোধহয় ভুল হবেনা। এ দেশের মেয়েরা বিপদজনক সুন্দরী। কেবল গায়ের রঙ আর চেহারাই নয়, শরীর সঠিক রাখার মাপকাঠিতেও ওরা এগিয়ে। ছেলেদের সৌন্দর্য বিচার করার দায়িত্ব আমার নয়। কিন্তু এদের দিকে তাকালেও মনে হবে ঈশ্বর হয়ত নিজ হাতে তৈরি করেছেন। অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর পেটের ক্ষুধাটা চরম পর্যায়ে চলে গেল। আর অপেক্ষা নয়।
বীচের পাশেই দেখা মিলল মাকডোনাল্ডের। পরিচিত দোকানের গন্ধ পেয়ে ওদিকে রওয়ানা দিতে দেরী করলাম না। কিন্তু হতাশ হলাম। ভেতরে কোন আলো নেই। একেবারেই অন্ধকার। দেখে মনে হল হয়ত মেরামত চলছে।
এবার হোটেলের ফেরার রাস্তা ধরলাম। ওখানে বেশকটা খাবার দোকান রাতেই দেখেছি। দরদাম অথবা প্রকারভেদ খুঁজে দেখার মত অবস্থা ছিলনা। ঢুকে পরলাম ছিমছাম একটা ক্যাফেতে। মেনু হিব্রু ভাষায়, তাই কিছু বুঝতে পারলাম না। তবে মেনুতে ছবি থাকায় আঙ্গুল তুলে ঐদিকটায় ইঙ্গিত করলাম।
সাজগোজে পরিপক্ব সুপার আবেদনময়ী মেয়েটা ভুবন-জুড়ানো হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘এদিকটায় এই প্রথম বুঝি?’
আমিও সহজ ভাবে উত্তর দিলাম। ‘একেবারে ব্রান্ড নিউ। চব্বিশ ঘণ্টারও কম।
সময় নিয়ে রান্না করলো। প্লেট যখন টেবিলে রেখে গেল আমার চোখ ছানাবড়া। বিশাল আয়োজন। চার টুকরো পাউরুটি। টমেটো সসে ডুবানো দুটো ডিম ভাজি। শসা ও টমেটোর সালাদ। সাথে অলিভ ওয়েল। এবং ফ্রেশ এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস। তেল আবিবের প্রথম ব্রেকফাস্ট। এক কথায় ইসরায়েলে আমার প্রথম খাবার।
loading...
loading...
মুগ্ধতার সাথে প্রথম বা আরোহন পর্ব পড়লাম। সাথে ব্রেকফাস্ট ওয়াচডগ ভাই।
loading...
সাথে থাকুন।
loading...
তেল আবিবের নাস্তা বলে কথা। ভীষণ কিউরিসিটিতে ভুগছি। কন্টিনিউ চাই স্যার।
loading...
ঘুম ভাঙ্গলো মাত্র। পেট চো চো করছে। তেল আবিবের নাস্তাটা মিস করছি। বিশেষ করে এর আকার…
loading...
সুপ্রভাত। দেরি করবেন না। খুঁজে দেখুন ঐ ধরণের কিছু পাওয়া যায় কিনা।
loading...
শুরুবাদ পড়লাম। আগ্রহী হয়ে উঠলাম।
loading...
loading...
চমৎকার বর্ণনা। সাথে থাকলাম দাদা।
loading...
মুগ্ধ পাঠ।
loading...
অসাধারণ জার্নি।
loading...
তেল আবিব কি ইসরাঈলের শহর নাকি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে ইসরাঈল?? ভালো লেগেছে তেল আবিব পূর্ব।
loading...
ছবিতে খাবারগুলো কিন্তু বেশ লোভনীয়।
loading...