অণুগল্প: অনুভব

ছায়াসঙ্গী গল্পগ্রন্থের আরও একটি অণুগল্প…

অনুভব

ঠিক ভরদুপুরে বাস থেকে নামল রেজাউল।
প্রচন্ড গরমে মাথার চাঁদি ফেটে যাবার দশা। পিচ ঢালা পথটিও উত্তপ্ত। কেমন গরমের ভাপ আসছে রাস্তা থেকে। জায়গায় জায়গায় পিচ গলে গেছে, দেখে স্পষ্ট বোঝা যায়।

প্রচণ্ড পিপাসা নিয়ে রেজাউল গলির মাথার মিষ্টির দোকানে ঢোকে। ক্যাশে বসা লোকটির জিজ্ঞাসু চাহনিকে উপেক্ষা করে টেবিলে রাখা গ্লাস নিয়ে পানি খায়। দ্বিতীয় গ্লাস শেষ করে ক্যাশের অপরিচিত লোকটির দিকে তাকিয়ে হাসে। এই সিটে এর আগে অমর ঘোষ বসতেন। মনে হয় এর বাবা।

সে মিষ্টির দাম জিজ্ঞেস করে। সবচেয়ে কম দামের কেজি খানেক মিষ্টি নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে হেঁটে চলে। পছন্দের মিষ্টিগুলো কিনতে না পারার ব্যর্থতা আর প্রচন্ড গরমে কাকের মত মুখ হা করা অনুভূতি- এসব ওর হৃদয়ে মিশ্র অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। বৃদ্ধ বাবা সহ ঘরে আরো ছয়জন সদস্য। এক কেজি মিষ্টিতে কি হবে? কিন্তু এর থেকে বেশী কিনবার সামর্থ্যও যে তার নাই। এখন সবেমাত্র মাসের ২৫ তারিখ। সামনের মাসের ১০ তারিখে বেতন হবে। শহরের বাসায় বউ ছেলেমেয়ে… এখানে বাবা-মা আর অন্যরা। সবাইকেই তো রেজাউলের দেখতে হয়।

রাস্তার পাশে হাইস্কুলের বাউন্ডারি ওয়ালের ছায়ায় ছায়ায় হেঁটে যেতে যেতে রেজাউলের বেশ আগের কথা মনে পড়ে। তখন চট্টগ্রামে থাকতো ওরা। ছোট কুমিরা জেল স্কুলে পড়ত। মাসের একটি বিশেষ দিনে বাবা-মায়েরা দেখা করতে আসতেন। সবার বাবারা কত কি খাবার নিয়ে আসতেন। পাশে বসিয়ে আদরের বখে যাওয়া সন্তানকে নিজে হাতে খাইয়ে তৃপ্তি মিটাতেন।

রেজাউলের বাবা আসতেন প্রায় সময়েই খালি হাতে। কোনো কোনো সময় হয়ত এক হালি কলা কিংবা চারটা পেয়ারা… পথের পাশের বাজার থেকেই কিনে নিতেন হয়ত।

নিজের পায়ে শেকল বাঁধা অবস্থায় অন্যদের বাবা মায়ের পাঠানো আদরটুকু অন্যদেরকে উপভোগ করতে দেখে, নিস্ফল আক্রোশে ভিতরে ভিতরে ফেটে পড়ত সে। নিজের হাতে এক হালি কলা কিংবা কাঁচা পাকা পেয়ারা নিয়ে অসহায় বাবার চলে যাওয়া দেখত বারান্দার শিকের ভিতর দিয়ে।

দূরে অপসৃয়মান একজন বাবা… মাথা নিচু করে হেঁটে চলেছেন… বাস ভাড়াটুকুই যার সম্বল। কিন্তু সেই সময়ে রেজাউল কি বাবার সেই অসহায়ত্বটুকু বুঝতে চাইত? উপলব্ধিতে ওর জুড়ে ছিল কিছু প্রশ্নবোধক মার্ক! কেন? কেন? কেন?

আজ সেই প্রশ্নের উত্তর নিজের থেকেই সে পেয়েছে।পঁচিশ বছর পরে একজন নতুন বাবা এক পুরনো বাবার কিছু পতিত সময়ের অনুভবে বিলীন হয়… নিজের ছায়ায় নিজেকে খুঁজে পায়।

ছায়া আর কায়া মিলে যে আমি, তাতে কেন এতো বৈচিত্র্য? ভাবে আর হাঁটে… এক কেজি মিষ্টির প্যাকেট… আর কিছু জীর্ণ দীন মনোভাবও সাথে সাথে চলে।

________________________
#মামুনের_অণুগল্প
ছবিঃ আমার ২য় গল্পগ্রন্থ ছায়াসঙ্গী’র

VN:F [1.9.22_1171]
রেটিং করুন:
Rating: 0.0/5 (0 votes cast)
VN:R_U [1.9.22_1171]
Rating: 0 (from 0 votes)
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১১ টি মন্তব্য (লেখকের ৫টি) | ৫ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১২-০৩-২০১৯ | ১০:১৮ |

    'ছায়া আর কায়া মিলে যে আমি, তাতে কেন এতো বৈচিত্র্য? ভাবে আর হাঁটে… এক কেজি মিষ্টির প্যাকেট… আর কিছু জীর্ণ দীন মনোভাবও সাথে সাথে চলে।'

    বিত্ত পরিবৃত্তহীন যাপিত জীবনের কথা কাব্য। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    VN:F [1.9.22_1171]
    Rating: 0 (from 0 votes)
    • মামুন : ১৮-০৩-২০১৯ | ২৩:৩৩ |

      খুব সুন্দর উপমা দিলেন ভাইয়া! মুগ্ধ হলাম।

      ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা ভাইয়া। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

      VN:F [1.9.22_1171]
      Rating: 0 (from 0 votes)
  2. নূর ইমাম শেখ বাবু : ১২-০৩-২০১৯ | ১৪:০১ |

    চমৎকার সুন্দর উপস্থাপনা।

    মুগ্ধতা রেখে গেলাম।

    VN:F [1.9.22_1171]
    Rating: 0 (from 0 votes)
    • মামুন : ১৮-০৩-২০১৯ | ২৩:৩৪ |

      আপনার মুগ্ধতা লেখায় প্রেরণা হলো আমার। ধন্যবাদ ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

      VN:F [1.9.22_1171]
      Rating: 0 (from 0 votes)
  3. নূর ইমাম শেখ বাবু : ১২-০৩-২০১৯ | ১৪:২৯ |

    চমৎকার সুন্দর উপস্থাপনা।

    মুগ্ধতা রেখে গেলাম।।

    VN:F [1.9.22_1171]
    Rating: 0 (from 0 votes)
  4. নিতাই বাবু : ১২-০৩-২০১৯ | ১৮:৫৫ |

    বাস্তব উপলব্ধি!  এখন আমি নিজেও স্বর্গীয় পিতা মাতার কথা ভাবি, আর একা একা কাঁদি।

    মনে করিয়ে দিলেন, শ্রদ্ধেয় গল্পকার মহোদয় ! নিরন্তর শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা রইল।

    VN:F [1.9.22_1171]
    Rating: 0 (from 0 votes)
    • মামুন : ১৮-০৩-২০১৯ | ২৩:৩৫ |

      আমার যখন উপলব্ধির সময় ছিলো, ছিলাম আমি বেহুঁশ; এখন আমার হুঁশ ফিরলেও উপলব্ধির ক্ষমতা নিঃশেষ।

      ধন্যবাদ আপনাকে ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif  

      VN:F [1.9.22_1171]
      Rating: 0 (from 0 votes)
  5. রিয়া রিয়া : ১২-০৩-২০১৯ | ২০:২১ |

    আজও সুন্দর একটি লেখা প্রিয় গল্প দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    VN:F [1.9.22_1171]
    Rating: 0 (from 0 votes)
    • মামুন : ১৮-০৩-২০১৯ | ২৩:৩৭ |

      ধন্যবাদ দিদি গল্পটি পড়ে আপনার অনুভূতি রেখে যাবার জন্য। শুভেচ্ছা…https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif​​​​

      VN:F [1.9.22_1171]
      Rating: 0 (from 0 votes)
  6. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ১২-০৩-২০১৯ | ২০:৪১ |

    ছোট ছোট শব্দ বিন্যাসে আপনার লেখা সুন্দর হয় মহ. আল মামুন ভাই।

    VN:F [1.9.22_1171]
    Rating: 0 (from 0 votes)
    • মামুন : ১৮-০৩-২০১৯ | ২৩:৩৮ |

      আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম প্রিয় সৌমিত্র দাদা।  শুভেচ্ছা এবং অনেক ভালোবাসা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

      VN:F [1.9.22_1171]
      Rating: 0 (from 0 votes)