বর্তমানে আমরা নাকি মধ্য আয়ের দেশে পদার্পণ করছি! তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সহ সবকিছুতেই লেগেছে- আধুনিকতার ছোঁয়া। বলতে গেলে খাওয়াদাওয়া, ঘরবাড়ি, দালানকোঠা, রাস্তাঘাট, চিকিৎসা সেবাতেও আধুনিকতার কমতি নেই।
তবে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পাবলিক টয়লেটে। তারমধ্যে রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত যাত্রাবাড়ীর আশপাশের পাবলিক টয়লেটগুলোতেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি।
যাত্রাবাড়ী হলো ব্যস্ততম এক বহুমুখী রাস্তার মোড়। যাকে বলা হয়, রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার। এই চৌরাস্তার মোড়টিতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই ব্যস্ত থাকে দূরপাল্লার গাড়ি আর পথচারীদের ভিড়। সেই হিসেবে নেই পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট। আছে শুধু যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা। সেসব ময়লা আবর্জনার অসহনীয় দুর্গন্ধে জনসাধারণকে নাক চেপে পথ চলতে দেখা যায়।
গত ৪ মার্চ নারায়ণগঞ্জ গিয়েছিলাম ঢাকা কেরানীগঞ্জ। আসার পথে যাত্রাবাড়ী এসে পড়ে যাই এক মহা বিপদে। এদিন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য একরকম বেহুঁশ হয়ে যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তার চতুর্দিকে ছোটাছুটি করছিলাম। কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, পাবলিক টয়লেট কোথায়? তর্জনী উঁচিয়ে যারযার ইচ্ছেমত দেখিয়ে দিল, এদিক সেদিক! গেলাম পূর্বদিকে, গেলাম পশ্চিমদিকে, আর দক্ষিণদিকে সন্ধান পেলাম না পাবলিক টয়লেটের। হয়ত নিজে বেহুঁশ হয়ে যাবার কারণে আর পাবলিক টয়লেট খুঁজে পাইনি।
শেষ অবধি যাত্রাবাড়ীর উত্তর সাইটে গিয়ে কয়েকজন গাড়ির ড্রাইভার হেলপারকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই এখানে পাবলিক টয়লেট কোথায়?
জিজ্ঞেস করার পর একজন আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দিল, এইদিকে!
চেয়ে দেখি আমার চোখের সামনেই কয়েকটা পাবলিক টয়লেট। টয়লেটগুলো দেখে মনে হচ্ছিল না যে এগুলো টয়লেট! কিন্তু আসলেই এগুলো বর্তমান সময়ের আধুনিক টয়লেট। আমার পছন্দ না হলেও, এসব টয়লেটই ব্যবহার করে আসছে অগণিত মানুষ। সময়সময় এসব খোলা টয়লেট ব্যবহার করার জন্য মানুষের লাইনও ধরতে হয়। প্রস্রাব ৫ টাকা, আর পায়খানা ১০ টাকা।
প্রস্রাবাগারে কোনও পানির ব্যবস্থা নেই! আছে টিসু পেপার। পায়খানার জন্য পানির ব্যবস্থা আছে, তবে প্রয়োজনমত পানি। মানে, এক বদনা মাত্র। এর বেশি আর নয়। আর পায়খানা করতে হবে অতি সাবধানে! এসব টয়লেটগুলোর দরজা হলো, প্লাস্টিকের রঙিন কাগজ। আর টয়লেটের ভেতরে প্রবেশ করতে হবে আস্তে আস্তে! একটুও নড়াচড়া করা যাবে না। নড়াচড়া করলেই যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বিপদ।
টয়লেটগুলো আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা আবর্জনা। সাথে অসহনীয় দুর্গন্ধ। তবু মানুষ নিরুপায় হয়ে ৫ টাকা আর ১০ টাকার দিকে না তাকিয়ে এসব টয়লেটই ব্যবহার করছে। নিজেও উপায় খুঁজে না পেয়ে ৫টাকা দিয়ে এসব খোলা টয়লেট ব্যবহার করে ভাবছি, কর্মজীবী নারীদের কথা। যেসব নারীরা শহরের বিভিন্ন অফিস আদালতে আর গার্মেন্টসে চাকরি করে তাঁদের কথা। আমার জায়গা যদি একজন নারী হতো, তাহলে এমন পরিস্থিতিতে কী অবস্থা দাঁড়াতো? নিশ্চয় নারীদের বেলায় খুবই করুণ অবস্থা হয়ে দাঁড়াতো!
আমার মতন পুরুষরা কোনোরকম প্রয়োজন মেটাতে পারলেও এতে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন মহিলারা। এ কারণে রাজধানীর কর্মজীবী নারীরা দিনদিন নানা ধরনের জটিল রোগেও আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এসব নিয়ে নিজে নিজেই কিছুক্ষণ ভাবছিলাম।
এরপর যাত্রাবাড়ী থেকে পায়ে হেঁটে সায়েদাবাদের দিকে রওনা হলাম। যাওয়ার পথে দেখলাম সায়দাবাদ মোড় থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তা, ফ্লাইওভারের প্রতিটি পিলারের গোড়ায় মানুষের মলমূত্র আর ময়লা আবর্জনার স্তূপ।
এসব দেখে বুঝতে পাড়লাম, যারা রাত্রে নিজ বাসায় না ফিরে দোকানে রাতযাপন করে, তারাই ভোরে উঠে ফ্লাইওভারের পিলারের গোড়ায় অথবা দোকানের আড়ালে মলমূত্র ত্যাগ করে। এছাড়া ফুটপাত ও খোলা স্থানে অবস্থানকারী ভিক্ষুক,পাগল, ভবঘুরেসহ নানা ধরনের ভাসমান মানুষ রাতের আঁধারে খোলা স্থানে এসব অপকর্ম করে থাকে। এর মূলকারণ হচ্ছে, এসব এলাকায় পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকা।
এই সুযোগে কিছু অসাধু মানুষ কাজে লাগাচ্ছে তাঁদের বাড়তি রোজগারের বুদ্ধি। তাঁরা কোনরকমভাবে নামমাত্র কাগজের বেড়া আর দুইটি ইট দ্বারী টয়লেট বানিয়ে দিব্বি ব্যবসা করে যাচ্ছে। আর সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ নাকে সুরেশ কোম্পানির খাঁটি সরিষার তেল মেখে ঘুমচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা ও অবহেলায় এমন নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন।
ছবি: নিজের মোবাইল দিয়ে তোলা।
loading...
loading...
খোদ রাজধানী শহরেও এই একই দূর্দশা আমরা লক্ষ্য করেছি। নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেছি … কোন সভ্য নগরীর দেশের চলন্ত মানুষের প্রকৃতির ডাক উপক্ষো করার অবিবেচনা প্রসূত মাথা ভারী প্রশাসন যন্ত্র দিয়ে কোন নগরী গড়ে উঠতে পারে কিনা !!
আমি উত্তর পাইনি। ঢাকা বা এর আশে পাশের শহর বাদেও বাংলাদেশের জেলা শহর গুলোরও এই একই অবস্থা। যাওবা সুযোগ আছে; মানুষের তুলনায় সেটা অপ্রতূল। এভাবে কোন তিলোত্তমা শহর গড়ে উঠতে পারে না।
loading...
আমি সেদিন খুবই বিপদে পড়েছিলাম শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। উপায়ান্তর না দেখে এখানে সারা দিতে বাধ্য হয়েছি। এসব কি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের নজরে পরে না?
loading...
পাবলিক টয়লেট সুবিধা শহরকেই কেবল বাসযোগ্য করে না, এটা শহুরে মানুষের মৌলিক অধিকার। সরকার যন্ত্রকে এটা নিশ্চিত করতে হবে।
loading...
তা হয়ত একদিন নিশ্চিত হবে দিদি। কিন্তু বর্তমান সময়ে কর্মজীবী মানুুুষ আর পথচারীদের খুবই সমস্যা । সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এদিকে একটু নজর দেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।
loading...
দুঃখ পেলাম নিতাই বাবু। প্রতিটি শহরের ব্যস্ততম এলাকায় অবশ্য পাবলিক টয়লেট সার্ভিস থাকতে হবে।
loading...
আছে দাদা, তবে জনসংখ্যার তুলনায় তা খুবই সীমিত । আছে, সেগুলোর অবস্থথাও নাজুুক !
loading...
রাজধানী বা এর আশে পাশের পরিবেশ কি আদৌ বসবাস যোগ্য ? মনে হয় না।
loading...
আমরাও মনে হয় না শ্রদ্ধেয় দিদি। এসব দিক দিয়ে পরিপূর্ণ হতে আরও অনেক সময় লাগবে বলে মনে হয়।
loading...