নীল ক্যাফে কবি
তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম : সমুদ্র তীরে
একা একা হাঁটছিলে
সে তুমি বড্ড এলোমেলো…
তোমার পোশাক ছিল টিপটাপ,
কিন্তু ওই যে অশান্ত মন বাতাসে —
তোমার দীঘল কালো চুলের কথা কি বলব
সে তো গভীর কালো সমুদ্র থেকে কাল বৈশাখী ঝড় ওঠেছে
মেঘ কালো চুলের ভাঁজে ভাঁজে…
তোমাকে দ্বিতীয় বার দেখেছি : ওশান প্যারাডাইস হোটেলের লিফটে
তুমি নামছিলে,
আমি উঠছিলাম ——-
হঠাৎ চার চোখের ধ্রুপদ নীল স্তবকে বহুকাল তাকিয়ে থাকা যেন ….!
হে নেশাময়ী কাল বৈশাখী: তুমি সে দৃষ্টি
ভেঙ্গে চোখ নামিয়ে নিলে —–
এ যেন বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাল সমুদ্রে অস্তমিত সূর্য দেখা — —-
তোমাকে ৩য় বার দেখেছি : কফি শপে একা
নির্জন এক টেবিলে ,
নিঃশব্দ চোখে তাকালে আমার দিকে —-
দৃষ্টি নেশাময় ; বাবুই পাখির সাজানো নীড়ের মতো
ও চোখে মেঘ বিন্দুর উচ্ছ্বাসে
শিশির বৃষ্টি জমে গেছে ——
এক মূহুর্ত আমার মনে হল,
তুমি গোলাপ অরণ্যে ব্যথিত এক নীল প্রজাপতি ———-
শেষ বার তোমাকে দেখলাম: নীল ক্যাফে ….
নিঃশব্দ ওয়ার্ডরোবে পড়ে থাকা
বহুদিনের পুরনো নীল বানিয়া কাতান শাড়িতে —
শাড়িটা ছিল অতি চমৎকার,
পাখির ডানার নিবিড় শব্দের মতো
ঠিক হল না —
শাড়িটাকে অন্য রকম উচ্চতায় নিয়ে গ্যাছো তুমি ,
ঠিক তোমার মতো —-
শাড়ির ভাঁজ তেমন ই আছে
মোটে চারখানা কুচি তাতে
আর আঁচল ?
খোলা পৃথিবীর সাদা ঠোঁটের উচ্ছ্বাসে মিশে থাকা এক আকাশ নীলের কারুকার্য ;
তাতেই অনন্যা তুমি …
অবাক মেয়ে
পলক পড়ে না তোমায় দেখে …
পড়ন্ত বিকেলে নীল ক্যাফে তুমি …
সেদিন কার ও অপেক্ষায় ছিলে,
একটি টেবিলে কেক
একটি মোমবাতি
পাশেই লাইটার
ছোট্ট একটা চকচকে চাকু
তোমার চোখের দৃষ্টির মতো তীক্ষ্ম আর ধারালো….
কিছু চকলেট,
এক মগ ধোঁয়া ওঠা কফি,
একটা নীল ডায়েরি —
একটা ফাউন্ডেশন কলম :
ক’ছড়া কাশফুল
একটা সবুজ মুক্তার মালা,
তোমার দু’চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু গড়াচ্ছিল —
সমুদ্র ধারায় ;
ও কি নির্মম যন্ত্রণা বিবশ …
বড় বেশি বিষাদের ——- !
তুমি ডায়েরির খোলা বুকে কবিতা লিখছিলে —
ক্ষণে ক্ষণে কষ্ট তোমাকে আচ্ছন্ন করে রাখছিল,
তোমার দু’চোখে এক সমুদ্র দুঃখ
সাঁতার কাটছিল
তোমার কবিতা লেখা শেষ হলে
এক আকাশ কাঁপিয়ে তোমার চোখে
শ্রাবণ ধারায় অশ্রু ঝরল…
আমি দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম তোমাকে
অবাক চোখে,
তোমার সবটুকু কষ্ট আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল বারবার ——
হয়তো সে ক্ষণে তোমার
‘ প্রিয়জনের ‘ শুভ জন্মদিন ছিল
সেদিন তোমার চোখে আমি ভালবাসা দেখেছি
তার জন্যে ….
আমি ভীরু ভীরু পায়ে তোমার পাশে এসে দাঁড়ালেম :
অনেক প্রত্যাশায় বললেম ,এই শোন —-
অপরিচিতা মেয়ে,
আমি কী তোমার ডায়েরিটা দেখতে পারি ?
কী আছে ডায়েরিতে ?
অপরিচিতা মুখে কিছুই বলল না,
ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে ডায়েরিটা বাড়িয়ে দিল
আমার দিকে —
দেখলাম : ক্যাফের রংধনু নিয়ন বাতিতে
সে এক অন্য রকম তুমি !
আমার মনে হল…
জ্যোৎস্না প্লাবিত উত্তাল সমুদ্র থেকে
সদ্যস্নান সেরে উঠে এসেছ
আবরণহীন এক নগ্ন নারী তুমি!
ও মেয়ে : তুমি আমার নিঃশব্দ ভালবাসা হয়ে গেছ ——–
এখন তুমি বলো মেয়ে —
এই নির্জন হলুদ শহরে তুমি একা কেন?
কার জন্য তোমার এই দীর্ঘ বিরহ অপেক্ষা …
কিন্তু মেয়ে তিনটা জিনিসের বড় অভাব —
তোমার ভেতরের তোমাতে —
ছোট্ট একটা নীল টিপ
থাকত যদি তোমার কপাল জুড়ে …
কি অপরূপ হয়ে উঠতে তুমি ——
বা হাতে ক’ গাছি রেশমী চুড়ি,
আর … আর —
এক পা’য় নূপুর
এই তিনে মিলে অনন্যা তুমি ———–
খোলা ডায়েরির পাতায় রেখে চোখ
বিস্ময় প্রকাশ করল যুবক ———
“নীল ক্যাফে কবি”
এই কবিতা তুমিই লিখেছ ?
এক্ষুণিই তোমার প্রেমে বন্দি করো আমাকে —
ওগো কবি,
মেয়েটি এগিয়ে এসে নিঃশব্দে হাত রাখে যুবকের হাতে —
অবুঝ বালক, বলে মেয়ে —
শুভ্র জ্যোৎস্না রাত যদি পেড়ে দিতে পার আমার হাতে —
যদি ভালবাসার নীল গোলাপ ফোঁটাতে পার আমার মনে
জান, নীল গোলাপ আমার খুব প্রিয়!
যদি একটা সমুদ্র কিনে দিতে পার :
যদি ঐ আকাশের সব নক্ষত্র খুলে খুলে দিতে পার আমার হাতে —
তবেই আমি শুধু তোমার হব ।
হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ যুবক —–
আজ আমার প্রিয়জনের শুভ জন্মদিন ছিল …
আমি এক উপন্যাসের নায়ক এর প্রেমে পড়েছি —
১ম ,২য়, ৩য়
এবং শেষ বার আমার উপন্যাসের নায়কের সাথে যা কিছু হয়েছে ..
আমি সেই নায়িকা —–
নীল ক্যাফে কবি’র চরিত্র অনুকরণ করেছি —
বাস্তব প্রেম কখনো ছুঁয়ে দেখিনি
খুঁজেছি, পাইনি
এখন পেয়েছি —
কি নাম তোমার যুবক, জানতে চাইব না —-
তুমি, হ্যা তুমি —
“নীল ক্যাফে কবি’র” ভালবাসা ——
অরণ্য পৃথিবী :
বাহ্ কবি …. সুন্দর নাম দিয়েছ তো
তুমি আমার ——-
আর তুমি মৃত্তিকা মাটি ;
আচ্ছা পৃথিবী অরণ্য কি ভালবাসার কথা বলে ?
হ্যাঁ, কবি …. আমি তোমার সেই পঠিত উপন্যাসের নায়ক
অরণ্য পৃথিবী ;
ওরা দু’জন তখন হাত ধরে
গহীন সমুদ্রের জলে পা বাড়ায় ……………….
loading...
loading...
তিন এবং শেষ দেখা। বাকি অনেক কিছু হ্যালুসিনেশনের মতো কবিতার শব্দে ফুটে উঠেছে। দীর্ঘ কবিতায় পাঠক সাধারণত সময় দিতে চায় না। তবে আপনার লিখায় দেবে। অভিনন্দন প্রিয় কবি হাসনাহেনা রানু।
loading...
অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রিয় কবি আজাদ ভাইয়া আপনার প্রতি। অপ্রিয় হলেও কথা সত্য ,যে দীর্ঘ লেখায় পাঠক সময় দিতে চাই না।সেদিক থেকে মনে হয় আমার কবিতাটা উৎরে গেছে। ভাইয়া , আপনার জন্য শুভকামনা।
loading...
দারুণ হয়েছে কবিতাটি। শুভেচ্ছা নিন কবি দিদি ভাই।
loading...
অনুপ্রাণিত হলাম কবি বন্ধু রিয়া দি'ভাই। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শুভ কামনা দিদি ভাই।
loading...
শিশির বৃষ্টি জমে গেছে ——
এক মূহুর্ত আমার মনে হল,
তুমি গোলাপ অরণ্যে ব্যথিত এক নীল প্রজাপতি।
অসামান্য কবিতা কবি হাসনাহেনা রানু বোন।
loading...
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সৌমিত্র দাদা। আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। শুভেচ্ছা নিন কবি ।
loading...
পড়তে একটু সময় লেগেছিল ঠিক, কিন্তু যতই পড়ছিলাম; ততই ভালো লাগছিল। সত্যি অসাধারণ একটা কবিতা পড়লাম । শুভেচ্ছা রইল, কবি।
loading...
অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা কবি বন্ধু নিতাই দাদা। অনুপ্রেরণা পেলাম আপনার মন্তব্যে। শুভ কামনা প্রতিনিয়ত।
loading...
"খোলা পৃথিবীর সাদা ঠোঁটের উচ্ছ্বাসে মিশে থাকা এক আকাশ নীলের কারুকার্য ;"
. …. সুদীর্ঘ কবিতা পাঠে মুগ্ধ হলাম কবি. সুভেচ্ছা জানবেন
loading...
অনেক ধন্যবাদ কবি বন্ধু শরীফ । আপনার সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। শুভ কামনা আপনার জন্য।
loading...
গল্পের মতো এগিয়ে গেলো কবিতা । ভালো লাগলো । শুভেচ্ছা জানবেন।
loading...
আন্তরিক ধন্যবাদ সহ শুভেচ্ছা নিন প্রিয় কবি বন্ধু নাজমুন আপু । শুভ কামনা আপনার জন্য।
loading...
গল্প কবিতা সুন্দর ভাবনায় চিত্রিত।
শুভেচ্ছা রইল সবসময়।
জয়গুরু।
loading...
আন্তরিক ধন্যবাদ সহ কৃতজ্ঞতা। শুভ কামনা রইলো।ভাল থাকুন।
loading...