আমার সরস্বতী পুজো
মাঘী পূর্ণিমা শুক্লা পঞ্চমীতে সরস্বতী পূজা হয়। শ্বেত পদ্মাসনা, শুভ্র-বসনা বিদ্যার দেবী সরস্বতী বাহন শ্বেত হংস। শিশির-স্নাত, কুয়াশা ভেজা ঊষালগ্নে দেবীকে তাঁর অগণিত ভক্ত আবাহন করেন। মৎস্যপুরাণে বলা আছে, পরমাত্মার মুখ থেকে নির্গত শক্তিদের মধ্যে দেবী সরস্বতী সর্বশ্রেষ্ঠা। তাঁর রূপ দেবীর মতো শ্রর্দ্ধাহা হয়েও প্রাপণীয়ার মতো আর্কষক। তিনি সর্বশুক্লা বা মহাশ্বেতা, বীণাধারিণী, কেশরাজিতে চন্দ্রশোভাময়ী, শ্রুতি ও শাস্ত্রে পারঙ্গমা এবং সৃজন-প্রেরণদাত্রী ও পদ্মাসনা।
আমাদের বাংলা সংস্কৃতিতে কত রকমের পালা পার্বণ, কত ধরনের যে উৎসব আছে, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। হিন্দুদের বারোমাসে তেরো পার্বণের কথা প্রবাদের মত হয়ে গেছে। তেত্রিশ কোটি দেব দেবী নিয়ে আমাদের জীবন। তেত্রিশ কোটি না হোক, তেত্রিশ দেবতাকে পূজা দিতে গেলেও প্রতি মাসে গড়ে তিনটি করে পূজা পার্বণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। জীবনের প্রতিটি পর্বে একজন করে নিয়ন্ত্রক (দেব দেবী) থাকেন, যিনি স্বর্গ থেকেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। শিবঠাকুরতো ভোলানাথ হয়ে সব ভুলে বসে থাকেন, দেবী দূর্গাকেই জাগতিক সবকিছুর দিকে খেয়াল রাখতে হয়। সব খেয়াল করতে গিয়ে দেবী দূর্গা অধঃস্তনদের মধ্যে দপ্তর বন্টন করে দিয়েছেন। দপ্তর বন্টন পর্বে কন্যা সরস্বতীকে দিয়েছেন ‘শিক্ষা ও শিল্পকলা’ দপ্তর। কন্যাটিকে উনি জানিয়ে দিয়েছেন বাংলা বছরের মাঘমাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে যেন বাংলার মাটিতে একবার করে ঘুরে যান।
মনে পড়ে, স্কুলে যখন নীচের ক্লাসে পড়তাম, সরস্বতী পূজা আসলেই মন আমার আনন্দে নেচে উঠতো। মা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠিয়ে হলুদ মেখে স্নান করিয়ে দিতেন। তারপর শুরু হতো চুনোপুঁটির রাঘব বোয়ালের সাইজের শাড়ি পড়ার পালা। তারপর দাদু পুজোয় বসতেন আর আমি তার পাশে। পুজোর আগে শুরু হতো দেবীর পায়ের কাছে বই খাতা কলম রেখে দেয়ার হিড়িক। এটা একটা রীতি যে সরস্বতী পূজার দিনে পড়তে নেই, বই খাতা দেবীর পায়ের নীচে দিয়ে রাখলে দেবী খুশী হয়ে বিদ্যা বুদ্ধি দিয়ে থাকেন ঐ বইয়ের ভেতর। দেবীর পূজার ফুল বেলপাতা বইয়ের ভেতর গুঁজে রাখলেই পরীক্ষায় ভালো ফল করা যাবে। এমনিতে সাধারন নিয়ম অনুযায়ী সব পূজার আচারেই একেকটা নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে। যেমন সরস্বতী পূজাতে ‘খাগের কলম ও দুধজলে ভরা কালির দোয়াত’ লাগেই লাগে। আরও লাগে পলাশ ফুল, কুল, নিমপাতা কাঁচা হলুদ তাছাড়া পরের দিন দই মুড়ি, চিড়া, সন্দেশ, মিষ্টিতো আছেই।
আরেকটু যখন বড় হলাম, স্কুলের সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত, তখন তো মাতব্বরী করার অধিকার অর্জন করে ফেলেছি। তাছাড়া পুরো স্কুল জানতো আমি মোটামুটি আঁকতে পারি তাই আলপনা দেবার ভারও আমার ওপরেই থাকতো। তবে আমি একটু ডাকাবুকো ছিলামনা যে তা নয়, নেতাগিরি করতাম ছোটদের ওপরে, পুজোর দিন শিক্ষিকাদের ওপরেও।
শাড়ী পড়ে বড় সাজার হাস্যকর চেষ্টা। শাড়ি পড়তাম, বড়দের মতো করে চুল বাঁধতাম, এটাইতো কৈশোরের এক দুরন্ত মজার ব্যাপার। স্কুলটা ছিল আমার রাজত্ব। কলেজে গিয়ে নিজের অস্তিত্বকে টের পেতামনা। সরস্বতী পূজা হয়েছিল নিশ্চয়ই, তবে আমার স্মৃতিতে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা নেই।
এই তো কিছু বছর আগের কথা তখনও তো আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব মানে ছিল, সেখানে কোন শঠতা ছিলনা, চরিত্রে নির্মলতা ছিলো, কোন কলুষতা ছিলোনা, আচরণে স্থিরতা ছিলো, কোন রকম অধৈর্য্যতা বা অস্থিরতা ছিলনা, অভিমান ছিল কিন্তু অভিনয় ছিলনা। তখন অবশ্য এখনকার মতো মোবাইল ফোন ছিলনা তখন, কম্পিউটারও ছিলনা, ফেসবুক ছিলো না এটুকুই তফাৎ। তাহলে কি প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে মানুষের আচরনের বৈরীতা আছে! এখন কাউকে বন্ধু ভাবার আগে দশবার ভাবতে হবে? বন্ধু ভেবে কাউকে কিছু ঘরে বানিয়ে খাবার দিতে গেলে (যেহেতু আগে খাওয়াবে কথা দিয়েছিল) সে যখন ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যায়, তখনই প্রশ্ন ওঠে বন্ধুত্ব নিয়ে। তাহলে কি কোনো বন্ধুত্ব ছিলোই না? পুরোটা অভিনয় ছিলো? নাকি অন্য রিলিজিয়ন বলে? নাকি খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে পারা যায় সেইভেবে? আর যাইহোক ভার্চুয়াল জগতে বন্ধু হয় না। অন্তত আমি আর কাউকে বন্ধু ভাবতে পারবো না। অপমান সূঁচের মতো বিঁধে যায়। আর সেই ক্ষত কোনোদিন শুকোবে না।
যাইহোক সরস্বতী পুজোয় ফিরে আসি। কালির দোয়াতে খাগের কলম ডুবিয়ে লিখতেন রবীন্দ্রনাথ, কালিদাস,ভারবি আরও অনেক মহাকবিরা। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের খাগের কলমের বদলে ‘ফাউন্টেন পেন’, তারপরে এলো ‘বলপেন’, তারপরে এলো ‘জেল পেন’ এরও পরে এলো কম্পিউটার, ল্যাপ্টপ আর কীবোর্ড। এখন আর আমাদের কলম না হলেও চলে, আমরা ল্যাপটপ, আইপ্যাড, ই-বুক নামের ইলেকট্রনিক বই ব্যাবহার করি। এখন কেউ আর রবীন্দ্র নজরুল হতে চায়না, এমনকি আইন্সটাইনও নয়।
বিদ্যালয়গুলোতেও এক অদ্ভুত অস্থিরতা, মানুষ গড়ার কারিগররা আজ অনেকেই বিদ্যা নিয়ে ব্যাবসায় নেমেছেন, তবে কি এই সব দেখেই সরস্বতী দেবীও ভয় পেয়ে গেছেন? হয়তো পেয়েছেন না হলে বিদ্যার দেবী কি করে প্রেমের দেবীতে রূপান্তর হচ্ছেন…!
loading...
loading...
"জীবনের প্রতিটি পর্বে একজন করে নিয়ন্ত্রক (দেব দেবী) থাকেন, যিনি স্বর্গ থেকেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। শিবঠাকুরতো ভোলানাথ হয়ে সব ভুলে বসে থাকেন, দেবী দূর্গাকেই জাগতিক সবকিছুর দিকে খেয়াল রাখতে হয়। সব খেয়াল করতে গিয়ে দেবী দূর্গা অধঃস্তনদের মধ্যে দপ্তর বন্টন করে দিয়েছেন। দপ্তর বন্টন পর্বে কন্যা সরস্বতীকে দিয়েছেন ‘শিক্ষা ও শিল্পকলা’ দপ্তর। কন্যাটিকে উনি জানিয়ে দিয়েছেন বাংলা বছরের মাঘমাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে যেন বাংলার মাটিতে একবার করে ঘুরে যান।"
স্বাগতম হে দেবী সরস্বতী। অভিনন্দন দেবী রিয়া রিয়া।
loading...
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় বন্ধু। শুভেচ্ছা নিন।
loading...
বেশ সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন, শুভেচ্ছা জানবেন, ,
loading...
ধন্যবাদ কবি সুজন হোসাইন দা।
loading...
সুন্দর একটা লেখা পড়লাম প্রিয় কবি রিয়া দিদি ভাই । শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকুন।
loading...
শুভকামনা আপনার জন্যও দিদি ভাই।
loading...
* সুপ্রিয়, শুভ কামনা সতত।
loading...
ধন্যবাদ প্রিয় কবি দা।
loading...
সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যা প্রদায়িনী,
তুমি মাগো শ্বেতাম্বরা তোমায় প্রণমি।
… … …
সুন্দর লিখেছেন। লেখিকা ও প্রিয়কবিকে জানাই আসন্ন
শুভ সরস্বতীপূজার আগাম আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা।
সাথে থাকুন, আরও লিখুন, লিখতে থাকুন।
প্রত্যাশা রাখি।
আমার, আপনার, আমাদের
সকলের লেখায় সমৃদ্ধ হোক শব্দনীড়ের পাতা।
জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!
loading...
আমার, আপনার, আমাদের সকলের লেখায় সমৃদ্ধ হোক শব্দনীড়ের পাতা।
loading...