জীবনের খাতায় কবিতার পাতায়

জীবনের খাতায় কবিতার পাতায়
(কবির সকরুণ অশ্রুসজল কবিতা )

নিভে গেল হায় জীবন প্রদীপ সাড়ে বারোটার পরে,
আত্মীয় স্বজন আপনার জন সবার চোখে জল ঝরে।
কেঁদেছে সেদিন পশুপাখি আর সবুজ গাছের পাতা,
পেয়ে না পাওয়া হিসাব মেলে না মুক্ত জীবন খাতা।

শোকের বারতা দ্রুতগতি ধায় বাতাসে বায়ুর বেগে,
রেল কামরায় বার্তা পৌঁছায় হয় বজ্রপাত বিনামেঘে।
ফুঁপিয়া ফুঁপিয়া কাঁদিছে দুহিতা জনক যে তার নাই,
পৃথিবীর মায়া ত্যাজি সে গিয়াছে স্বর্গে পেয়েছে ঠাঁই।

রেলের যাত্রীরা হয়ে দিশেহারা সকলেই তারে কয়,
নিশ্চিত মরণ না শুনে বারণ জন্মিলেই মরিতে হয়।
দিন দুই পরে বহু কষ্ট করে আসিল সে নিজ ঘরে,
না পায় দেখিতে ব্যথিতচিত্তে দুই চোখে জল ঝরে।

মনে পড়ে তার জনক তাহার থাকিত দাঁড়ায়ে দ্বারে,
না ছুঁয়ে চরণ গৃহে আগমন দেখিল না আজ তাঁরে।
ব্যথিত হৃদয়ে চোখে জল লয়ে উঠানে বসিয়া কাঁদে,
দেখিল ভ্রাতারে শ্বেত বস্ত্র পরে চাদর জড়ায়ে কাঁধে।

বিষণ্ণ মনে করুণ নয়নে আসিল সে ভগিনীর কাছে,
ভগিনীর সাথে ভ্রাতাও কাঁদিছে নয়নের জল মোছে।
জননী হারায়ে জনকেরে লয়ে সুখে ছিল ভাইবোনে,
জনকেরে নিল কেন কেড়ে কিবা ছিল বিধাতার মনে?

আত্মীয় স্বজন প্রিয় পরিজন প্রবোধিয়া সকলেই কয়,
ভ্রাতার সাথে ভগিনীকেও নিয়ম পালন করিতে হয়।
দশদিন সাথে এইমত কাটে, সেদ্ধ সেদ্ধ সবই খায়,
পরে দশদিনে নববস্ত্র কিনে নুতন বসন পরে গায়।

পর দিবসে পুরোহিত এসে আদ্য-শ্রাদ্ধাদি কার্য করে,
নিমন্ত্রিত সব অতিথিরা আসি বসে সেই শ্রাদ্ধবাসরে।
পিতৃ-পিণ্ড দিবার অগ্রে অধিকার আছে শুধু দুহিতার,
পরে পিণ্ডদান করে সুসন্তান শাস্ত্রের বিধান অনুসার।

ব্রাহ্মণভোজন, ভোজন দক্ষিণা দিতে হয় ধূতি ও শাড়ী,
চটিজুতা ছাতা, বালিশ লেপকাঁথা, থালা পিতলের হাঁড়ি।
আত্মীয়-স্বজন প্রিয় পরিজন বসে আহারেতে একসাথে,
বসিলে সকলে পরিবেশন করে লুচি, মিষ্টি দেয় পাতে।

কেবা এসেছিল, কে কে এল গেল হিসাব রাখিত যেবা,
তার স্বর্গবাসে, বাড়ির উঠানেতে অতিথি নারায়ণ সেবা।
জীবনের খাতায় মরণের কথা লিখে রেখেছেন বিধাতা,
বুক ফেটে যায় লিখিতে পারিনা তবু লিখে যাই কবিতা।

লক্ষ্মণ বলে, অন্তিম কালে মরণে কেহ কারো না হয়,
সময় থাকতে তাই শ্রী হরি ভজ, এ সংসার মায়াময়।
জীবনের খাতায় কবিতার পাতায় আমি কবিতা লিখি,
মরণের পরে মোহ-মুক্তির মন্ত্র এ বসুধায় এসে শিখি।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১১-০২-২০১৯ | ১১:০৬ |

    কবিতার বিষয় বস্তুতে ঘটনার যে ধারাবাহিকতা তা আপনার লিখায় স্পষ্ট।

    অভিনন্দন প্রিয় কবি মি. ভাণ্ডারী। শুভ সকাল। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  2. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ১১-০২-২০১৯ | ২০:৪০ |

    লক্ষ্মণ বলে, অন্তিম কালে মরণে কেহ কারো না হয়,
    সময় থাকতে তাই শ্রী হরি ভজ, এ সংসার মায়াময়।
    জীবনের খাতায় কবিতার পাতায় আমি কবিতা লিখি,
    মরণের পরে মোহ-মুক্তির মন্ত্র এ বসুধায় এসে শিখি।

    সুন্দর কবিতা। অভিনন্দন জানিয়ে গেলাম। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
  3. রিয়া রিয়া : ১১-০২-২০১৯ | ২১:৩৪ |

    সুন্দর লিখন। অভিনন্দন কবি দা। 

    GD Star Rating
    loading...