সোনার অক্ষরে লেখা
আমি একজনকে কথা দিয়েছিলাম, এই ভবনটিকে ঘিরে একজন বালকের দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর আগের ঝাঁপসা হয়ে আসা স্মৃতির করিডোর থেকে কিছু মুক্তো এনে দেবো। কিন্তু সেখানে সময়ের বুকে বিবর্ণ মুক্তোর সাথে সাথে কিছু কর্কশ নুড়ি অনুভবে বড্ড ধারালো অনুভূতি এনে দেয় বলে, ওই পথে পা বাড়াতে ইচ্ছে করত না। কিন্তু যাকে কথা দিয়েছিলাম তিনি ‘স্পেশাল কেউ’ গোত্রের একজন। তাই মিশ্র অনুভবের রাস্তায় পা বাড়াতে হলো।
আমি এই কলেজটিতে মাত্র এক বছর পড়তে পেরেছি। আমার দুর্ভাগ্য? আমার বাবা চেয়েছিলেন আমি একজন ক্যাডেট হই। অন্য আরো অনেক কিছুর মতই আমি ওটাও হতে পারিনি। তবে আমার বাবার আশাভংগের ওটাই ছিল প্রথম ধাপ- আমাকে ঘিরে। আজ বড্ড অনুভব করি। আমি যে একজন অনুভবক্ষম পুরুষ। একজন ছোটখাট বাবাও আমি। আমাকে কতটুকু বাবা মনে হয়, তা আমার দুই কন্যা বলতে পারবে!
আমি তরতর করে বড় হয়ে উঠছিলাম খুলনায় আমার পরিচিত আংগিনায়। বাপ্পি ভাই আমার সিনিয়র ছিলেন। তার সাথে আমি আর তনু ছোট বয়রার আনাচে কানাচে ভালোলাগা খুঁজে বেড়াতাম। বাপ্পী ভাইদের বাড়ির পিছনে অনেকটা জায়গা জংগল ছিল। সেখানে টারজান টারজান খেলতাম। বাবু ভাই বাপ্পী ভাইয়ের বড় ভাই ছিলেন- ওনাদের সাথে পিকনিক করতাম। আনন্দে ভরা ছিল জীবন।
একসময় আমাদের এলাকায় নাকি বাঘ চলাফেরা করত। তারই নিদর্শন রুপে আমার ছেলেবেলায় দেখেছি বাড়ি বাড়ি এক চিলতে জংগল। সেই জংগলে আমি বন্ধু দিপু আর শফিককে নিয়ে পাটকাঠির আগায় জিগারের আঠা মাখিয়ে ফড়িং ধরে বেড়াতাম.. বেতবনের কাটার খোঁচার তোয়াক্কা না করে ম্লান বেতফল কোঁচর ভরে এনে জগৎ জয়ের আনন্দ উপভোগ করতাম।
আমাদের বাজার মসজিদের বিপরীতের স্কুল সংলগ্ন যে মার্কেট, সেটা একসময় একটা খাল ছিল। দিনের অনেক সময় বন্ধুদের নিয়ে সেই খালে ডুবাতাম.. ডোবার ব্যাং আমার ঢিলের আঘাতে অস্থির থাকতো।
এরকম আমার শৈশবকে গলা টিপে বাবার ইচ্ছায় আমি হতে গেলাম একজন ক্যাডেট। চারদিক নিশ্চুপ চুপচাপ অহর্নিশ এক শৃংখল নিগড়। আমি যার যোগ্য ছিলাম না। অযোগ্য মন মানসিকতার এক বালক শৈশব হারানোর যাতনা নিয়ে নিজেকে বাবার ইচ্ছেমত গড়তে এক পোশাকী জীবন বেছে নিতে বাধ্য হলাম।
একজন ক্যাডেট হতে আমাকে প্রথমে প্রি-ক্যাডেট স্কুলে কিছুটা প্রস্তুতি নেওয়ানো হয়েছিল। আমাকে কোচিং করতে যেতে হতো সেই ‘সেন্ট জোসেফস স্কুলের’ কাছে এক কোচিং সেন্টারে, আজ সেন্টারটির নাম ভুলে গেছি।
স্মৃতি অনেক দূরের পথ হেটে আসছে, তাই খেই হারিয়ে ফেলছি। তবে এই ভবনটির দিকে তাকালে বিবর্ণ স্মৃতিরা কেন জানি বর্ণীল হয়ে উঠে আমাকে স্বপ্নিল তন্দ্রাতুর করে তোলে। কিছুটা ব্যথা চিরে দেয় হৃদয়, কিছুক্ষণ বিহবল রাখে আমার হৃদয়। সেখানে সোনার অক্ষরে লেখা একটি নামই ভেসে আসে-‘জেসিসি!’
loading...
loading...
লিখাটি পড়ে যারপরনাই নস্টালজিক হলাম মি. মামুন। আপনার জন্য শুভকামনা। ধন্যবাদ।
loading...
লেখাটি পড়ার শুভেচ্ছা রইলো ভাইয়া। ধন্যবাদ।

loading...
স্মৃতিচারণের মুহুর্ত গুলোন পড়লাম প্রিয় গল্প দা। আপনার জন্য শুভেচ্ছা।
loading...
সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ রিয়া দিদি। ভালো থাকুন সবাইকে নিয়ে সবসময়।

loading...
পড়েছি তারপরও পড়ে নিলাম মহ. আল মামুন ভাই। ভালোবাসা
loading...
আরো একবার পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা প্রিয় কবিদা'।
ভালো থাকুন সবসময়।

loading...
* সুপ্রিয়, শুভ কামনা সবসময়…
loading...
ধন্যবাদ প্রিয়!
ভালোবাসা এবং শুভকামনা আপনার জন্যও রইলো নিরন্তর…
loading...