আপনার প্রোফাইলে ছদ্মনাম কেন?

আপনার প্রোফাইলে ছদ্মনাম কেন?

প্রিয় ফেসবুক বন্ধুগণ কেমন আছেন? আশা করি দয়াময়ের অশেষ কৃপায় সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সকলের আশীর্বাদে ভালো আছি। বন্ধুগণ, আজ আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি কিছু “ছদ্মনাম” নিয়ে। বন্ধুগণ, অনেকের ফেসবুক প্রোফাইল দেখি ছদ্মনামে। প্রোফাইল ছবিটাও একপ্রকার বনজঙ্গলের ছবি। এসব দেখে ভাবি, আর ছদ্মনাম নিয়ে ইতিহাস ঘেঁটে সময় কাটাই। ইতিহাস ঘেঁটে যা পেয়েছি, তা আমার লেখার মাঝে প্রকাশ করছি। আগে আমার মোবাইল ব্যবহার ও অনলাইনে প্রবেশ বিষয়ে কিছু লিখতে চাই। আশা করি সবাই সাথে থাকবেন। আর আমার এই নগণ্য লেখাও পুরোটা পড়বেন।

আমি ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটা মোবাইল কিনি। মোবাইলটি ছিল নোকিয়া ১১১০ মডেল, দাম ছিল মাত্র ৩৬০০ টাকা। এই মোবাইলটা দিয়ে (GPRS) সার্ভিস বা ইন্টারনেট কানেকশন পাওয়া যেত না। আগেই বলেই রাখা ভালো, তখন ছিল 2G। এখন 3G শেষ হয়ে 4G চালু। শুনেছি কোনও একসময় চালু হতে যাচ্ছে অজানা G। প্রযুক্তির যুগে এটা আমাদের জন্য একটা ভাগ্যও বটে। যেখানে আগে আমরা একটা ওয়ান ব্যান্ডের রেডিওর পেছনে সারাক্ষণ দৌড়াতাম। সেখানে আজ ছোট্ট একটা যন্ত্রের ভেতরে রেডিও সহ অনেককিছু থাকে। যাই হোক, এর পর ২০০৭ সালে নোকিয়া সি থ্রী একটা মোবাইল ব্যবহার শুরু করি। ওই মোবাইলটা ছিল আমার ছেলের রেখে যাওয়া স্মৃতি। তখন থেকেই আমার এই তথ্যপ্রযুক্তি যুগের অনলাইনে প্রবেশ।

প্রথমে গুগল প্লাস পরে ফেসবুক ইউটিউব সহ বহু ওয়েবসাইটে ছিল আনাগোনা। যা এখনো চলছে যথারীতি। দিনরাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ২০ ঘন্টাই অনলাইনে থাকা চাই। ব্লগ আর ব্লগার সম্বন্ধেও আগে আমার তেমন কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। বাংলাদেশের স্বনামধন্য পত্রিকা ‘প্রথম আলো’তে একসময় নাগরিক সাংবাদিকতার একটা সাইট ছিল। সেখানে দেশের অনেক স্বনামধন্য লেখকরা লিখতেন, নিজেদের একান্ত অনুভূতি প্রকাশ করতেন। তারপর আস্তে আস্তে অনলাইন ভিত্তিক বহু ব্লগ সাইট তৈরি হয়। এগুলো যথাক্রমে; টেকটিউনস, সামহয়ারইনব্লগ, মুক্তমনা ব্লগ, টিউনারপেজ, পিসিহেল্পলাইনবিডি, টেকটুইটস, প্রথম আলো ব্লগ, নাগরিক ব্লগ, টিউটোরিয়ালবিডি, সুডোল্যাব সহ ছিল ইংরেজী ব্লগ ও ফোরাম।

এসব অনলাইন ভিত্তিক ব্লগ বা দিনলিপিতে অনেক নামীদামী লেখকরাই লিখতেন। অনেকে নিজের নাম গোপন করে ছদ্মনামে লিখে যেতেন। এই “ছদ্মনাম” নিয়ে যদি কিছু লিখতে যাই, তাহলে ছদ্মনামের পুরো ইতিহাস টানতে হয়।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ছদ্মনাম কোনো ব্যক্তি বা ক্ষেত্রবিশেষে কোনো গোষ্ঠীর কাল্পনিক নাম। ছদ্মনাম ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য কোনো ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় গোপন রাখা। শুধুমাত্র লেখকেরাই ছদ্মনাম ব্যবহার করেন না, গ্র্যাফিটি শিল্পী, প্রতিবাদী আন্দোলনকারী অথবা সন্ত্রাসবাদী এমনকি কম্পিউটার হ্যাকারেরাও ব্যবহার করেন এই জাতীয় নকল নাম। অভিনেতা, গায়ক বা অন্যান্য শিল্পীরা অনেক সময় নিজেদের জাতিগত পরিচয় গোপন রাখার জন্য মঞ্চনাম ব্যবহার করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার একাধিক ব্যক্তি একক ছদ্মনামের আড়ালেও লিখে থাকেন। কোনো রচনার সহকারী লেখকবৃন্দের ক্ষেত্রেও এই জাতীয় ছদ্মনাম গ্রহণের প্রবণতা দেখা যায়।

বাংলা ভাষাতে ছদ্মনাম গ্রহণের প্রথাটি সুপ্রচলিত। কৈশোরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “ভানুসিংহ ঠাকুর” ছদ্মনামে কয়েকটি কবিতা রচনা করেছিলেন। বিশিষ্ট লেখক রাজশেখর বসু স্বনামে অনুবাদ সাহিত্য, প্রবন্ধ ইত্যাদি রচনা করলেও, তাঁর প্রসিদ্ধ শ্লেষাত্মক গল্পগুলি লিখতেন “পরশুরাম” নামে। এমন আরও অনেকই ছিলেন ছদ্মনামে। তাদের মধ্যে কয়েকজন কবি ও লেখকদের ছদ্মনাম ও প্রকৃত নাম নিম্নরূপ।

ছদ্ম নাম——— ——প্রকৃত নাম
• ভানুসিংহ—— ——রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
• কমলাকান্ত——— —–বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
• অনিলা দেবী —— —শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
• নীল লোহিত —— —-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

তাহলে বুঝাই যাচ্ছে যে, এই ছদ্মনাম অনেক অনেকদিন থেকেই প্রচলিত। যা এখনো চলছে দেশ বিদেশের অনলাইন ভিত্তিক দিনলিপিতে আর কবি লেখকদের মাঝে। যেমনটা দেখা যায় অন্যান্য ব্লগেও। এসব ছদ্মনামের লেখকদের লেখায় মন্তব্য দিতে বাঁধে খটকা। ছদ্মনামে বোঝা যায় না লেখকের লিঙ্গ পরিচয়। তাই অনেক সময় সম্মোধন করতে গিয়ে ভাইয়ের জায়গায় বোন লিখে ফেলে কেউ কেউ।

যেমন; লেখকের লেখা পড়ে পাঠক মন্তব্য লিখলো এভাবে–”সম্মানিত দিদি, আপনার অসাধারণ লেখনী পড়ে অনেককিছুই জানা হলো। এই অসাধারণ লেখাটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।”

পরবর্তীতে মন্তব্যকারী বিপাকে পড়ে যান। আর লজ্জাও পেয়ে থাকেন সমসময়। লজ্জায় পড়ে এই কারণে যে, লেখা বা পোস্ট করেছেন একজন পুরুষ লেখক। ছদ্মনাম ছিল, “আকাশের তারা”। অথচ সম্বোধন করা হলো লেখিকা ভেবে।

“আকাশের তারা” ছদ্মনামটিতে কি বোঝা যায়, লেখক নারী -না-পুরুষ? বোঝা মুশকিল। আবার প্রোফাইল ছবিটাও থাকে নকল, হয়ত ফুলের, না হয় কোনও পশুপাখির। তাই ধন্যবাদ জানাতেও মুশকিল হয়ে পড়ে। আমি নিজেও সময় সময় এরকম মুশকিলে পড়েছিলাম। যেমন পড়েছি ফেসবুকে, তেমন পড়েছিলাম অনলাইনে লেখবার অন্যান্য দিনলিপিতে। এখানে একজন ছদ্মনামের লেখকের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। ছদ্মনামটি ছিল “বাংগাল”। এই নামের লেখকের আসল নামটি আজও জানা হলো না। জানা হলো না তার লিঙ্গ পরিচয়। অথচ এই লেখকের লেখার সাথে আমার হৃদয়ের সম্পর্ক বহু আগে থেকে। সম্মানিত লেখক “বাংগাল” এর প্রতিটি পোস্ট পড়তাম + মন্তব্যও লিখতাম।

যাক সেই লেখক আর লেখা, এই সোনেলা দিগন্তেও এমন বহু ছদ্মনামের লেখক দেখা যায়। তাদের লেখায় মন্তব্য দিতে মন চাইলেও দিতে দ্বিধাবোধ হয়। কেন হয়? হয় এই কারণে যে, দিদির জায়গায় যদি দাদা সম্মোধন করে ফেলি, তাই। অনেক সময় এরকম উল্টাপাল্টা করেও ফেলি। তখন আবার দ্বিতীয় মন্তব্য টেনে দুঃখপ্রকাশ করতে হয়।

এখানে উপরোল্লিখিত “ছদ্মনাম’র কবি ও লেখকদের বহুকাল থেকে মানুষ চিনে। তাদের ছদ্মনামের পাশাপাশি আসল নামও মানুষে জানে। সম্মানিত লেখক কবিদের এই ছদ্মনাম ইতিহাসের পাতায় লেখা। এই পৃথিবী নামক গ্রহটি যতদিন থাকবে, ততদিন তাঁরা এই ছদ্মনামেই মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে। কিন্তু আমরা যারা ছদ্মনামের লেখক, তাদের মানুষে চিনবে জানবে কী করে? চিনবে শুধু ছদ্মনামধারী লেখকের পরিবারবর্গ। এ ছাড়া অন্য কেহ চেনার উপায় আছে বলে আমার মনে হয় না। কেননা, ছদ্মনামের “বাংগাল” যদি আমার সামনে দিয়ে হেটে যায়, তারপরেও আমি চিনবো না যে, এটা সম্মানিত লেখক “বাংগাল” বা “আকাশের তারা”।

বর্তমানে ছদ্মনামের ছড়াছড়ি চলছে সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে। চলছে দেশের স্বনামধন্য অনলাইন ভিত্তিক লেখবার দিনলিপি ব্লগগুলোতেও। আগেকার সময় প্রতিবাদী লেখকদের লেখায় মানুষের মনে প্রতিবাদের ঝড় উঠত। তাঁরা মানুষের কল্যাণের জন্য লিখে যেতেন, তাই হয়ত তাদের ভয় ছিল। রাষ্ট্রের নজর এড়ানোর জন্য তারা ব্যবহার করতেন ছদ্মনাম। যাতে মানুষ সরাসরি তাদের না চেনে।

কিন্তু আজ আমরা যারা লেখালেখি করছি, তাদের মধ্যে সবার লেখাই কী প্রতিবাদী লেখা? কোনও ধর্ম অবমাননা লেখা? কোনও রাষ্ট্র বিরোধী লেখা? তাহলে কিসের ভয়? কেন ছদ্মনাম? কেন নিজের প্রোফাইলে নকল ছবি? কেন-ই-বা আত্মগোপনে থাকা? কেন-ই-বা কাছে থেকে দূরে সরে থাকা? এসব প্রশ্নগুলো শুধু থেকেই যায়, উত্তর মেলে না। আপনাদের কাছে কোনও উত্তর আছে কি?

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৮ টি মন্তব্য (লেখকের ৪টি) | ৪ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ৩০-০১-২০১৯ | ১৯:৪৬ |

    ফেসবুক বন্ধু দের উদ্দ্যেশে লিখাটি হলেও ব্লগের জন্যও লিখাটি তাৎপর্যপূর্ণ মনে করি। সবিস্তারে আলোচনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ মি. নিতাই বাবু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ০৩-০২-২০১৯ | ১৮:১০ |

      সত্য কথা বলতে পারি, আমি আরও অনেক আগে থেকে এইরূপ ছদ্মনাম বিরোধী শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। বর্তমান সময়ের কোনও ছদ্মনাম লেখকের বই আমি সংগ্রহ করি না। আগে যারা ছদ্মনামে লিখতেন, তাদের প্রতি আমার যথেষ্ট সম্মান আছে। তাদের লেখা বইও আছে। বর্তমানে ফেসবুকে এসব ছদ্মনামওয়ালা এরা কারা? এঁঁরা আবার ভালো ভালো আদেশ উপদেশও দিয়ে থাকে। 

      মন্তব্যের জবাব দিতে দেরি হওয়ার জন্য ক্ষমা করবেন শ্রদ্ধেয় দাদা। আমি ভিজি ছিলাম।

      GD Star Rating
      loading...
  2. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ৩০-০১-২০১৯ | ২০:১৪ |

    অনেক গুলো সত্য কথা উঠে এসেছে নিতাই বাবু। সচেতন কেন হই না এটাই বুঝি না। Frown

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ০৩-০২-২০১৯ | ১৮:১৫ |

      আমিও বুঝি না শ্রদ্ধেয় সৌমিত্র দাদা। তাই এই ছদ্মনাম নিয়ে লিখলাম। বিশেষ করে বর্তমানে ফেসবুকে থাকা ফেক নাম বা ছদ্মনামগুলো দেখে খুবই বিরক্ত লাগে।

      GD Star Rating
      loading...
  3. নাজমুন : ৩০-০১-২০১৯ | ২০:১৯ |

    ছদ্মনামে অনেকেই লিখতেন এখনো লিখেন । কেউ যদি নিজেকে লুকিয়ে লিখতে চান লিখতেই পারেন সমস্যা নেই । কিন্তু যার লেখায় মাল মসলা আছে তিনি আপনাতেই পরিচিত হয়ে যান পরে । সেটা সমস্যা নয় । 

    কিন্তু ফেসবুকে ছদ্মনাম দিয়ে কিছু অসৎ লোক মেয়েদের যন্ত্রনা করে ।যেগুলোকে ফেক আইডি বলা হয় । এইসব দুশ্চরিত্রদের নিয়ে যন্ত্রনা খুবই ।  

     

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ০৩-০২-২০১৯ | ১৮:১৮ |

      আগে যারা লিখতেন, তাদের প্রতি আমার সম্মান অব্যাহত আছে। বলছিলাম, বর্তমান সময়ের ছদ্মনামধারী লেখকদের কথা। আর স্বাদের ফেসবুকে থাকা ফেক নাম বা ছদ্মনামওয়ালাদের কথা। এঁরা আবার ভালো ভালো আদেশ উপদেশ দিয়ে থাকে। এঁরা কারা?

      GD Star Rating
      loading...
  4. রিয়া রিয়া : ৩০-০১-২০১৯ | ২১:১১ |

    “কেন-ই-বা আত্মগোপনে থাকা? কেন-ই-বা কাছে থেকে দূরে সরে থাকা? এসব প্রশ্নগুলো শুধু থেকেই যায়, উত্তর মেলে না। আপনাদের কাছে কোনও উত্তর আছে কি?”
    __ আমিও ভাবি তাই। অথচ উত্তর খুঁজে পাই না।

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ০৩-০২-২০১৯ | ১৮:২১ |

      আমি এর উত্তর অনেক খুঁজেছি শ্রদ্ধেয় রিয়া দিদি। উত্তর পাইনি । তবে মেনে নিয়েছি লেখকের নিরাপত্তার কারণেই হয়তো এই ছদ্মনামের আবিষ্কার । 

      মন্তব্যেত উত্তর দিতে দেরি হয়ে গেল দিদি। আমি ব্যস্ত  ছিলাম। মনে কিছু করবেন না কিন্তু!

      GD Star Rating
      loading...