“গল্পকার ট্যালেন্ট-হান্ট” অনুষ্ঠানে প্রথম প্রতিযোগীর ওপর দুজন আন্তর্জাতিক বিচারক যারপরনাই বিরক্ত হলো। দেশীয় বিচারকরা এতে বিব্রত বোধ করলো।
-এখানে গল্প কোথায়? প্রতিযোগী গল্পকারের কাছে এক বিচারক জানতে চাইলো
-কেন? এই যে পঁচা গোবর স্তুপের একটা ইমো, তারপর কাঠের খড়মের ইমো, তারপর হুতুমপেঁচার ভেংচির ইমো, তারপর কুঁড়েঘরের কোণায় একটা গাবগাছের ইমো যাতে হেলান দিয়ে একটা গোবরে পোকা খড়ম পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ইমোগুলি সাজিয়ে নিন; যা দাঁড়াবে সেটাই আমার গল্প।
প্রতিযোগী গল্পকারের কথায় দেশি বিদেশী সব বিচারক কিছুক্ষণ “থ” মেরে থেকে একসাথে হো হো করে হেসে ওঠলো। তাদের কেউ একজন খুব ধীরে “স্টুপিড” বললো; তা কেউ শুনলো কেউ শুনলোনা। কিন্তু কথাটা কে বললো তা বুঝা গেলোনা।
একটু দম নিয়ে এক বিচারক প্রশ্ন করলো,
-তাহলে এটা ইমো দিয়ে বানানো গল্প?
-হ্যাঁ এবং সারাবিশ্বে একমাত্র আমিই ইমোর পর ইমো দিয়ে গল্প করছি
-বাহ; খুব ভালো। তো গল্পের নাম কি দিয়েছেন?
-কেন? নাম তো গল্পটার নিচে লিখে দিয়েছি। নামটা হলো, “ভাবের মাঝে বসবাস, ঘরের কোণে গাবগাছ”
উত্তর শুনে বিচারকদের ফিট হবার জো। তারা একে অপরের মুখের দিকে তাকালো এবং দ্বিতীয়বার শব্দ করে হেসে ওঠলো।
-গ্রেট । আপনিই বিশ্বের প্রথম নির্বাক-গল্পকার। মিটমিটি হেসে এক বিচারক মন্তব্য করলো।
এতে বোকা প্রতিযোগী গল্পকার আনন্দে গদগদ হলো!
-আপনার সব গল্পই কী নির্বাক? অন্য একজন বিচারক জানতে চাইলো
-না; আমি মূলত ক্রিয়েটিভ রাইটার
-বাহ; বেশ! এখন একটা সবাক ক্রিয়েটিভ গল্প শুনান। একজন দেশি বিচারক অনুরোধ করলো
-“আকাশেতে গাভীগন, করিতেছে চেচায়ন”, প্রতিযোগী গল্প শুরু করলো
-থামেন। এক বিচারক খুব বিরক্ত হলো এবং বললো, কী সব “পদ্যমদ্য” দিয়ে গল্প শুরু করলেন?
প্রথম প্রতিযোগীর সাথে কথা শেষ হতেই দুজন পুলিশ এসে অনুষ্ঠানটিতে হাজির হলো। হ্যান্ডকাফ পরা মধ্যবয়সী একজন পুরুষকে নিয়ে তারা এসেছে। এই আসামী আসলে “গল্পকার ট্যালেন্ট-হান্ট” অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় প্রতিযোগী।
-কি হয়েছে? একজন বিচারক জানতে চাইল
-এটা আমার দ্বিতীয়বার হ্যান্ডকাফ পরা। দুবারই আমার লিখা গল্পের জন্য। প্রথমবার একটা ফেইসবুক গ্রুপে প্রকাশিত গল্প নিয়ে। সেবার জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু এবার আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
এক গ্লাস পানি চেয়ে নিয়ে এক ঢোক গিলে হ্যান্ডকাফ পরা প্রতিযোগী আবার বলতে শুরু করলো,
“সাতদিন আগে নারী নির্যাতন নিয়ে আমার নিজের লেখা একটা গল্প ফেইসবুক ওয়ালে প্রকাশ করেছিলাম। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে। মহামান্য আদালত আমার এবং সরকার পক্ষের বক্তব্য শুনে দুটো নির্দেশনা দেয়। এক) আমাকে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া; দুই) তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা। তবে এই নির্দেশনা দেয়ার আগে মহামান্য আদালতকে যখন গল্পটি পড়ে শোনানো হয় তখন আমি কারো কারো চোখের কোণ ভিজা দেখেছিলাম। তখন বিজ্ঞ আদালত মন্তব্য করেন যে, ফেইসবুক ওয়ালের গল্পটা এবং বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য প্রায় শূন্য। তাই আদালত গল্পকারকে রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দেয় যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ওটা নিছকই একটা গল্প- বাস্তবে অমন কিছু ঘটেনি”।
বক্তব্য শেষ করে হ্যান্ডকাফ পরা প্রতিযোগী বিচারকদের দিকে তাকালো। সে খেয়াল করলো, দেশি বিদেশি সব বিচারক বিস্ময় নিয়ে তার হ্যান্ডকাফের দিকে তাকিয়ে আছে।
আসলে অনুষ্ঠানটির বিচারকরা প্রথম প্রতিযোগীর প্রতি খুবই বিরক্ত ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় প্রতিযোগীর প্রতি পুরো বিপরীত। তারা ভাবে, গল্প কতোটা উন্নত এবং জীবন ঘনিষ্ট হলে দেশের আইন আদালত এভাবে রিয়াক্ট করতে পারে। তাদের কাছে গল্পকারের হ্যান্ডকাফটা খুবই দামি লাগে।
আসামী নিজে এবার হ্যান্ডকাফটার দিকে তাকালো। বিচারকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সে তার বন্দি হাত দুটোতে একটা মৃদু ঝাঁকি দিলো। এতে অনিন্দ্য সুন্দর একটা বাজনা বেজে ওঠলো; ঠিক তার মনলতার পায়ের নূপুরের মতো।
loading...
loading...
loading...
আপনার মন্তব্যে আনন্দিত হয়েছি মিঃ মুরুব্বী।
অশেষ ধন্যবাদ !
loading...
মন বিষণ্ন থাকলেও আপনার এই লেখাটি পড়লে মন ভাল হয়ে যাবে মিড দা।
loading...
আপনার মন্তব্যে খুব খুশি হয়েছি।
অশেষ ধন্যবাদ !
loading...
গল্পটা আসলে ব্যাতিক্রমি একটা গল্প। মানের মাঝে এখন অনুরনিত হচ্ছে ." এতে অনিন্দ্য সুন্দর একটা বাজনা বেজে ওঠলো; ঠিক তার মনলতার পায়ের নূপুরের মতো। "
অভিনন্দন ভাই। আজকে আর ডেজার্ট চাইবনা গল্পেই মন ভরে গেছে।
loading...
আপনার মন্তব্য মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। কমপ্লিমেন্ট পেয়ে খুব আনন্দিত হয়েছি খালিদ ভাই।
চাননি তাতে কি; শুভেচ্ছার সাথে ডেজার্ট গ্রহণ করুণ।
loading...
-গল্পটার নাম হলো, “ভাবের মাঝে বসবাস, ঘরের কোণে গাবগাছ”
* আপনার লেখায় একধরণের অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ থাকে, যা আমাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করে…
loading...
আপনার কমপ্লিমেন্টে মন ভরে গেল। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ
loading...
loading...