প্রথমেই আমাদের জেনে নিতে হবে ছড়া কী? -ছড়াদাদু বললেন- ”
হাঁস বলে – ও হাঁসিনী,
দু’জন মিলে পুকুর-বিলে
বল কতদিন ভাসিনি?
এটার মধ্যে আমরা কি পাচ্ছি? শব্দের চলার একটা বাঁধাহীন গতি। ভেতরে ভেতরে অনুপ্রাস আর চমৎকার অন্ত্যমিল। আসলে ছড়া এরকমই। ছন্দবিশারদের ভাষায় বললে ছড়ার সংগা দাঁড়ায় – ছন্দ অনুপ্রাসের মাধ্যমে সহজসরল ভাবে মনের ভাব যথার্থ শব্দবন্ধে যখন প্রকাশিত হয় তখন তাকে ছড়া বলা যায়। ছড়া আসলে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত ঝংকারময় পদ্য। আসলে ছন্দ আর অন্তমিলের মেলবন্ধনে হালকা চালে সহজ শব্দের সুচারু ব্যবহারে বিষয়কে প্রকাশ করবার জন্যে যে পদ বা পদসমষ্টির সৃষ্টি করা হয় তাকে ছড়া বলে।
দীপেন বলল- আচ্ছা ছড়াদাদু, অনুপ্রাসটা কি?
ছড়াদাদু বলেন- এবিষয়ে এক্ষুনি বলছি না। পরে সময়মত বলব। যা বলছিলাম। ছড়ার শ্রেনিবিভাগ।
আদৃতা বলে – হ্যাঁ, এটাই বলুন আগে। তাহলে একটা ধারাবাহিকতা থাকবে। তবে ছড়া কবিতা আর পদ্যের মধ্যকার পার্থক্যটা আগে বলে নিলে ভাল হয়।
-তুমি ঠিক বলেছো। ধরো তোমরা সকালবেলায় একটা পাখিকে ডাকতে দেখলে গাছের পাতার আড়ালে বসে।
দৃশ্যটার একটা বর্ণনা লিখলে-
গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে-
সকালবেলায় পাখি ডাকে।
সরাসরি ঘটনার বিবরণ দেওয়া হল ছন্দ ও অন্ত্যমিলের মাধ্যমে। এটা হল পদ্য।
অনিক বলে – আর ছড়া?
– ডাকছে পাখি ডাকছে রে-
খোকন ছবি আঁকছে রে।
ছন্দ ও অন্ত্যমিলের সমবায়ে এ পদদুটিও নির্মিত হয়েছে। কিন্তু পদ্য থেকে এর বক্তব্য আর প্রকাশ ভঙ্গী আলাদা। সেটা খেয়াল করেছ তোমরা? এখানে দৃশ্যপটকে ভিন্নভাবে উত্থাপন করে হয়েছে।
দীপেন বলে- এটাই কি ছড়া?
– না, এটাকে ছড়া না বলে শিশুতোষ কবিতা বলতে আমি পছন্দ করি। আর ছড়া?
” পাখি ডাকে সুখে আর শিশু ডাকে মাকে,
পেট ডাকে খিদে পেলে, মেঘ ডাকে কাকে?”
এটাকেই ছড়া বলা যায়। এখানে দেখ পাখির অনুষঙ্গটা একটা মজার মোড়কে বেঁধে ছন্দ আর অনুপ্রাসের সুষম আবরণে মুড়ে প্রকাশ করা হল।
আদৃতা বলে – তাহলে বলছেন ছড়ায় একটা মজা আনার চেষ্টা থাকে।
– অবশ্যই। সেটা কখন ব্যঙ্গও হতে পারে। মোদ্দা কথা ছড়াকার তার দেখা ঘটনা বা বিষয়কে একটু মজার ছলে তীর্যকভাবে উপস্থাপন করবেন।
অরণি জানতে চায় – আর কবিতা?
– যদি লেখ – এ মধুর ক্ষণে..
পাখি ডেকে যায়
বনে না কি মনে!
এটা একটা ছন্দ-অনুপ্রাসযুক্ত কবিতা। আবার যদি লেখ- “পাখির ডাকের মত তোমার আহ্বান শুনি”
এটা একটা অন্ত্যমিলহীন কবিতা।
আসলে কবি তার দর্শনকে ভাব আর বোধের রসে ভিজিয়ে রহস্যময় ভাবে উপস্থাপন করেন।
রবীন্দ্রনাথের মতে- রূপের মধ্যে অরূপের সন্ধানই কবিতা।
জীবনানন্দ দাশের মতে- উপমাই কবিতা।
মালার্মে বলেছেন- শব্দই কবিতা।
-বাহ, দারুণ। আদৃতা বলে- পদ্য, ছড়া, ছোটদের কবিতা আর কবিতার মধ্যকার পার্থক্যগুলো বেশ বোঝা গেল। (চলবে, আপনাদের সাড়া পেলে।)
loading...
loading...
অনেক শুভ কামনা রইল দাদা————
loading...
ধন্যবাদ
loading...
"ছন্দ অনুপ্রাসের মাধ্যমে সহজসরল ভাবে মনের ভাব যথার্থ শব্দবন্ধে যখন প্রকাশিত হয় তখন তাকে ছড়া বলা যায়। ছড়া আসলে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত ঝংকারময় পদ্য। আসলে ছন্দ আর অন্তমিলের মেলবন্ধনে হালকা চালে সহজ শব্দের সুচারু ব্যবহারে বিষয়কে প্রকাশ করবার জন্যে যে পদ বা পদসমষ্টির সৃষ্টি করা হয় তাকে ছড়া বলে।" ____ দারুণ উপস্থাপন মি. শংকর দেবনাথ। চলুক।
loading...
সকলের ভাল লাগলে ছড়ালেখার কলাকৌশল নিয়ে লেখাটি চালিয়ে যাব আশা করছি। ধন্যবাদ দাদা।
loading...
শিখে রাখা যেতে পারে এমন অনেক বিষয় উঠে এসেছে। বিশেষ করে এখন যারা লেখার চর্চা করছেন তাদের জন্য ভীষণ উপকার হবে। দাদা নিয়মিত করুন প্লিজ।
loading...
ইচ্ছে তো আছে একদম তরুনদের উপযোগী করে। কোনো ভারি ভাবে না যেয়ে সহজ সরল ভাবে ছড়া লেখার কলাকৌশল জানানো। ভাল থাকুন। পাশে থাকুন।
loading...
ছড়াদাদার আলোচনা ভালো হয়েছে। চালিয়ে নিন শংকর দা।
loading...
ধন্যবাদ দাদা
loading...
পাঠশালা নিয়মিত থাক।
loading...
চেষ্টা করব। ধন্যবাদ
loading...
ছড়াদাদুর পাঠশালা দারুণ লাগছে!
বেশ সাবলীল এবং সহজ ভাবেই উপস্থাপিত হচ্ছে যা তরুণ ছড়াকার দের জন্য বেশ সহায়ক হবে বলেই মনে হচ্ছে।
loading...
চেষ্টা করছি সহজসরল ভাবে লেখার। পাশে থাকুন।
loading...
* অর্থবহ পোস্ট…
শুভ কামনা নিরন্তর।
loading...
ধন্যবাদ। শুভকামনা।
loading...
loading...