গানের কাছারি
আমি যদি কোনওদিন মকরসংক্রান্তির পরিত্রাহি শীতে জয়দেব-কেঁদুলির মেলায় না গিয়ে থাকি, রাত জেগে না শুনে থাকি বাউলগান, দাঁত ঠকর-ঠকর হাওয়ায় সোয়েটারের ওপর জ্যাকেটের ততোধিক ওপরে বাংলা তুষের চাদর চাপিয়ে ঠান্ডা নিবারণের ব্যর্থ অব্যর্থ-চেষ্টার পর এক খুরি চায়ের মৌখিক স্টেরয়েডের জন্যে রাত চারটেয় মেলা-মধ্যবর্তী রাস্তায় ফলস হয়ে যাওয়া পায়ে হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাড়ের একটেরে কোনে আবিষ্কার না করে থাকি অধীর দাস বাউলের আখড়া, যদি না দেখে থাকি বেনারসী-পরা তার দীঘল শরীর মঞ্চের ওপর সখীপরিবৃত, কেননা তিনি তখন স্বয়ং শ্রীমতি, এবং যদি না শুনে থাকি সেই নিসর্গ-কন্ঠের সুর, দৈবমধুরতা, তবে আমি কী জানলাম পদাবলী কীর্তন!
যদি কাটোয়া স্টেশানে নেমে বাস ধরে উপস্থিতি দিতে না পারি শ্রীখণ্ডের মন্দিরতলে, সেখানে নতুন-রঙিন কাপড় পরা গ্রাম-গরীব মানুষের ভিড়ে চোদ্দ বছরের সাদা-থান কিশোরি গৌরীশ্রী অধূর্য্যকে চার ঘন্টা ব্যাপী নামকীর্তন না গাইতে শুনি, তবে আমি কী সমঝদার হই বাংলা সঙ্গীতের?
যদি গঙ্গা পার হয়ে থানা না গেড়ে থাকি একা অচেনা অগ্রদ্বীপের মেলায়, দোলের আগের রাতে কল্যাণী ঘোষ-পাড়ায় জমায়েতে রেলগাড়ি হতে নেমে পিলপিলিয়ে না ছুটি, যদি শান্তিপুরের ভাঙা রাসের উৎসবে অযাচিত হাজির না হই, যদি বিদ্যাপতি-জয়দেব-চণ্ডীদাসের দুচার পদ চেখে না দেখি ইহজীবনে, যদি বাংলার গ্রামেই না বাস করি… চারিদিকে বৈষ্ণবের ভিড় — যারা বৈশাখের প্রথম দিনটায় ও আরও নানা বাহানাতে সম্বৎসর অষ্টপ্রহর চালু করে দেবেই দেবে, তারপর তিন অহোরাত্রব্যাপী ব্যবস্থার শেষদিন শুধু খেপে খেপে পদাবলী কীর্তন আর সেখানে দুবেলা খিচুড়িভোগ, পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও জোর করে টেনে বসিয়ে দেয় — তাহলে আমি কী করে বিচার করব সই কুঞ্জভঙ্গ পালা, যদি থাকে আমার ‘কুঞ্জ’ শব্দের মানেই না জানা…!
loading...
loading...
বেশ লিখেছেন
loading...
জীবনের কথা গুলোন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। নন্দিত শুভেচ্ছা প্রিয় মানুষ চন্দন দা।
loading...
দারুণ গদ্য চন্দন দা। পছন্দ হলো।
loading...
অনেক ভালো লাগলো পড়তে। শুভেচ্ছা জানবেন কবি।
loading...